দুই কর্মকর্তা গ্রেপ্তার
১৭ মে ২০১৪গত ২৭শে এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের ওয়ার্ড কাউন্সিলর এবং প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম ও আইনজীবী চন্দন সরকারসহ সাতজনকে অপহরণ করা হয়৷ ৩০শে এপ্রিল তাঁদের লাশ পাওয়া যায় শীতলক্ষ্যা নদীতে৷ এরপরই নিহত নজরুলের শ্বশুর শহিদুল ইসলাম অভিযোগ করেন র্যাব ১১-এর অধিনায়ক কর্ণেল তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, মেজর আরিফ হোসেন এবং লে. কমান্ডার মাসুদ রানা ৬ কোটি টাকা ঘুস নিয়ে সাতজনকে অপহরণ এবং হত্যা করেছে৷ এরপর র্যাব থেকে তাঁদের প্রত্যাহার করে সামরিক বাহিনী থেকে অবসর দেয়া হয়৷
এরপর গত ১১ই মে ঐ তিনজন র্যাব কর্মকর্তাকে অনতিবিলম্বে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট৷ তাঁদের বিরুদ্ধে যদি কোনো মামলা না থাকে তাহলে তাঁদের ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার করতে বলা হয়৷ কিন্তু পুলিশ তাঁদের গ্রেপ্তার না করে গ্রেপ্তারের অনুমতির জন্য প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয়৷ নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার মহিদ উদ্দিন আহমেদ ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘সেনা সদর দপ্তর দুই সেনা কর্মকর্তা কর্ণেল তারেক সাঈদ মোহাম্মদ ও মেজর আরিফ হোসেনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে বলেছে৷ কিন্তু নৌ-বাহিনীর কর্মকর্তা লে. কমান্ডার মাসুদ রানার ব্যাপারে নৌ সদর দপ্তর এখনো কিছু জানায়নি৷''
বাংলাদেশে ডয়চে ভেলের কন্টেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম জানিয়েছে, শনিবার ভোর রাতে ‘‘গ্রেপ্তারকৃত দুজন হলেন, র্যাব-১১ এর সাবেক অধিনায়ক লে.কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মদ ও মেজর আরিফ হোসেন। তারেক সাঈদ মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার মেয়ে জামাই৷ তবে চাকুরিচ্যুত নৌবাহিনী কর্মকর্তা লে. কমান্ডার এমএম রানাকে গ্রেপ্তার করা যাযনি৷’’
এদিকে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল শুক্রবার বলেন, ‘‘নারায়নগঞ্জের ঘটনায় আমরা বসে নেই৷ একটু ধীর গতিতে হলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার ন্যায়সঙ্গতভাবে এগিয়ে যাচ্ছে৷''
তিনি বলেন, ‘‘এই ঘটনার সঙ্গে যাঁরাই জড়িত তাঁদের বিচার হবেই৷ তদন্তে যাঁদের নাম আসবে তাঁদের শাস্তি দিতে সরকার কুণ্ঠাবোধ করবে না৷''
অন্যদিকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করেছেন, ‘‘হাইকোর্টের নির্দেশের পরে অভিযুক্ত র্যাব কর্মকর্তাদের গ্রেপ্তারে সরকার টালবাহানা করছে। কারণ এর মধ্যে একজন সরকারের মন্ত্রীর জামাই৷''
ব়্যাব কর্মকর্তারা গ্রেপ্তার হওয়ার আগে শুক্রবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আদালত অনতিবিলম্বে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেয়ার পরও ছয় দিন কেটে গেছে এবং এখনও র্যাবের ঐ তিন কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করা হয়নি, যা অস্বাভাবিক৷ দেশের সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশ বাস্তবায়নে নানা কৌশল অবলম্বন করে দেরি করার ফল ভালো হবে না৷ এতে আইনের শাসন নিয়ে প্রশ্ন উঠবে, জনগণের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতা বাড়বে৷''
তিনি বলেন, ‘‘হাইকোর্ট নির্দেশ দেয়ার পর তিন র্যাব কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তারে আর কারুর অনুমতির প্রয়োজন নেই৷ যাঁরা এটা করছেন তাঁরা আইনের লঙ্ঘন করছেন৷'' – এমনই মন্তব্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের এই শিক্ষকের৷