অভিবাসীদের চাকরির সন্ধান দিতে এগিয়ে এলো জার্মানির কর্মসংস্থান দপ্তর
২৩ জুন ২০০৯জার্মানির বিভিন্ন স্কুলে অভিবাসী ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে৷ বিভিন্ন শহরে, স্কুলের যে কোন ক্লাসে অর্ধেকরও বেশি ছাত্র-ছাত্রী জার্মান নয়, অভিবাসী গোষ্ঠীর৷ আর বর্তমানে জার্মানির কর্ম বাজারে এই সমস্ত অভিবাসী তরুণ-তরুণীদের জায়গা করে দেওয়াই হয়ে উঠেছে সবচেয়ে বড় সমস্যা৷
তাই এবার, এ সমস্ত অভিবাসীদের কর্মসংস্থানের যোগান করে দিতে এগিয়ে এসেছে জার্মানির উত্তরে অবস্থিত হামবুর্গ শহরের কর্মসংস্থান দপ্তর৷ শহরের একটি মসজিদে সম্প্রতি তারা চালু করেছে একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র৷
ছবিটা অনেকটা এরকম৷ শুক্রবার দুপুর৷ জুম্মার নামাজের দিন৷কিন্তু, আজ হামবুর্গের মসজিদ শুধু এক প্রার্থনালয় নয়, পরিণত হয়েছে একটি শিক্ষা কেন্দ্রে৷ হামবুর্গ শহরের কর্মসংস্থান দপ্তর থেকে এসেছেন রল্ফ স্টাইল৷ তিনি বললেন : জন্ম লগ্ন থেকে প্রত্যেক মানুষই সমানভাবে স্বাধীন এবং তাদের প্রত্যেকেরই জার্মান সমাজে একাত্ম হওয়ার সমান সুযোগ আছে৷ অন্ততপক্ষে হামবুর্গে৷ তবে এই সমানাধিকার আদায়ের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো শিক্ষা এবং তারপর কর্মজীবনের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করা৷
কিন্তু বহুক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে যে, জার্মান পাসপোর্ট ছাড়া কর্মসংস্থান, এমনকি প্রশিক্ষণ নেওয়ার ক্ষেত্রেও জায়গা পাওয়া অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়ছে৷ আর এ জন্যই বেকারত্বের সংখ্যা ক্রমশ বেড়ে চলেছে জার্মানিতে৷ কিন্তু এভাবে তো চলতে পারে না, বললেন রল্ফ স্টাইল৷ তাঁর কথায় : যারা প্রথম প্রজন্মের অভিবাসী - তারা অবশ্য সাধারণ শ্রমিকের কাজ করে বেশ ভালো ভাবেই জীবনটা কাটিয়ে দিয়েছে৷ আর তারাই আজকের অভিভাবক৷ তাদেরই তো আজকের তরুণ প্রজন্মকে বলা উচিৎ - না, এভাবে চলতে পারে না৷ তোমাদের কিছু একটা করতে হবে৷ একটা কোন প্রশিক্ষণ যে নিতেই হবে৷
কারণ, আজকের যুগে মামা-কাকার দোকানে কাজ করে আর কাজ শেখা যায় না৷ শুধু হামবুর্গ কেন - অন্যান্য শহরেও আজ শুধুমাত্র বিশেষজ্ঞ এবং প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত কর্মচারীর চাহিদা রয়ে গেছে৷ সে কারণে নিজের অফিস ঘরের জানলা থেকে মসজিদের চূড়ো দেখতে দেখতে, সেখানেই শিক্ষা দেওয়ার এমন একটা অভিনব পন্থা মাথায় আসে রল্ফের৷ আর বুদ্ধিটা মাথায় আসার সঙ্গে সঙ্গে রল্ফ সোজা চলে যান মসজিদে৷
