অনলাইন প্রতারণা এড়াতে সুরক্ষার সন্ধান
৫ জানুয়ারি ২০১৫অনলাইন প্রতারকদের কৌশল দিনকে দিন আরও সূক্ষ্ম হয়ে উঠছে৷ আরও বেশি মানুষ তাদের হামলার শিকার হচ্ছেন৷ ইন্টারনেট-ভিত্তিক অপরাধীরা সারা বিশ্বের কোটি কোটি কম্পিউটার অপব্যবহার করে সেগুলি ‘বট নেটওয়ার্ক'-এ যুক্ত করে৷ সেই নেটওয়ার্কেও কয়েক হাজার, বা কয়েক লক্ষ কম্পিউটার রয়েছে৷ সেগুলি থেকেই সাধারণ মানুষ বা কোম্পানির কম্পিউটারে রিমোট কন্ট্রোলে হামলা চালানো হয়৷
ফ্রাউনহোফার ইনস্টিটিউটের ইয়র্ন কোলহামার বললেন, ‘‘আমি নির্দিষ্ট সার্ভারের উপর বড় আকারের হামলা চালাতে পারি, যেমন কোনো কোম্পানির সার্ভারে৷ তখন সেই সার্ভার একই সঙ্গে এত ‘কোয়্যারিস' পায়, যে তা থমকে যায়৷ কোম্পানির জন্য সেটা একটা বড় সমস্যা৷ আরেকটি উপায় হলো অসংখ্য স্প্যাম মেল পাঠিয়ে টাকা চাওয়া বা কোনো নম্বরে ফোন করতে বলা৷ এভাবে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে টাকা আদায় করা যায়৷''
অচেনা সফটওয়্যার ডাউনলোড করলে বা সন্দেহজনক ই-মেল অ্যাটাচমেন্ট খুললে যে কেউ নিজের অজান্তেই বে-আইনি বট-নেটওয়ার্কের অংশ হয়ে উঠতে পারে৷ ফ্রাউনহোফার ইনস্টিটিউটের গবেষকরা এখন এমন এক সফটওয়্যার তৈরি করেছেন, যার সাহায্যে জটিল বট-নেটওয়ার্কের কার্যকলাপ দ্রুত ও সহজে দেখা যায় এবং অপরাধীদের নিষ্ক্রিয় করা যায়৷
ছবি বিশ্লেষণ করে পারস্পরিক সম্পর্ক বোঝার সহজাত ক্ষমতা কাজে লাগায় সেটি৷ ইয়র্ন কোলহামার বলেন, ‘‘স্প্যাম মেল ঘেঁটে বিশেষজ্ঞরা যে সব তথ্য বার করেন, তার মধ্যে রয়েছে টেলিফোন নম্বর, ই-মেল ঠিকানা ইত্যাদি৷ থাকে টাকা পাঠানোর জন্য ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বরও৷ সেগুলি কাজে লাগিয়ে বিশেষজ্ঞ কোম্পানি ও কর্তৃপক্ষ তার উৎস খুঁজতে পারে৷''
জেমস টোয়েলমায়ার ফ্রাউনহোফার ইনস্টিটিউটে গণিতজ্ঞ হিসেবে কর্মরত৷ তিনি ইন্টারনেট থেকে বিপুল তথ্য নিয়ে কাজ করেন৷ তাতে এমন চমকপ্রদ তথ্য থাকে, যা সঙ্গে সঙ্গে চোখে পড়ে না৷ তিনি ও তাঁর সহকর্মীদের তৈরি সফটওয়্যার সে সব দেখিয়ে দেয়৷ তখন স্প্যাম অভিযানের রূপরেখা স্পষ্ট হয়ে যায়৷ টেলিফোন নম্বর বা ই-মেল ঠিকানা সহজেই চোখে পড়ে৷ টোয়েলমায়ার বলেন, ‘‘স্প্যাম অভিযান থেকে পাওয়া তথ্য কাজে লাগিয়ে আমরা স্প্যামার-দের কৌশল বোঝার ক্ষমতা বাড়াতে পারি৷ এর মাধ্যমে আমরা নাগরিকদের আরও ভালো সুরক্ষা দিতে পারি, কর্তৃপক্ষকে তথ্য দিয়ে অপরাধী ধরার কাজে সাহায্য করতে পারি৷''
প্রায়ই দেখা যায় ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা নকল অ্যান্টি-ভাইরাস সফটওয়্যার দিয়ে পরস্পরকে ‘ইনফেক্ট' করছে৷ এগুলি সন্দেহজনক ওয়েবসাইট থেকে ডাউনলোড করা হয়৷ ফ্রাউনহোফার ইনস্টিটিউটের গবেষকরা প্রতারণার এমন উদ্যোগও দৃশ্যমান করে তোলেন৷ ফলে দেখা যায়, প্রয়োগের কয়েকদিন আগে অপরাধীরা সেটি পরীক্ষা করে৷ কয়েক ডজন সাইটেই তারা পরীক্ষা চালায়৷ তারপর মূল অভিযানের সময় কয়েক হাজার ওয়েবসাইটের মাধ্যমে বে-আইনি অ্যান্টি ভাইরাস সফটওয়্যার ছড়িয়ে দেওয়া হয়৷ টোয়েলমায়ার বলেন, ‘‘আমরা যদি এমন অভিযান চিহ্নিত করে তার প্রস্তুতির কাজও দেখতে শিখি, সে ক্ষেত্রে হয়ত ভবিষ্যতে এমন ঘটনা প্রতিরোধ করতে পারবো৷''
এর পরেও প্রত্যেক ইন্টারনেট ব্যবহারকারীকে নিজস্ব সুরক্ষার বন্দোবস্ত করতে হবে৷ এর জন্য আপ-টু-ডেট অ্যান্টি-ভাইরাস সফটওয়্যার ও অপারেটিং সিস্টেমের সর্বশেষ আপডেট অনিবার্য৷ অচেনা ই-মেল অ্যাটাচমেন্ট ও সন্দেহজনক ওয়েবসাইট সম্পর্কে সাবধান থাকতে হবে৷ ফ্রাউনহোফার ইনস্টিটিউটের ভিশুয়ালাইজেশন সফটওয়্যার শুধু সার্বিকভাবে ইন্টারনেট সার্ফিং নিরাপদ করে তুলতে পারে৷ তারা সাইবার ক্রিমিনালদের ধরতে নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ ও পুলিশকে সাহায্য করতে পারে৷