অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিশুদ্ধ পানি ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা
১৫ আগস্ট ২০০৮বিশ্বের প্রায় ৬শ' ৭০ কোটি জনসংখ্যার ৪১ ভাগ অর্থাত্ ২শ'৬০ কোটি মানুষই ন্যূনতম স্যানিটেশন সুবিধা বঞ্চিত৷
পানির অপর নাম জীবন হলেও বিশুদ্ধ পানি পাচ্ছে না ১শ´কোটিরও বেশি মানুষ৷ পরিণামে ডায়রিয়ার মতো পানিবাহিত রোগ প্রতি ২০ সেকেন্ডে কেড়ে নিচ্ছে একেকটি শিশুর প্রাণ৷ এই প্রেক্ষাপটে বিশ্ব পানি সপ্তাহ উপলক্ষে ১৭ আগস্ট সুইডেনের স্টকহোমে শুরু হচ্ছে আন্তর্জাতিক সম্মেলন৷ বিশুদ্ধ পানি আর স্যানিটেশন সমস্যা, তার সমাধান, বিশেষ করে স্যানিটেশন সুবিধাকে কি করে অর্থনৈতিক উন্নয়নে রূপান্তরিত করা যায় তাই নিয়ে সপ্তাহ ধরে আলোচনা করবেন ২শ´টি আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিরা৷
ভারতে পানিবাহিত রোগে শিশুমৃত্যু
বিশ্বে ন্যূনতম স্যানিটেশন সুবিধা থেকে বঞ্চিতদের অধিকাংশই এশিয়ার অধিবাসী৷ ভারতে ৭০ কোটি মানুষেরই এই সুবিধা নেই৷ মানব বর্জ্যে দূষিত হচ্ছে নদী-নালা, খাল-বিলের পানি৷ পয়:নিষ্কাশন ও পানি শোধনের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকায় দূষিত পানিই পান করছে কোটি কোটি মানুষ৷ পরিণামে ডায়রিয়া এমনকি মুত্যুর মুখে পড়ছে অনেকে৷
ভারতের বিজ্ঞান ও পরিবেশ কেন্দ্রের প্রধান সুনিতা নারায়ণ বললেন, এটা খুব পরিস্কার, আমরা যদি জনগণকে বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করে দিতে না পারি তাহলে তা আরো বড় ধরনের স্বাস্থ্য ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়াবে৷ এমনকি এখনও যদি শিশুমৃত্যুর কথাই ধরি তাহলে দেখব, পানিবাহিত রোগই সবচে´ বড় ঘাতক৷
২০০৮ সাল আন্তর্জাতিক স্যানিটেশন বর্ষ
শুধু ভারত নয়, অনেক উন্নয়নশীল দেশেই ৬ বছরের কম বয়সী শিশুদের মৃত্যুর অন্যতম কারণ পানিবাহিত রোগ৷ বিশ্ব ব্যাংকের হিসেবে, বিশ্বে ৮৮ শতাংশ রোগেরই উত্স দূষিত পানি, স্যানিটেশন সুবিধার অভাব ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ৷ আর এ বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়েই ২০০৮ সালকে আন্তর্জাতিক স্যানিটেশন বর্ষ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে জাতিসংঘ৷
সুনিতা নারায়ণের মতে, ভারতের সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে স্যানিটেশন সমস্যা অন্যতম বড় বাধা৷ তাঁর কথা, জনগণের কল্যাণের জন্যই উন্নয়ন৷ আর দূষিত পানি দেশের স্বাস্থ্যক্ষেত্রে বাড়তি বোঝাই যোগ করে৷ একটি দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠী যদি অসুস্থ থাকে সেক্ষেত্রে উন্নয়নের কোন আশাই করা যায় না৷ দেশকে বরং পঙ্গুই করে দেয়৷
স্যানিটেশন ব্যবস্থার উন্নয়নে অর্থনৈতিক উন্নতি
বিশেষজ্ঞদের মতে, স্যানিটেশন ব্যবস্থায় বিনিয়োগই জনস্বাস্থ্য আর জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন করবে৷ কমবে দারিদ্র্যও৷ তবে তাদের আরো বড় যুক্তি, উন্নত স্যানিটেশন ব্যবস্থা অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটায়৷ আন্তর্জাতিক পানি ও স্যানিটেশন সহযোগিতা কাউন্সিলের নির্বাহী পরিচালক জন লেইনের ব্যাখ্যা, " দক্ষিণ এশিয়া ও আফ্রিকায় স্যানিটেশন আর স্বাস্থ্য খাতে এক ডলার বিনিয়োগ মানে ৯ ডলার অর্থনৈতিক লাভ৷ একের বিপরীতে নয়, অনুপাতটা খুবই লোভনীয়৷ তবে এখানে সমস্যা হলো, লাভটা ক্যাশে আসছে না৷ দেখতে হবে এভাবে, সুস্থ থাকায় লোকজন কাজ করতে পারছে বেশি৷
স্যানিটেশন সুব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ
যদি স্যানিটেশন সমস্যা আর সুপেয় পানির বন্দোবস্ত থাকে তো কোটি কোটি মানুষ তাদের সময় আর শক্তি কাজে লাগাতে পারে নিজের আর সমাজের উন্নতির জন্য৷ এক্ষেত্রে উদাহরণ হিসেবে বাংলাদেশকে তুলে এনেছেন লেইন৷ বলেছেন, এনজিও-র সহযোগিতায় বাংলাদেশের প্রত্যন্ত গ্রামে বিশুদ্ধ পানি ও স্যানিটেশনের ব্যবস্থা করার কথা৷ লেইন আরো বলেছেন, "স্যানিটেশন ব্যবস্থার উন্নতির মাধ্যমে লোকজন দেখলো, এতে তার পরিবার আর বাড়ির জন্য ভালো তো হচ্ছেই উপকার হচ্ছে গোটা সমাজেরই৷ যদি মানুষ বুঝতে পারে, তার বাড়ির খোলা ল্যাট্রিনের কারণে প্রতিবেশীর ক্ষতি হচ্ছে, কিংবা প্রতিবেশীর কারণে তার ক্ষতি হচ্ছে৷ তাহলে পুরো এলাকা কিংবা গ্রামের মানুষই এক হয়ে তাদের স্যানিটেশন ব্যবস্থার উন্নয়নে উদ্বুদ্ধ হবে৷ এতে উন্নতি হবে সার্বিক জীবনমানেরও৷
এরকম প্রকল্প নেয়া হয়েছে ভারতেও৷ বিশুদ্ধ পানি ও স্যানিটেশনকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে ভারত সরকার৷
এসব বিষয়ই উঠে আসবে স্টকহোমে আসন্ন বিশ্ব পানি বিষয়ক সম্মেলনে৷ গুরুত্ব পাবে পয়:নিষ্কাশন ও পানি শোধনে নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার, কৃষিতে প্রাকৃতিক সার হিসেবে মানব বর্জ্য কাজে লাগানো এবং বৃষ্টির পানির ব্যবহার বাড়ানো ছাড়াও আরো অনেক বিষয়৷