সেখানে তাঁর আলাপ হয় রামাজান উচার-এর সঙ্গে৷ মসজিদের ইমাম তিনি৷ বর্তমানে হামবুর্গের কর্মসংস্থান দপ্তরের সঙ্গে একযোগে কাজ করছেন৷ কেন ? তিনি বলেন : এখানে এরকম বহু মানুষ আছেন - যাঁরা বেকার৷ যারা কোন একটা সময় পড়াশোনা বন্ধ করে দিয়েছেন৷ এঁদের অনেকেই আমাদের কাছে আসেন৷ অনেকেই আমাদের তাঁদের পরামর্শদাতা মনে করে থাকেন৷ তাই এ সমস্যা সম্পর্কে আমরা অবগত৷
আর সে জন্য হামবুর্গ শহরের এই মসজিদটির ইমাম কর্মসংস্থান দপ্তরের জন্য শুধু যে মসজিদ প্রাঙ্গনই খুলে দিয়েছেন - তা নয়৷ সাধারণ মানুষকে একথা বোঝানোর চেষ্টা করছেন যে, শারীরিক কোন অসুবিধা না থাকা সত্ত্বেও সরকারের কাছ থেকে বেকার ভাতা নেওয়া বা নেওয়ার চেষ্টা করা - কতো বড় ভুল, কতো বড় পাপ৷ তাই শুক্রবার জুম্মার নামাজের শেষে, মসজিদটি ছোট-বড় সকলের জন্য একটি মিলন স্থলে পরিণত হয়৷ চায়ের কাপ হাতে নিয়ে তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন হামবুর্গ শহরের কর্মসংস্থান দপ্তরের প্রতিনিধিরাও৷
আজ এই মসজিদ প্রাঙ্গনে চায়ের কাপ নিয়ে দাঁড়িয়ে হাসান আলাটাস এবং আবদুল্লাহ সানাল-ও৷ এঁরা দুজনেই বর্তমানে ছোট-খাট কাজ করছেন৷ কিন্তু চাইছেন আবারো পড়াশোনা করতে৷ কোন একটি বিষয়ে উচ্চশিক্ষা লাভ করতে৷ আর ঠিক এরকম মানুষদের নিয়েই কাজ করছে কর্মসংস্থান দপ্তরটি৷ জার্মানির উত্তরাঞ্চলের ইসলামী সংগঠনের প্রধান আহমেত ইয়াসিচি জানান : তরুণ প্রজন্ম এবং তাদের অভিবাবকরা - আমার মতে দু পক্ষের জন্যই এটা একটি ইতিবাচক দিক হয়ে ওঠে, যখন তারা এটা দেখে যে কাজের সন্ধান এবং প্রশিক্ষণের গুরুত্বটাও ধর্মীয় স্তর থেকে উঠে আসছে৷ যখন তারা বোঝে যে সমাজে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করাটাও একটা ধর্মীয় দায়িত্ব৷
তবে এসব অভিবাসী তরুণ-তরুণীর ওপর এদেশের সংস্কৃতি, ধর্ম, ইতিহাস কোন ধরণের প্রভাব রাখছে ? বিশেষ করে স্কুলে ইতিহাসের পাঠ্যপুস্তকে সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় বৈচিত্র্যের কোন প্রভাব আদৌ পড়েছে কিনা - সে বিষয়টিকেও একেবারে ভুলে গেলে চলবে না৷
রল্ফ স্টাইলের মতে, জার্মানিতে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত কর্মী প্রয়োজন৷ প্রয়োজন দক্ষ শ্রমিকের, বিশেষজ্ঞের৷ আর সেই ফাঁকটাই পুরণ করতে পারে শিক্ষিত অভিবাসীরা৷ তাই চা খাওয়ার অবসরে অভিবাসী, বিশেষ করে তুর্কী বংশোদ্ভূত অভিবাসীদের সামনে ধর্মীও এবং সরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের যৌথ উপস্থিতি - সেটা কি কম কথা ?
প্রতিবেদক: দেবারতি গুহ, সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক