1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আইনের ফাঁক গলে টমেটো ২৫০, পেঁয়াজ ৯৬ টাকা

১০ নভেম্বর ২০২৩

মজুতদারের কালোবাজারি ভারতের ঐতিহ্যের অঙ্গ। লেখক বিজন ভট্টাচার্য থেকে কৃষক কপিল কুমার সকলেই এর বিরুদ্ধে কথা বলেন কিন্তু তাতে বাজারের কিছু এসে যায় না।

https://p.dw.com/p/4Yd8a
Indien Markt in Gurugram
ছবি: Ankita Mukhopadhyay/DW

কৃষক আন্দোলনের সময় আলাপ হয়েছিল পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের ছেলে কপিল কুমারের সঙ্গে। কপিল পরিবারের একমাত্র গ্র্যাজুয়েট। শিক্ষকতার সঙ্গে যুক্ত। পরিবারের আর সকলেই কৃষিকাজ করেন। সব মিলিয়ে ১২ একর জমি। সম্প্রতি টমেটোর দাম যখন চড়চড় করে বাড়ছে দিল্লির বাজারে, এক ক্রেট টমেটো নিয়ে বাড়িতে হাজির কপিল। খেতের টমেটো নিয়ে এসেছে, যাতে ২৫০টাকা কেজি দরে টমেটো কিনতে না হয় বন্ধুকে।

ওইদিনই আনাজপাতির দাম নিয়ে দীর্ঘ আড্ডা হয়েছিল কৃষক-বন্ধুর সঙ্গে। কপিল জানিয়েছিল, বাজারে টমেটোর দাম বাড়লেও তাতে কৃষকের কোনো লাভ হচ্ছে না। কারণ, এবছর টমেটোর ফলন কম হয়েছে। অকাল বৃষ্টিতে জমিতেই নষ্ট হয়েছে প্রচুর টমেটো। বিনিয়োগ মূল্যটুকু তুলে নেওয়ার জন্য কম দামে মান্ডিতে টমেটো বিক্রি করে দিতে বাধ্য হয়েছে কৃষক। যখন তারা বিক্রি করছে ফসল, তখনই জানতো মাসখানেকের মধ্যে বাজারে টমেটো অগ্নিমূল্য হবে। কারণ, জোগানের চেয়ে চাহিদা বেড়ে যাবে। সুযোগ থাকলে টমেটো যদি মজুত করা যেত, তাহলে উৎপাদন কম করেও ভালো মুনাফা করতে পারতো কৃষক। কিন্তু কৃষকের কোল্ড স্টোরেজ নেই। তাই মহাজনের কাছে কম দামে টমেটো বিক্রি করা ছাড়া তাদের কাছে আর কোনো উপায় ছিল না।

তাহলে মুনাফা কার হলো? মধ্যসত্ত্বভোগীর। আসলে মুনাফা কেবল তাদেরই হয়। কৃষকের হয় না। মধ্য সত্ত্বভোগীর হাতে কোল্ড স্টোরেজ। আলু, পেঁয়াজ, টমেটো-- সব কিছুই সে কোল্ড স্টোরেজে জমিয়ে রাখতে পারে। বাজার বুঝে ফসল ছাড়লে লাভ দ্বিগুণও বেশি। মাসখয়েক আগে দিল্লির বাজারে সেই খেলাটাই খেলেছিল তারা। ৩০ টাকা কেজি টমেটো বিক্রি হয়েছিল ২৫০ টাকায়। ঠিক যেমন এখন ১৫ টাকা কেজি-র পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৯৫ টাকায়।

মায়ের কাছে গল্প শুনেছি, দেশভাগের পর কলকাতায় এসে যে পাড়ায় তারা উঠেছিল, সেখানে বাস করতেন এক দোর্দণ্ডপ্রতাপ বামপন্থী নেতা। পরবর্তীকালে সেই নেতাকে নিয়ে বিতর্কও হয়েছে খুব। তা সেই জনদরদী, উদ্বাস্তুদরদী বামপন্থী নেতা খাদ্য আন্দোলনেও তার ফুটপ্রিন্ট তৈরি করেছিলেন। তার বাড়ির পিছনেই ছিল চালের গুদাম। খাদ্য আন্দোলনের পর্বে সকালে তিনি রাজপথে আন্দোলন করতেন আর সন্ধ্যায় পিছনের বারান্দায় বসে চালের কালোবাজারি।

Syamantak Ghosh
স্যমন্তক ঘোষ, ডয়চে ভেলে৷ছবি: privat

মধ্যসত্ত্বভোগীদের সেই চরিত্র আজও বদলায়নি। শোনা যায়, এখনও তারা নেতার জার্সি গায়ে পরে রেশনের চাল চুলি করেন। চুরি করেন, মানে কম পয়সার রেশনের চাল কিনে বেশি পয়সায় বাজারে বিক্রি করেন। শোনা যায়, দারিদ্রসীমার নিচে বসবাসকারীদের জন্য সরকার যে দু'টাকা কিলো চালের ব্যবস্থা করেছে, তা-ও নাকি খোলা বাজারে ৮ থেকে ১০ টাকায় বিক্রি হয়। খোঁজ করলে দেখা যাবে, সব রাস্তাই রোমে গিয়ে মিশেছে-- চোরা ব্যবসার সিন্ডিকেট চালাচ্ছেন কোনো না কোনো নেতা।

অথচ এমনটা হওয়ার কথা ছিল না। ভারতে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্য, ওষুধের জন্য মজুত বন্ধ করার জন্য নির্দিষ্ট আইন তৈরি হয়েছে। যাকে এসেনশিয়াল কমোডিটি অ্যাক্ট বলা হয়। এই আইনে স্পষ্ট বলা আছে ওষুধ, দুধ, শস্য, খাদ্যদ্রব্যের মজুত নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে করতে হবে। মোট সাতটি দ্রব্য আছে এই আইনের আওতায়। এই সাত ধরনের জিনিস কতটা মজুত করা যাবে, কত দামে তা ছাড়তে হবে, মুনাফা কতটা করা যাবে, সেই সমস্ত কথা ওই আইনে বলা আছে। কিন্তু কে শোনে আইনের কথা? কে পাত্তা দেয় আইনকে? বস্তুত, বছরখানেক আগে কেন্দ্রীয় সরকার এই আইনটিকে বাতিল করে নতুন আইন আনতে চাইছিল। যেখানে এসেনশিয়াল কমোডিটির উপর থেকে সমস্ত সিলিং সরিয়ে দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল।

এতে মধ্যসত্ত্বভোগীর মুনাফা আরো বাড়তে পারতো৷ বাজারে জিনিসের দাম বাড়লে কারো কিছু করার থাকতো না৷ পেট্রল-ডিজেলের ক্ষেত্রে ঠিক যা হয়েছে। যবে থেকে তেল সরকারের হাত থেকে বাজারের হাতে গেছে, তবে থেকে হুহু করে বেড়েছে দাম৷ কমেওছে৷ ১৫ টাকা বাড়ার পর তিন টাকা৷

নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের ক্ষেত্রে এখনো সেই অঘটনটি ঘটেনি। মধ্যসত্ত্বভোগী কিছুদিন মুনাফা করে নেওয়ার পরেই সরকার রাস্তায় নামে। দাম বেড়ে যাওয়া জিনিসের উপর সিলিং তৈরি করা হয়। লোক দেখানো দুইএকটা রেড হয় বড় বড় বাজারে৷ আমদানি বাড়িয়ে দেওয়া হয়৷ তারপর এক সপ্তাহের মধ্যে দেখা যায় ২৫০ টাকার টমেটো আবার তার স্বাভাবিক ৩০টাকা মূল্যে ফিরে এসেছে৷ ৯৬ টাকার পেঁয়াজ ফিরে এসেছে ১০টাকায়৷

মাঝের ওই বেআইনি এক সপ্তাহ বা দেড় সপ্তাহ বা এক মাসেই মজুতদাররা লাভের ক্ষীর তুলে নেয় গোটা বছরের জন্য৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য