‘আইন প্রয়োগের জন্য অর্থ ও জনবল নেই'
৫ এপ্রিল ২০১৫ব্রাসেলসভিত্তিক ‘এনজিও শিপব্রেকিং প্ল্যাটফর্ম' সংস্থার এই কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশে ঐ আইন প্রয়োগের জন্য যে সংস্থা রয়েছে তাদের যেমন পর্যাপ্ত অর্থ নেই, তেমনি নেই লোকবল৷ অনেক সময় দেখা যায়, একজন ব্যক্তিই শত শত ফ্যাক্টরি ও শিপইয়ার্ড পরিদর্শন করেন৷ আবার এই পরিদর্শকের জাহাজভাঙা শিল্প সম্পর্কে অভিজ্ঞতা না থাকায় সঠিকভাবে আইন প্রয়োগ সম্ভব হয় না৷ ডয়চে ভেলের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন পাট্রিৎসিয়া হাইডেগার৷ তিনি বলেন, জাহাজভাঙার কাজ সবসময়ই ঝুঁকিপূর্ণ৷ তবে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এই ক্ষতিটা আরেকটু বেশি৷ কেননা সেখানে সমুদ্র সৈকতে ভাঙার কাজটি করা হয়৷ ফলে জাহাজ ভাঙা থেকে যে ইস্পাত বের হয় তার একটি অংশ সাগরের পানিতে চলে যায়৷ এছাড়া পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় প্রায়ই দেখা যায়, শ্রমিকরা জাহাজের উঁচু অংশ থেকে কাজ করার সময় হঠাৎ নীচে পড়ে যায়৷ কখনও কখনও ভাঙা ইস্পাতের টুকরো শ্রমিকের মাথায় পড়ে শ্রমিক আহত হন৷ এছাড়া জাহাজ ভাঙা শিল্পের শ্রমিকরা কাজ করার সময় বিভিন্ন বিষাক্ত রাসায়নিক দ্রব্যের সংস্পর্শে আসেন যা ফুসফুসে সমস্যা, এমনকি ক্যানসারেরও কারণ হতে পারে৷ আরা যাঁরা কাজ করতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন, তাঁদের পর্যাপ্ত চিকিৎসার ব্যবস্থা করে না ইয়ার্ড কর্তৃপক্ষ৷ এমনকি অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাঁদের প্রয়োজনীয় ক্ষতিপূরণও দেয়া হয় না৷
চট্টগ্রামের জাহাজ ভাঙা শিল্প নিয়ে ডয়চে ভেলের আরেকটি প্রতিবেদন৷ এতে বলা হয়েছে, শিপব্রেকিং ইয়ার্ডের মালিকদের সঙ্গে ক্ষমতাবানদের সুসম্পর্ক রয়েছে৷ তাই তারা সহজেই আইনকে পাশ কাটাতে পারেন৷
চট্টগ্রামের উত্তর উপকূলে জাহাজ ভাঙা শিল্পের কারণে দূষণের ভয়াবহতা ফুটে উঠেছে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক-এর একটি ছবিঘরে৷
বাংলাদেশের মতো পরিস্থিতি দেখা যায় ভারত ও পাকিস্তানের শিপইয়ার্ডগুলোতেও৷ তাই ইউরোপে নিবন্ধনকৃত জাহাজগুলো যেন ভাঙার জন্য দক্ষিণ এশিয়ায় পাঠানো না হয় সে লক্ষ্যে একটি আইন করতে যাচ্ছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন৷
সম্প্রতি বিশ্বের সবচেয়ে বড় জাহাজ কোম্পানিগুলোর একটি জার্মানির হাপাগ-লয়েড সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, এখন থেকে পুরনো জাহাজ ভেঙে ফেলার জন্য তারা আর বাংলাদেশে পাঠাবে না৷ এর ফলে বাংলাদেশ আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা৷
তবে এরপরও ইউরোপের অনেক জাহাজের শেষ ঠিকানা যে দক্ষিণ এশিয়া হতে পারে তার প্রমাণ পাওয়া যায় এই প্রতিবেদন থেকে৷
সংকলন: জাহিদুল হক
সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন