অ্যাপে বর্জ্য বেচাকেনা
৮ জানুয়ারি ২০২০নিকেন প্রাস্তিউই এখন আর বাড়ির উঠোনে ময়লা পোড়ান না৷ গত মাসে তিনি ঘরের সব বর্জ্য আলাদা করেছেন নিজ হাতে৷ বর্জ্য কোনটা কী রকম, যেমন কোনটা প্লাস্টিক, কোনটা কাগজ কিংবা ক্যান- এভাবে আলাদা করেছেন৷ প্রথম প্রথম কাজটি অস্বাস্থ্যকর লাগত নিকেনের কাছে৷
কিন্তু রাপেল নামের একটি স্মার্টফোন অ্যাপ ব্যবহার করার পর থেকে তাঁর ধারণা পাল্টেছে৷ অ্যাপ ব্যবহার খুব সহজ৷ প্রথমে বর্জ্য আলাদা করতে হবে৷ এরপর ব্যবহারকারী বর্জ্যের ছবি তুলবেন, এর বিবরণ দেবেন এবং বর্জ্যের আনুমানিক ওজন মাপবেন৷ পরে সে অনুযায়ী ব্যবহারকারী অর্থ পাবেন৷
নিকেন বলেন, ‘‘সাধারণ মেথরদের থেকে বেশি টাকা পাওয়া যায়৷ যতটুকু ব্যবহৃত তেল ১০০০ রূপিয়া হতে মেথরদের কাছে বিক্রি করতাম, রাপেলে তা থেকে ২০০০ রূপিয়াহ পাওয়া যায়৷ প্রথম প্রথম আলাদা করাটা একটা ঝামেলার কাজ মনে হত, কিন্তু এখন অভ্যাস হয়ে গেছে৷ ঈশ্বরকে ধন্যবাদ যে সবাই বর্জ্য নিয়ে সচেতন, যেমন আমার দাদিমার বাড়ির আশেপাশে থেকে বর্জ্য ঘরে এনে তা রাপেলকে বিক্রি করে দেয়া হয়েছে৷''
যারা বর্জ্য সংগ্রহ করেন তাদের জীবনও সহজ করে দিয়েছে রাপেল অ্যাপলিকেশনটি৷ এখন তারা কেবল তাদের স্মার্টফোনের দিকে তাকিয়ে জেনে যান কোথায় বর্জ্য আছে৷
অ্যাপে বর্জ্যের ডেটা দেয়া হলে, কাছাকাছি থাকা বর্জ্য সংগ্রাহকরা গিয়ে উপস্থিত হবেন৷ সংগ্রাহকেরা আরেকটি মাপ দেবেন এবং এর দাম ঠিক করে দেবেন৷ অ্যাপ ব্যবহারকারীরা যে কোনো সময় এই অর্থ তুলে নিতে পারেন৷
ইন্দ্রি বলেন, ‘‘অ্যাপ থেকে আমরা নানা বোনাস পাই৷ আমাদের সেবার মানের ওপরও বোনাস দিয়ে উৎসাহিত করা হয়৷ তাই আমাদের সেবার মান বাড়ানোর চাপ থাকে সবসময়৷ রাপেল ব্যবহার করার আগে প্রতিমাসে বর্জ্যব্যাংকে আমরা বর্জ্য বিক্রি করতাম৷ এখন রাপেলের কারণে এত বর্জ্য আসে যে সপ্তাহে-দুই সপ্তাহে বিক্রি করে দিই৷''
ইন্দ্রি তাঁর গ্রামের একটি বর্জ্য ব্যাংকেরও ব্যবস্থাপক৷ তিনি বর্জ্যের জন্য এখন আর গ্রামে ঘুরে বেড়ান না৷ বরং তাঁর কাছে এখন বর্জ্য বিক্রি করার হিড়িক লেগে যায়৷
যোগজাকার্তায় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা একটি বড় সমস্যা৷ যোগজাকার্তা ছাড়াও স্লেমান ও বানটুল জেলার বর্জ্য কেন্দ্রীয়ভাবে জড়ো করা হয় পিউঙ্গানের একটি বর্জ্য ব্যবস্থাপনা পয়েন্টে৷
সাধারণ মানুষও বর্জ্য আলাদা করার যে আইন তা ঠিকমত অনুসরণ করেন না৷
প্রযুক্তির সহায়তায় এ সমস্যা সমাধানেই রাপেলের জন্ম৷ ইন্দোনেশিয়ার ভাষায় রাপেল ‘মানুষ পরিবেশের জন্য'-এর সংক্ষিপ্তরূপ৷ এর উদ্যোক্তা সেকতি মুলাতসিহ বলেন, ‘‘২০১৫ সালে যোগজাকার্তায় বর্জ্য ব্যবস্থাপনার একটি মূল্যায়ন করি আমরা৷ তখন দেখলাম যে, মানুষ তাদের ঘরবাড়িতে বর্জ্য ঠিকই আলাদা করছেন, কিন্তু সংগ্রহ করার সময় তা আবার মিশিয়ে ফেলা হচ্ছে৷ এতে মানুষ হতাশ হচ্ছেন৷ তারা আলাদা একটি বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সিস্টেম চান৷ সেখান থেকেই এই আইডিয়া আসে৷ আমরা তাই এই বর্জ্য কিনি৷ বর্জ্য তৈরিকে আমরা উৎসাহ দিচ্ছি না৷ বরং যারা কষ্ট করে একে আলাদা করেন তাদের পুরষ্কৃত করছি৷ এতে তারা খুশি হচ্ছেন৷ তাই এই উদ্যোগও সফল হয়েছে৷''
রাপেলে দুই হাজার সাতশ নিবন্ধিত ব্যবহারকারী৷ তবে নিয়মিত ব্যবহার করছেন মাত্র তিনশ জন৷ এখানে সরকারের সহযোগিতা ও জনগণের সচেতনতা দরকার৷
আন্দ্রেয়াস পামুংকাস ত্রি/জেডএ