রোগ ব্যাধি
১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১২ম্যালেরিয়া, যক্ষ্মা, এইডস বিশেষ করে এই তিন রোগে প্রতি বছর সারা বিশ্বে বহু মানুষ মারা যায়৷ এই সব অসুখের উপর গবেষণা অনেক দূর এগিয়ে গেলেও উন্নয়নশীল দেশের মানুষদের কাছে তার সুফল পৌঁছাতে পারেনি এখনও৷ গত বছরগুলিতে অনেক চেষ্টা সত্ত্বেও ক্রমেই বিস্তৃত হচ্ছে এইসব রোগ ব্যাধি৷ বিশেষ করে যক্ষ্মা রোগের জীবাণুরা ওষুধ প্রতিরোধী হয়ে পড়ছে৷ এর কারণ ভুল ও ঘন ঘন ওষুধের প্রয়োগ৷ প্রতি বছর শুধুমাত্র যক্ষ্মারোগেই মৃত্যু হয় ১৫ লক্ষ মানুষের৷
জীবাণুরা রোগ প্রতিরোধী হয়ে পড়ছে
ডক্টর উইদাউট বর্ডার্স' এর মুখপাত্র অলিভার মল্ডেনহাউয়ার এক্ষেত্রে নতুন ওষুধ তৈরির ব্যাপারে জোর দেন, তাঁর ভাষায়, ‘‘যক্ষ্মা রোগের জীবাণুদের প্রতিরোধী ক্ষমতাটা ক্রমশই বৃদ্ধি পাচ্ছে৷ নতুন ওষুধ তৈরি না হলে এই অবস্থার কোনো পরিবর্তন হবে না৷ লাভজনক নয় বলে এই খাতে বিনিয়োগ করতেও খুব একটা আগ্রহী হচ্ছে না ওষুধ কোম্পানিগুলি৷''
জার্মানির শিক্ষা ও গবেষণা মন্ত্রণালয় এ অবস্থার উন্নতি করতে এক কর্মসূচি হাতে নিয়েছে৷ এই প্রসঙ্গে রাষ্ট্রসচিব হেলগে ব্রাউন বলেন, ‘‘আমাদের গবেষণা মন্ত্রণালয়ের বেশ কিছু বিশেষজ্ঞ রয়েছেন৷ এ জন্য আমরা এ ক্ষেত্রে দায়িত্ব নেয়ার চেষ্টা করছি৷ আমরা উন্নয়নশীল দেশের গবেষণার ফলাফলের সঙ্গে জার্মানিতে লব্ধ গবেষণার সমন্বয় ও নেটওয়ার্ক তৈরি করতে পারি৷''
জার্মানির এই প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানায় ডক্টর্স উইদ আউট বর্ডার্স৷ তবে এই সংস্থার মতে উদ্যোগটা যথেষ্ট নয়৷ মল্ডেনহাউয়ার বলেন, ‘‘জার্মানির গবেষণার ফলাফল যাতে দরিদ্র দেশগুলির মানুষের মঙ্গলে লাগতে পারে, তার একটা নিশ্চয়তা অবশ্যই থাকতে হবে৷''
সহযোগিতামূলক কর্মসূচি
এই লক্ষ্য সামনে রেখেই প্রোডাক্ট ডেভেলপমেন্ট পার্টনারশিপ বা পিডিপি নামে একটি সংগঠন গড়ে তোলা হয়েছে৷ এটি উন্নত মানের ওষুধ তৈরির জন্য ওষুধের কারখানাগুলির সঙ্গে সহযোগিতামূলক কাজ করছে, যাতে দ্রুত ও সুলভ মূল্যে তা রোগীদের কাছে পৌঁছানো সম্ভব হয়৷ হেলগে ব্রাউন বলেন, ‘‘পিডিপি সংগঠনটিতে সম্পৃক্ত রয়েছেন ভাল ভাল বিজ্ঞানী, আর্থিক সহায়তাকারী৷ রয়েছেন ক্লিনিক্যাল পরীক্ষা নিরীক্ষার সমন্বয়কারী৷ এই সব কিছু একত্রিত হওয়ায় তুলনামূলকভাবে কম অর্থে গবেষণা থেকে শুরু করে চিকিত্সা সেবা সহজ হতে পারে৷''
নিদ্রারোগের চিকিত্সা
