1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

অ্যামেরিকার ভ্রুকুটি অগ্রাহ্য করলো ভারত

অনিল চট্টোপাধ্যায় নতুনদিল্লি
১০ অক্টোবর ২০১৮

ভ্লাদিমির পুটিনের ভারত সফরে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ঝালাই করার পাশাপাশি সই হয় ভারত-রাশিয়া নতুন প্রতিরক্ষা চুক্তি৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হুমকি দিয়েছিল, চুক্তি সই করলে ভারতের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হবে৷

https://p.dw.com/p/36G40
Indien Wladimir Putin, Präsident Russland & Narendra Modi, Premierminister
ছবি: Reuters/Y. Kadobnov

দিল্লিতে পা রাখার দিনই রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুটিন রাতে প্রধানমন্ত্রী মোদীর বাসভবনে গিয়ে একান্তে প্রতিরক্ষা চুক্তিসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেন৷ এ বিষয়ে দু'দেশের প্রতিরক্ষা নীতি ও অবস্থান নিয়ে মত বিনিময় করেন৷ পরের দিন দু' দেশের স্ট্র্যাটিজিক পার্টনারশিপের প্রেক্ষিতে রাশিয়ার সঙ্গে প্রতিরক্ষাসহ আটটি বিষয় নিয়ে চুক্তি হয় ভারতের৷ প্রতিরক্ষা চুক্তির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো ৫০০ কোটি ডলার ব্যয়ে এস-৪০০ দূর পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র কেনার বিষয়টি৷ মস্কোর সঙ্গে এই ধরনের সামরিক চুক্তি মেনে নিতে পারেনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র৷ ফলে ট্রাম্প প্রশাসন পড়েছে বেজায় অস্বস্তিতে৷ চুক্তির আগে দিল্লি নানাভাবে ওয়াশিংটনকে বোঝাবার চেষ্টা করেছিল, কিন্ত ট্রাম্প প্রশাসনের বরফ গলেনি৷ উপরন্তু ভারতকে হুমকি দেয় যে, ইরান বা উত্তর কোরিয়ার মতো ভারতের উপরও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হবে৷ যদিও এখনো পর্যন্ত সরকারিভাবে ভারতের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়নি৷ এই নিয়ে মার্কিন প্রশাসনেও রয়েছে মতভেদ৷

 মোদী সরকার অবশ্য সেই হুমকির পরোয়া করেনি৷ এক সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে.মোদী-পুটিন শী্র্ষ বৈঠকের অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে ছিল  দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের পুনরুজ্জীবন৷ যেমন, মানব সম্পদ বিকাশ, ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ৷ ইরান থেকে অশোধিত তেল আমদানির উপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার অভিঘাত নিয়েও মত বিনিময় হয়৷ প্রধানমন্ত্রী মোদী ভারতে প্রতিরক্ষা শিল্পাঞ্চল গড়ে তুলতে মস্কোকে অনুরোধ করেন৷ স্বাক্ষরিত অন্যান্য আটটি চুক্তির মধ্যে আছে, মহাকাশ গবেষণা, পরমাণু বিদ্যুৎ শক্তি প্রকল্প এবং রেলওয়ে৷ ভারতে আরো ছয়টি পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মিত হবে রাশিয়ার সহযোগিতায়৷ গগনায়ন প্রকল্পের অধীনে ২০২২ সালে মহাকাশে মানুষ পাঠাবার অভিযানেও ভারতকে সাহায্য করবে মস্কো৷ রাশিয়া থেকে ক্রিভাক ক্লাস যুদ্ধ জাহাজ এবং কেএ-২২৬ হেলিকপ্টার কেনা নিয়েও প্রাথমিক কথাবার্তা হয়৷

‘সমরাস্ত্রের চাহিদা মেটাতে কোনো একটি দেশের উপর নির্ভর না করা’

 রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ভারতের প্রতিরক্ষা নীতির ভিত্তি হলো,সমরাস্ত্রের চাহিদা মেটাতে কোনো একটি দেশের উপর নির্ভর না করা৷রাজনৈতিক এবং স্ট্র্যাটিজিক বিশেষজ্ঞ ত্রিদিব চক্রবর্ত্তী ডয়চে ভেলেকে এমনটিই বললেন৷ তাঁর মতে, ‘‘ভারত যে যুক্তরাষ্ট্রের উপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল নয়, সেটা বোঝাতে রাশিয়ার সঙ্গে এই ধরনের চুক্তির দরকার ছিল৷ জাতীয় স্বার্থের কথা মাথায় রেখে যে-কোনো দেশ থেকে প্রয়োজনীয় সমরাস্ত্র আমরা কিনতে পারি৷ যুক্তরাষ্ট্রের আশঙ্কা, ভারত বুঝি মস্কোর উপর নির্ভরশীল না হয়ে পড়ে, যেটা শীতল যুদ্ধের সময়ে হয়েছিল৷ এটা যুক্তরাষ্ট্রের মাইন্ডসেট হতে পারে৷ তবে রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের প্রতিরক্ষা চুক্তি সঠিক পদক্ষেপ৷ প্রতিরক্ষা বা পররাষ্ট্র নীতি পরিচালিত হবে ভারতের জাতীয় স্বার্থের কথা বিবেচনা করে৷ ইস্যুভিত্তিক সমঝোতায় যেতে পারে যে-কোনো দেশের সঙ্গে৷ পাকিস্তান এক সময়ে বড় বেশি যুক্তরাষ্ট্রের উপর নির্ভর করতো৷ যুক্তরাষ্ট্র ধরে নিয়েছিল পাকিস্তানের এছাড়া গতি নেই৷ ভারতের ক্ষেত্রে সেটা হবার নয়, মোদী সেটাই বুঝিয়ে দিয়েছেন৷''

রাশিয়ার সঙ্গে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা দীর্ঘদিনের৷ ভারতে সামরিক সাজসরঞ্জাম এবং সমরাস্ত্র তৈরি হয় রাশিয়ার প্রযুক্তিতে৷ যেমন, মিগ সিরিজের যুদ্ধ বিমান৷ নতুনদিল্লির কূটনৈতিক এবং প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বেশ কয়েকটি কারণে এই প্রতিরক্ষা ক্ষেপনাস্ত্র ব্যবস্থা কেনার বিষয়টি জরুরি হয়ে পড়েছিল৷ যেমন, চীন ও পাকিস্তানের মোকাবিলায় রাশিয়া থেকে এই ধরনের প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম কেনা দরকার হয়ে পড়েছিল৷ দ্বিতীয়ত, সম্প্রতি ভারত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দিকে বেশি ঝুঁকে পড়ায় রাশিয়া, চীন ও পাকিস্তানের মধ্যে পরস্পরের ঘনিষ্ঠ হবার প্রবণতা বেড়ে যায়৷ নিরাপত্তা পরিষদে ভারত যাতে স্থায়ী সদস্য হতে পারে, সেজন্য রাশিয়া দীর্ঘদিন ধরে ভারতকে সমর্থন  করে এসেছে৷ তৃতীয়ত, চীনকে আটকাতে ভারতকে পাশে চায় ওয়াশিংটন৷ তাই দিল্লি যাতে রাশিয়ামুখী না হতে পারে, সে ব্যবস্থা করার চেষ্টা করছে৷ নিষেধাজ্ঞা জারির হুমকি দিচ্ছে৷ রাশিয়া বা ইরানের মতো বন্ধু দেশগুলি থেকে অশোধিত তেল বা রাশিয়া থেকে সমরাস্ত্র কেনায় বাধা দিচ্ছে৷ নতুনদিল্লিও এই চাপের কাছে মাথা না নুইয়ে দর কষাকষির শক্তি বাড়াচ্ছে৷ রাশিয়ার সঙ্গে প্রতিরক্ষা চুক্তি সই করা তারই একটা অঙ্গ৷ ভারত-মার্কিন যৌথ সামরিক মহড়া এবং ভারতের সঙ্গে জরুরি সামরিক তথ্যাদি বিনিময়েও রাজি হয় ওয়াশিংটন৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য