ফ্রান্স ও ব্রিটেনে এবোলা
৭ অক্টোবর ২০১৪বিমান চলাচল কমা মানে ৮০ শতাংশ কমা – অর্থাৎ আফ্রিকার এবোলা বা ইবোলা পীড়িত দেশগুলি থেকে ইউরোপ অভিমুখে যাত্রীবাহী বিমান চলাচল হ্রাস করা, যা এখনো পর্যন্ত করা হয়নি, যদিও ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ এবং এমিরেটস কিছু কিছু উড়াল বন্ধ রেখেছে৷ সব সত্ত্বেও এবোলা ভাইরাসে যেভাবে আফ্রিকা থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছাতে পেরেছে, ঠিক সেভাবেই ২৪শে অক্টোবরের মধ্যে এবোলা ইউরোপের মাটি ছোঁবে, বলে বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা৷
তাঁদের সমীক্ষাটি প্রকাশিত হয়েছে পিএলওএস কারেন্ট আউটব্রেকস পত্রিকায় এবং মবস-ল্যাব.অর্গ এই ঠিকানায় নিয়মিত আপডেট করা হচ্ছে৷
বেলজিয়ামেও এবোলা ভাইরাস পৌঁছানোর সম্ভাবনা ৪০ শতাংশ, স্পেন বা সুইজারল্যান্ডের ক্ষেত্রে যা ১৪ শতাংশের বেশি নয়৷ এ সবই তথ্য এবং বিশ্লেষণ ভিত্তিক পরিসংখ্যান: এবোলা ইউরোপের কোন দেশে পৌঁছাবে, সেটা কোনো ভাগ্যের খেলা নয়; যেমন এবোলা ইতিমধ্যেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছে প্রমাণ করে দিয়েছে যে, এই মহামারী শুধু আফ্রিকার সমস্যা নয়৷ তবে ইউরোপের কোন দেশের ঝুঁকি কতটা, তা নির্ভর করবে আফ্রিকার সংশ্লিষ্ট এলাকার সঙ্গে সেই দেশের ভাষাগত, সাংস্কৃতিক এবং – এক কথায় – সাবেক ঔপনিবেশিক যোগসূত্রের উপর: ফ্রান্স যে কারণে ব্রিটেনের চেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে৷ অপরদিকে ব্রিটেনের ঝুঁকি মূলত একটি কারণে: হিথরো হলো ইউরোপ অভিমুখে এবং ইউরোপ থেকে বিমানযাত্রার একটি ‘হাব' অথবা কেন্দ্রবিন্দু৷
ঝুঁকি বদলাচ্ছে প্রতিদিন
গিনি, সিয়েরা লিওনে এবং লাইবেরিয়া – তিনটি দেশেই ফরাসি ভাষাভাষী মানুষ আছেন, যেমন আছে ফ্রান্সের সঙ্গে পর্যাপ্ত বিমান যোগাযোগ৷ অন্যান্য দেশের ক্ষেত্রে এ ধরনের সংযোগ কম হতে পারে৷ আবার আফ্রিকার দেশগুলিতেও এবোলার প্রকোপ সব দেশে এক নয়৷ এছাড়া সামগ্রিক ঝুঁকিও প্রতিদিন বদলাচ্ছে – যে কারণে ইন্টারনেটে নিয়মিত আপডেটের প্রয়োজন পড়েছে৷ সর্বাধুনিক ভবিষ্যদ্বাণী পয়লা অক্টোবর তারিখে সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে৷ এ-ও বলা দরকার যে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংগঠন বা ডাব্লিউএইচও কিন্তু এবোলা পীড়িত দেশগুলিতে যাত্রা সীমিত করেনি, বরং বিমান পরিবহণ সংস্থাগুলিকে সেই সব দেশে উড়াল অব্যাহত রাখার উৎসাহ দিয়েছে৷
ফ্রান্স ও ব্রিটেন, উভয় দেশই এ যাবৎ একজন করে নাগরিককে এবোলা রোগে আক্রান্ত হবার পর বিমানযোগে স্বদেশে নিয়ে এসেছে এবং চিকিৎসা করে সারিয়ে তুলেছে৷ সমীক্ষায় এই ধরনের ইচ্ছাকৃত স্থানান্তরণের কথা বলা হয়নি৷ একদিকে যেমন এবোলা রোগ শেষ পর্যায়েই সবচেয়ে সংক্রামক, তেমন আবার এবোলা রোগের লক্ষণ ধরা পড়তে ২১ দিন অবধি সময় লেগে যেতে পারে৷ অর্থাৎ সংশ্লিষ্ট মানুষেরা জানতেও পারবেন না যে, তাঁরা এবোলা রোগে আক্রান্ত – এবং সেই অনুযায়ী ইউরোপ জুড়ে যথেচ্ছ ভ্রমণ করতে পারবেন৷
তবে ইউরোপ মহাদেশে এবোলার মহামারির আকার ধারণ করার সম্ভাবনা কম৷ সমৃদ্ধ ইউরোপে স্বাস্থ্যজনিত ব্যবস্থাপনা অনেক বেশি উন্নত এবং ঘিঞ্জি জনবসতি প্রায় নেই বললেই চলে৷ সময়মতো পদক্ষেপ নিলে যে এবোলার বিস্তার রোধ করা সম্ভব, সেটা নাইজেরিয়াই প্রমাণ করেছে: সেখানে এবোলাকে বিশটি ঘটনা ও দশজন রোগীর মৃত্যুতে সীমিত রাখা সম্ভব হয়েছে – আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে নাইজেরিয়াকে নাকি এবোলা-মুক্ত বলেও ঘোষণা করা হতে পারে৷
এসি/ডিজি (রয়টার্স)