গবেষণা মন্ত্রনালয়ের আশা, পিডপি'র মাধ্যমে চিকিত্সার সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করা যাবে ও উপেক্ষিত রোগ ব্যাধির গবেষণাকে উত্সাহিত করা হবে৷ যেমন স্লিপিং সিকনেস বা নিদ্রা রোগের চিকিত্সায় আশার আলো দেখা যাচ্ছে৷ নিদ্রা রোগটি গ্রীষ্মমণ্ডলীয় এলাকায় এক ধরনের মাছির মাধ্যমে ছড়ায়৷ মাছি থেকে জীবাণু মানুষের শরীরে ঢুকে স্নায়ুতন্ত্রকে আক্রমণ করে, চলে যেতে পারে মস্তিষ্কে৷ অনেকটা ম্যালেরিয়ার মতো লক্ষণ হলেও রোগটি শনাক্ত করা বেশ কঠিন৷ এতে মানসিক বৈকল্যও ঘটতে পারে৷ বিশেষ করে মধ্য আফ্রিকার প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলিতে এই অসুখ বিস্তৃত৷ কঙ্গো, চাড ও সুদানের অনেক মানুষ ভুগছেন এই অসুখে৷ এই সব দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে চলছে রাজনৈতিক নিরাপত্তাহীনতা, তাই চিকিত্সার সুযোগ সুবিধা থেকে অনেকটাই বঞ্চিত সেখানকার মানুষরা৷ আক্রান্তরা আচ্ছন্নের মত থাকেন বলে নিজেরা চিকিত্সা করাতে পারেন না, হয়ে পড়েন অন্যের ওপর নির্ভরশীল৷ যথা সময়ে ধরা না পড়লে ও চিকিত্সা করাতে না পারলে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন রোগীরা৷ কয়েক বছর আগেও স্লিপিং সিকনেসের একমাত্র ওষুধ ছিল আর্সেনিক থেকে তৈরি উপাদান৷ এক ধরনের বিষাক্ত পদার্থ, যার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া মারাত্মক৷ ড্রাগস ফর নেগলেক্টেড ডিজিজেস ইনিশিয়েটিভ নামের প্রতিষ্ঠানের পরিচালক এবং আফ্রিকার রোগ ব্যাধি সম্পর্কে অভিজ্ঞ ডা ব্যার্নার্ড পেকুল এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘আমরা দুই ধরনের ওষুধের সংমিশ্রণে এই অসুখের চিকিত্সা করছি৷ এ ক্ষেত্রে সাফল্যও লক্ষ্য করেছি৷ ব্যবহার পদ্ধতি কিছুটা জটিল হলেও এর একটা সুবিধা হল যে, এটি বিষাক্ত নয়৷''
প্রথম দিকে ক্লিনিক্যাল পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হয়নি বলে এই ওষুধের উত্পাদন বন্ধ করে দিতে হয়েছিল৷ পরে আফ্রিকান চিকিত্সা কেন্দ্রে পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে এই ওষুধের কার্যকারিতা প্রমাণিত হয়৷ আর তাই বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থা ডাব্লিউএইচ-ওর দৃষ্টি আকৃষ্ট হয় এই দিকে৷ ছাড়পত্র দেয়া হয় এই ওষুধকে এবং রোগীদের মধ্যে বিনামূল্যে বিতরণের ব্যবস্থাও করা হয়৷ এটা ডিনডির এক বিরাট সাফল্য৷ তবে এই সংস্থাটির লক্ষ্য আরো উচ্চাভিলাষী৷ আর তা হল, আরো ভাল ওষুধ তৈরি করে নিদ্রারোগকে সম্পূর্ণ দূর করা৷
প্রতিবেদন: রায়হানা বেগম
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক