হামবুর্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষ পদক্ষেপ
১ আগস্ট ২০১৩‘‘স্কুলে একবারের বেশি প্রশ্ন করলেই শিক্ষকরা বিরক্ত হন’’, জানালো ১৫ বছরের আরিয়ান৷ হামবুর্গের একটি স্কুলে পড়াশোনা করছে সে৷ তার মা-বাবা এসেছেন ইরান থেকে৷ বছর দুয়েক ধরে হামবুর্গ ইউনিভার্সিটির এক প্রকল্পে আন্তঃসাংস্কৃতিক সেমিনার বা আইকেএস-এ অংশ গ্রহণ করছে আরিয়ান৷ বাবা তাকে ভর্তি করে দিয়েছেন সেখানে৷ তারপর থেকে সপ্তাহে দু'দিন ৯০ মিনিট করে ক্লাস করে আরিয়ান৷ এ কারণে বাবার কাছে সে কৃতজ্ঞ৷ জার্মান ভাষায় তার পরীক্ষার ফল আগের চেয়ে অনেক ভালো হয়েছে৷ এক লাফে পঞ্চম থেকে দ্বিতীয় গ্রেডে পৌঁছেছে৷ এখন ক্লাসে কোনো কিছু না বুঝলে প্রশ্ন করতেও দ্বিধা বোধ করে না এই কিশোর৷
তারা মেধাহীন নয়
‘‘আরিয়ানের মতো যেসব ছাত্র-ছাত্রী আইকেএস-এর ক্লাস করছে তারা মেধাহীন বা নির্বোধ নয়৷ তাদের প্রয়োজন শুধু সঠিক সাহায্য-সহযোগিতার৷ এসব ছেলে-মেয়ের সমস্যা মূলত জার্মান ভাষার ক্ষেত্রে'', বলেন শিক্ষিকা লিসা মিসোনসনিকোভা৷ অভিবাসী পরিবারের ছেলে-মেয়েদের শব্দ ভাণ্ডার খুব সীমিত৷ ব্যাকরণেও অনেকের অসুবিধা হয় বলে জানিয়েছেন তিনি৷
ক্লাস ফোর থেকে বাচ্চারা আইকেএস-এ জার্মান, ইংরেজি এবং অঙ্ক ক্লাস করতে পারে৷ জানান, প্রকল্পটির প্রধান উরসুলা নয়মান৷ চতুর্থ শ্রেণি থেকে অঙ্ক ক্লাসে ভাষার ব্যবহারও হয়ে থাকে প্রচুর৷ এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের কী ধরণের অসুবিধা হয় তা দৃষ্টান্ত দিয়ে বোঝাতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘‘যেমন ‘কমানো' মানে যে বিয়োগের কথা বলা হচ্ছে, তা বোঝে না অনেক ছেলে-মেয়ে৷''
সাধারণ স্কুলগুলোর অবস্থা অনুকূল নয়
সাধারণ স্কুলগুলোতে এসব শেখানো হয় না৷ সেখানে ধরেই নেওয়া হয় যে, ছাত্র বা ছাত্রী সেটা জানে৷ ভাষায় দখল থাকার প্রয়োজন উঁচু ক্লাসেও রয়েছে৷ ‘‘সঠিক সহায়তা পেলে অভিবাসী ছেলে-মেয়েরা হাইস্কুলের ফাইনাল পরীক্ষা, ‘আবিটুর' উত্তীর্ণ হতে পারে৷ এরপর পছন্দমতো বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করতে পারে বিশ্ববিদ্যালয়ে'', জানান নয়মান৷ তিনি আশা করেন, কিছু ছাত্রছাত্রী আগাশীতে শিক্ষকতায় আসবে৷ সে অনুযায়ী বিষয়ও নির্বাচন করবে৷ হামবুর্গের স্কুলগুলোতে অনেক ক্লাসে অভিবাসী ছাত্রছাত্রীই ৫০ শতাংশ, অথচ অভিবাসী শিক্ষকের হার মাত্র ৫ শতাংশ৷
সাধারণ জ্ঞানেও ঘাটতি
অভিবাসী পরিবারের বাচ্চাদের ভাষা সমস্যা ছাড়া সাধারণ জ্ঞানেও ঘাটতি রয়েছে৷ জার্মানির শিল্প ও সংস্কৃতি বিষয়ক কোনো পাঠ থাকলে জার্মান বাচ্চারা তা অনায়াসে বুঝতে পারে, কারণ, বাড়িতে এসব নিয়ে অনেক সময় আলোচনা হয়৷ কিন্তু বিদেশি ছেলে-মেয়েদের কাছে এসব বিষয় সহজে ব্যাপারটি বোধগম্য হয় না৷ তাদের এই অক্ষমতা আবার জার্মান ছেলে-মেয়েদের বিস্মিত করে৷ এ নিয়ে তারা ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ করতেও ছাড়ে না৷ ফলে বিবাদ-বিসংবাদ লেগেই থাকে৷
ছাত্র-ছাত্রীদের প্রিয় কোর্স
গেট্রুডের মা-বাবা এসেছেন ঘানা থেকে৷ মা তাকে প্রায় জোর করেই আন্তঃসাংস্কৃতিক কোর্সে ভর্তি করিয়েছিলেন৷ এখন কোর্সটি তার এত ভালো লাগছে যে, বান্ধবী সেপিডেহকেও সাথে নিয়ে যায় ক্লাসে৷ ‘‘আমরা এখানে পরস্পরকে সহযোগিতা করি'', জানায় গেট্রুডে৷ ১৬ বছরের মেয়েটির কাছে ছোট ছোট গ্রুপে ক্লাস করার ব্যাপারটি খুব ভালো লাগছে৷ সবাই অভিবাসী পরিবার থেকে এসেছে বলে সহজভাবেই ভাষা শেখা হয়৷ তাদের জার্মান ভাষার শিক্ষিকার মাতৃভাষাও জার্মান নয়৷ ২৭ বছর বয়সি এই শিক্ষিকা রাশিয়া থেকে ২০০৮ সালে হামবুর্গে এসেছেন স্প্যানিশ ও জার্মান ভাষায় ব্যাচেলর ডিগ্রি করতে৷ চার বছর ধরে আইএসকে-তে পড়াচ্ছেন তিনি৷ ক্লাসের পরিবেশ বেশ খোলামেলা৷ ছাত্র-ছাত্রীরা মন দিয়ে পড়াশোনা করে৷ সুযোগ থাকলে অবশ্য গ্রীষ্মের বিকেলে বাইরে খেলাধুলা করতেই বেশি ভালো লাগতো তাদের৷ হেসে এ কথা স্বীকারও করে তারা৷ ‘‘কী আর করা, ভবিষ্যতের জন্যও তো কিছু করতে হবে'', বলে আলি৷ ও ফুটবল খেলতে খুব ভালোবাসে৷