ইইউ-তে তৈরি অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে যুদ্ধ করছে আইএস!
২০ ডিসেম্বর ২০১৭কনফ্লিক্ট আর্মামেন্ট রিসার্চ বা সিএআর (‘কার') বৃহস্পতিবার তাদের ২০০ পাতার রিপোর্টটি প্রকাশ করে৷ ‘কার'-এর লক্ষ্য হলো, বিভিন্ন সংঘাতের এলাকায় ব্যবহৃত অস্ত্রশস্ত্র কোথা থেকে এসেছে, তার খোঁজ করা৷ তাদের সর্বাধুনিক জরিপের ফলাফল থেকে দেখা যাচ্ছে যে, আইএস-এর ভাঁড়ারের গুলিবন্দুকের ৩০ শতাংশের বেশি এসেছে বুলগেরিয়া, রোমানিয়া, হাঙ্গেরি ও জার্মানি থেকে৷ অপরদিকে আইএস সন্ত্রাস গোষ্ঠীর অস্ত্রসম্ভারের ৫০ শতাংশের বেশি এসেছে রাশিয়া ও চীন থেকে৷
ইসলামিক স্টেট-এর অস্ত্রশস্ত্র' শীর্ষক রিপোর্টটির জন্য ‘কার'-এর একাধিক গবেষক গোষ্ঠী তিন বছর ধরে ইরাক ও সিরিয়ায় অকুস্থলে অনুসন্ধান চালিয়েছেন৷ ২০১৪ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে রণাঙ্গণে আইএস-এর কাছ থেকে পাওয়া কামান ও গুলিবন্দুক এবং বোমা তৈরির বিশ্লেষণ করে ‘কার'-এর কর্মীরা তাদের সিদ্ধান্তে এসেছেন৷
আইএস-এর কাছে অস্ত্রশস্ত্র যায় কী করে?
রিপোর্টে স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে যে, আইএস-এর অস্ত্রশস্ত্রের অধিকাংশ ইরাকি ও সিরীয় সেনাবাহিনীর কাছ থেকে লুট করা হয়েছে৷ কিন্তু বহুক্ষেত্রে সৌদি আরব ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সিরিয়ার বিদ্রোহীদের সরবরাহ করার জন্য পূর্ব ইউরোপের দেশগুলি থেকে যে অস্ত্রশস্ত্র কিনেছে, তা আইএস-এর তাঁবে গিয়ে পড়েছে৷
রিপোর্টের ভাষায় ‘‘যে সব সংঘাতে একাধিক প্রতিযোগী ও পরস্পরের অনুরূপ বেসরকারি সশস্ত্র গোষ্ঠী সংশ্লিষ্ট, সেখানে অস্ত্র সরবরাহের পরস্পরবিরোধিতার কথা'' এই সব তথ্য আমাদের স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে৷
রিপোর্টে দেখানো হয়েছে, সৌদি আরব ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কিভাবে পূর্ব ইউরোপের দেশগুলি থেকে কোটি কোটি ডলার মূল্যের অস্ত্রশস্ত্র কিনে তা সিরিয়ার সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলির কাছে পাচার করেছে, বহুক্ষেত্রে অস্ত্র কেনার শর্ত ভঙ্গ করে৷ ‘‘অস্ত্র রপ্তানিকারী ইউ সদস্যদেশ ও সৌদি আরব এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতাদের মধ্যে চুক্তিকৃত বিক্রয় ও রপ্তানির শর্ত ভঙ্গ করে বহুবার অস্ত্র হস্তান্তর করা হয়েছে,'' বলে রিপোর্টে বলা হয়েছে৷
ইউরোপ থেকে দু'মাসের মধ্যে আইএস-এর হাতে
একটি ক্ষেত্রে ‘কার' দেখিয়েছে, ইইউ-তে নির্মিত একটি উচ্চপ্রযুক্তির ট্যাংক-বিধ্বংসী বেতারচালিত সমরাস্ত্র কীভাবে প্রথমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রি করা হয় ও পরে সেখান থেকে সিরীয় সংঘাতে সংশ্লিষ্ট এক পক্ষকে সরবরাহ করা হয় এবং শেষ পর্যন্ত ইরাকে আইএস যোদ্ধাদের হাতে গিয়ে পড়ে – সমরাস্ত্রটি কারখানা থেকে বের হওয়ার মাত্র দু'মাসের মধ্যে৷
‘‘সিরিয়া সংঘাতে সংশ্লিষ্ট গোষ্ঠীগুলির প্রতি আন্তর্জাতিক অস্ত্র সরবরাহের ফলে আইএস বাহিনীর হাতে অস্ত্রশস্ত্রের মান ও পরিমাণ লক্ষণীয়ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে – আইএস গোষ্ঠী যুদ্ধক্ষেত্রে যা বাজেয়াপ্ত করতে পারত, তার চেয়ে এই সব অস্ত্রশস্ত্রের সংখ্যা অনেক বেশি,'' বলে রিপোর্টে মন্তব্য করা হয়েছে৷
‘কার'-এর বিবরণ অনুযায়ী অস্ত্র হস্তান্তরে সংশ্লিষ্ট গোষ্ঠী ও ব্যক্তিবর্গ বহুক্ষেত্রে জেনেশুনে ঐ সব অস্ত্রশস্ত্রের প্যাকেজিং বদলে বা কারখানার নম্বর রং করে ঢেকে দিয়ে অস্ত্রের উৎস গোপন করার চেষ্টা করেছে৷ গবেষকদের সংগৃহীত তথ্যের ফলে অনেক ক্ষেত্রে দায়রা মামলা সূচিত হয়েছে, যেমন বেলজীয় পুলিশ আইইডি বোমার মশলা সরবরাহের ব্যাপারে তদন্ত করছে৷
২০১৪ সালে আইএস একটি ঝটিতি অভিযানে ইরাক ও সিরিয়ায় বেশ কিছু রাজ্যাঞ্চল দখল করে৷ ইতিমধ্যে অধিকাংশ এলাকা তাদের হাতছাড়া হলেও, আইএস জঙ্গিরা এখনও বিপদ সৃষ্টি করতে পারে, বলে ‘কার' সাবধান করে দিয়েছে৷ দৃশ্যত জঙ্গিরা তাদের নিজস্ব উচ্চপ্রযুক্তির সমরাস্ত্র তৈরির ক্ষমতা অর্জন করেছে৷
‘‘তাদের বিশ্বব্যাপি গতিবিধি, সরবরাহ ও সংগঠনে তাদের প্রামাণ্য দক্ষতা ও সারা দুনিয়া থেকে অনুগামী সংগ্রহের কারণে (আইএস) তাদের সংশ্লিষ্ট এলাকার বাইরে বিদ্রোহ ও সন্ত্রাস রপ্তানি করার ক্ষমতা রাখে,'' বলে রিপোর্টে সিদ্ধান্ত করা হয়েছে৷
নাটালি ম্যুলার/এসি