অব্যবস্থাপনায় ইটালির স্বাস্থ্যকর্মীদের দুর্দশা
২৩ এপ্রিল ২০২০ইটালির সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের লম্বার্ডির স্বাস্থ্যকর্মীদের অভিযোগ, ভাইরাস যখন পুরোদমে ছড়াচ্ছিল তখন স্থানীয় সরকার তাদের যথেষ্ট সুরক্ষা যন্ত্র দিতে পারেনি। বিশেষ করে সেখানকার চিকিৎসকদের অভিযোগ, সরকার ভাইরাস মোকাবেলায় চিকিৎসকদের ভূমিকার গুরুত্ব অনুধাবনই করতে পারেনি। বরং তাদের সুরক্ষার প্রয়োজন নিয়ে কিছুটা হেলাফেলা করেছে। যথাযথ সুরক্ষা না দিয়েই তাদের কাজে যেতে বাধ্য করেছে।
লম্বার্ডির ‘জেনারেল প্র্যাকটিশনারস' ইউনিয়নের প্রধান পাওলা পেদ্রিনি বলেন, "আমাদের প্রদেশে সুরক্ষা যন্ত্র অনেক পরে এসেছে। ততদিনে এখানে ভাইরাস সংক্রমণ আকাশ ছুঁয়েছিল।”
ইটালিতে ভাইরাস সংক্রমণের শুরু থেকেই দেশজুড়ে স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য পিপিই-র সংকট দেখা দেয়। অথচ চীনে নতুন এ মহামারী বিস্তারের খবর প্রকাশের পরপরই সবার আগে পিপিইর ব্যবস্থা করা উচিত ছিল।
গত সপ্তাহে পেদ্রিনি তার সহকর্মীদের পক্ষ থেকে আঞ্চলিক স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং জাতীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে এ বিষয়ে অভিযোগ জানিয়ে চিঠি লিখেছেন। চিঠিতে তিনি আরো বলেন, যথেষ্ট পরীক্ষার ব্যবস্থা না থাকায় অনেক স্বাস্থ্যকর্মী সংক্রমিত হওয়ার পরও কাজ চালিয়ে গেছেন।
অসুস্থতাও থামাতে পারেনি
পেদ্রিনি বলেন, তার বাড়ি বের্গামো প্রদেশে। সেখানে স্থানীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে মৃদু উপসর্গ আছে এমন চিকিৎসকদেরও দায়িত্ব পালন চালিয়ে যেতে উৎসাহিত করা হয়।
"আমাদের বিশৃঙ্খল অবস্থার মধ্যে ঠেলে দেওয়া হয়েছিল। কিভাবে আমরা কাজ করবো বা রোগীদের সেবা দেবো সে বিষয়ে কোনো নিয়ম বা নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। অথচ আমরা সবাই কিন্তু জানতাম চীনে কী হচ্ছে। অবশ্যই তারা বিষয়টিকে শুরুতে গুরুত্বহীন মনে করেছে।”
চিকিৎসকরাই মাস্ক-পিপিই কিনেছেন
চরম সংকট দেখা দিলে বের্গামো স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং লম্বার্ডির আঞ্চলিক সরকার নিজেরাই স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য হাজার হাজার ফেস মাস্ক কেনার ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু সেগুলোও যথেষ্ট ছিল না। এক পর্যায়ে চিকিৎসকরা নিজেরাই নিজেদের সুরক্ষা যন্ত্র কিনে রোগীদের সেবা দেওয়া শুরু করেন।
চরম অব্যবস্থাপনা
লম্বার্ডি মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন থেকে আঞ্চলিক স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে আরেকটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। সেখানে বলা হয়, বিশেষ করে যে এলাকাগুলো ভাইরাস সংক্রমণের ‘ক্লাস্টার' হিসেবে ঘোষিত হয়েছিল সেখানে লকডাউন যথাযথ ভাবে কার্যকর করা হয়নি। যার ফলে সব জায়গায় সংক্রমণ ছড়িয়ে যায়।
পর্যাপ্ত পরীক্ষা করতে না পারাও সংক্রমণ মারাত্মকভাবে ছড়িয়ে পড়ার জন্য দায়ী। চিঠিতে চিকিৎসকরা এ অব্যবস্থাপনার কথাটিও তুলে ধরেন। বলেন, আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা আর শনাক্তের মধ্যে বিশাল ফাঁক রয়েছে। অনেকের শরীরেই উপসর্গ থাকার পরও তারা পরীক্ষা করাতে পারেননি। অনেক চিকিৎসকের বেলাতেও একই ঘটনা ঘটেছে।
লম্বার্ডিতে এখন পর্যন্ত মোট শনাক্ত ৬৪০০০-এর , যা ওই অঞ্চলের মোট জনসংখ্যার একতৃতীয়াংশ।
সেসিলিয়া বুতিনি/এসএনএল