আর্মস্ট্রং-এর স্বীকারোক্তি
১৮ জানুয়ারি ২০১৩তিনি মুখ খুললেন৷ খোলার আগেই যে রকম জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়ে গিয়েছিল, তেমনটা সচরাচর দেখা যায় না৷ উইনফ্রের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে আর্মস্ট্রং ড্রাগ নেয়ার অভিযোগ স্বীকার করেছেন – এ খবর আগেই সংবাদ মাধ্যমে এসেছিল৷ অনুষ্ঠানটি ধারণ করার সময় উপস্থিত এক ব্যক্তি প্রথমে সংবাদ মাধ্যমের সামনে মুখ খোলেন৷ তারপর খোদ ওপ্রাও তাঁর প্রতিক্রিয়া জানান৷ অবশেষে দর্শকরাও সেই সাক্ষাৎকার দেখার সুযোগ পেলেন বৃহস্পতিবার৷
সাতবার ‘ত্যুর দ্য ফ্রঁস' জেতা ল্যান্স আর্মস্ট্রং ড্রাগ নেয়ার অভিযোগ ওঠার পর থেকে সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করে আসছিলেন৷ অথচ নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে তিনি আদালতে যাননি৷ ফলে সব শিরোপা কেড়ে নেয়া হয় তাঁর কাছ থেকে৷ সাইক্লিংয়ের মহানায়ক থেকে হঠাৎই হয়ে যান খলনায়ক৷ এত কিছুর পর যুক্তরাষ্ট্রের এই সাইক্লিস্ট স্পষ্ট ভাষায় জানালেন, পারফরম্যান্স ভালো করার ড্রাগ নিয়েই তিনি সাত-সাতবার সাইক্লিংয়ের সর্বোচ্চা আসর ‘ত্যুর দ্য ফ্রঁস' জেতার রেকর্ড গড়েছেন৷ স্বীকারোক্তি এলো একেবারে স্পষ্ট ভাষায়, কোনো রাখঢাক ছাড়া৷ তবে তাঁর ভাবলেশহীন মুখে আবেগের কোনো ছাপ দেখা যায় নি৷ ওপ্রা উইনফ্রে তাঁকে ভেবে উত্তর দেওয়ার কোনো সুযোগ দেন নি, পর পর প্রশ্ন করে গেছেন তিনি৷
নিজের অপকর্মের বিষয়ে এতকাল গোটা বিশ্বকে অন্ধকারে রেখেছিলেন কেন? এ প্রশ্নে আর্মস্ট্রং বলেন, ‘‘সত্যিই এর কোনো জবাব নেই৷ অনেকের কাছেই এই স্বীকারোক্তি নিশ্চয়ই খুব দেরিতে এলো৷ সব দোষ আমার৷'' এত বড় মিথ্যা বার বার বলে ঠিক করেন নি – অনুশোচনার সুরে এ কথাও বলেছেন আর্মস্ট্রং৷
যে মানুষটির গোটা বিশ্বে অসংখ্য অনুরাগী, ক্যান্সারকে জয় করার কারণে সুপারস্টারদেরও অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন যিনি, তাঁর এমন পতন যে কত বেদনাদায়ক এখন বুঝতে পারছেন সাইক্লিং জগতের এই কিংবদন্তি৷ তবে এ-ও স্বীকার করেছেন যে সৎ পথে থেকে এত বড় সাফল্য পাওয়া কখনো সম্ভব হতো না৷ তাঁর মতে, সাইক্লিং জগতে মাদক ব্যবহারের প্রবণতা তিনি আসার আগেও ছিল৷
তবে প্রতারণা করে সবচেয়ে বড় তারকা হয়েছিলেন বলে শাস্তিও সবার চেয়ে বেশিই পেয়েছেন আর্মস্ট্রং৷ অতীতের সব শিরোপা খুইয়েছেন৷ সাইক্লিং থেকে হয়েছেন আজীবন নিষিদ্ধ৷ বিশ্বের সব নামিদামি স্পনসরই ছেড়ে গেছে তাঁকে৷ এদিকে মার্কিন মাদক বিরোধী কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, শুধু টেলিভিশন অনুষ্ঠানে স্বীকারোক্তি যথেষ্ট নয়, তাদের সামনে শপথ নিয়ে সব কিছু খুলে বললে তবেই আর্মস্ট্রং-এর আন্তরিকতার পরিচয় পাওয়া যাবে৷ আন্তর্জাতিক ডোপিং বিরোধী সংস্থার প্রধান জন ফাহেও শুক্রবার আর্মস্ট্রং-এর সমালোচনা করে বলেন, এটা আসলে নিয়ন্ত্রিত জনসংযোগের প্রচেষ্টা৷
ডিজি/এসিবি (রয়টার্স, এএফপি)