ইস্যু যখন অস্ত্র রপ্তানি
২৩ আগস্ট ২০১৪অন্যান্য ইউরোপীয় দেশের মতো জার্মান সরকারও আজ বহু বছর যাবৎ অস্ত্র ক্রয় কমিয়ে আসছেন: বাজেট কমানো হয়েছে, অর্ডার বাতিল করা হচ্ছে৷ এর ফলে জার্মান অস্ত্র নির্মাতারা আর সরকারি কনট্র্যাক্টের উপর নির্ভর করতে ভরসা পাচ্ছেন না৷ ট্যাংক কিংবা নৌযানের মতো ভারী অস্ত্রশস্ত্র কেনার খদ্দের কম, তাই জার্মান অস্ত্র নির্মাতারা যেমন একদিকে ‘টেকনোলজি' বিক্রির উপর জোর দিয়েছেন, অন্যদিকে তারা নতুন অস্ত্র প্রণালীর বিকাশ ও সে'সংক্রান্ত গবেষণার অর্থসংস্থান করেছেন বিদেশে অস্ত্র বিক্রি করে – এক কথায় অস্ত্র রপ্তানি৷
জার্মান অস্ত্র নির্মাতাদের মধ্যে ব্যবসায়িক দিক থেকে সবচেয়ে সফল হলো বাভারিয়ার ছোট ছোট স্পেশালিস্ট কোম্পানিগুলি, যারা নানা ধরনের ‘প্রিসিজন উইপন' তৈরি – এবং রপ্তানি করে থাকে৷ এভাবেই বেশ চলছিল৷ বাদ সাধল নতুন জোট সরকার এসে৷ সরকারের ছোট তরফ এসপিডি চায় জার্মানি থেকে অস্ত্র রপ্তানি আরো কঠিন এবং সীমিত করতে৷ ‘মৃত্যু নিয়ে ব্যবসা' চলতে দিতে চায় না সামাজিক গণতন্ত্রীরা৷
কিন্তু ব্যবসা ছাড়া অস্ত্র শিল্প বাঁচবে কি করে? জার্মান অস্ত্র শিল্পের এক লাখ চাকুরিই বা বাঁচবে কি করে? এক্ষেত্রে অস্ত্র শিল্পের শ্রমিক ও তাদের প্রতিনিধিরা – যাঁরা কিনা এসপিডি-র সমর্থক – এবং অস্ত্র শিল্পের মালিকপক্ষ, দু'দলই একমত৷ এসপিডি প্রধান, জার্মান অর্থনীতি মন্ত্রী তথা ভাইস চ্যান্সেলর সিগমার গাব্রিয়েলের কুইক্সোটিক কাণ্ডকারখানা তাঁকে (দক্ষিণ) জার্মানিতে আরো জনপ্রিয় করে তোলেনি৷ সরকার কি অস্ত্র রপ্তানি একেবারেই বন্ধ করে দিতে চান? এই প্রশ্ন উঠেছে৷ সেক্ষেত্রে যে শুধু অনেক মানুষের চাকরি যাবে, এমন নয়, তার চেয়েও বড় কথা: জার্মানির নিজস্ব প্রতিরক্ষার প্রয়োজনেই কি অস্ত্র শিল্পের বিকাশ অব্যাহত রাখা প্রয়োজন নয়?
ওদিকে ইরাকে কুর্দ বা কুর্দিরা লড়ছে ইসলামিক স্টেট সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে৷ কুর্দরা চায় জার্মানির কাছ থেকে অস্ত্র৷ তাদের এই দাবি জার্মানিতেও নানা প্রত্যাশিত ও অপ্রত্যাশিত মহল থেকে সমর্থন পেয়েছে: যেমন বাম দল, কিংবা সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী সবুজ দলের রাজনীতিক ইয়শ্কা ফিশার৷ সকলেই নির্দ্বিধায় বলছেন: কুর্দদের অস্ত্র দেওয়া হোক৷
আরেক বিপদ: অস্ত্র রপ্তানি সম্পর্কে জার্মান সরকারের নীতি জাপান ও অস্ট্রেলিয়ার মতো সুদূরের মিত্রদের মনেও নাকি সন্দেহের সৃষ্টি করেছে, অস্ত্র সরবরাহের ক্ষেত্রে জার্মানিকে নির্ভরযোগ্য সহযোগী হিসেবে গণ্য করা চলে কি না৷ আরো বড় কথা, চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের নিজের দল সিডিইউ-এর কিছু বিধায়ক খোলাখুলিভাবে বলছেন, ‘‘গাব্রিয়েল যা করছেন, তা জার্মানির জাতীয় নিরাপত্তার পক্ষে একটি ঝুঁকি৷''
এসি/ডিজি (ডিপিএ)