‘আকাশে যত তারা, পুলিশের তত ধারা’
১ আগস্ট ২০১৩বাংলাদেশে প্রতিদিন ৯০ হাজার পণ্যবাহী ট্রাক এবং কাভার্ড ভ্যান চলাচল করে৷ এর কোনোটিই পুলিশকে চাঁদা না দিয়ে চলতে পারে না৷ বাংলাদেশ ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. রুস্তম আলী খান ডয়চে ভেলেকে জানান, সড়ক বা মহাসড়কে এই ট্রাক চলাচল করতে গিয়ে একেকটি স্পটে ৫০ টাকা থেকে ১,০০০ টাকা পর্যন্ত চাঁদা দিতে হয়৷ এই চাঁদা যেমন হাইওয়ে পুলিশ নেয়, তেমনি মালিক ও শ্রমিক সমিতির নামেও আদায় করা হয়৷ এছাড়া, পণ্যবাহী ট্রাক ট্রাফিক জ্যামে পড়লে একটি গ্রুপ আছে যারা ভাঙচুরের হুমকি দিয়ে চাঁদাবাজি করে৷
রুস্তম আলী খান জানান, বগুড়া থেকে ঢাকা আসতে একটি ট্রাককে অন্তত ১২ জায়গায় চাঁদা দিতে হয়৷ এগুলো নির্দিষ্ট চাঁদা৷ এর উপর হঠাত্ চাঁদাও রয়েছে৷ গড়ে একটি ট্রাককে কমপক্ষে দেড় থেকে দুই হাজার টাকা চাঁদা গুনতে হয়৷ তারা হিসেব করে দেখেছেন যে, সারা বাংলাদেশে পুলিশ ট্রাক এবং কাভার্ড ভ্যান থেকে এক কোটি টাকা চাঁদা আদায় করে৷ আর ঈদ-কোরবানি বা কোনো উত্সবে এই চাঁদা আদায়ে পুলিশ আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠে৷
ট্রাক মালিক শ্রমিকরা এর প্রতিবাদ করেন না কেন? জানতে চাইলে বাংলাদেশ ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক বলেন, প্রতিবাদ করলে হয়রানি আরো বেড়ে যায়৷ তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, পুলিশ ১,০০০ টাকা চাঁদা চাইলো৷ কোনো ট্রাক ড্রাইভার যদি তা না দেন, পুলিশ তাহলে ১৫১ ধারায় ট্রাকের রঙ চটে গেছে বলে একটি মামলা করে দেয়৷ যার জন্য জরিমানা গুনতে হয় প্রায় ৫,০০০ টাকা৷ আবার পচনশীল পণ্যের ট্রাক চাঁদা না দিতে চাইলে অবৈধ পণ্য আছে বলে সব পণ্য রাস্তার পাশে নামাতে বলা হয়৷ তখন কয়েক লাখ টাকার পণ্য রাস্তাতেই পচে৷ রুস্তম আলী খান বলেন, ‘‘আকাশে যত তারা, পুলিশের তত ধারা''৷ তাই তাদের কাছে অসহায় আত্মসমর্পণ ছাড়া আর কিছুই করার থাকে না৷
মালিক সমিতির অফিস সম্পাদক স্বপন মিয়া জানান, পুলিশের নানা বাহানা আছে৷ বডি পরীক্ষা, রঙ পরীক্ষা, ইঞ্জিন পরীক্ষা, ওজন পরীক্ষা আরো কত কি! তিনি বলেন, ট্রাক যেখান থেকে পণ্য বোঝাই করে সেখানে শুরুতেই পুলিশসহ তিনটি গ্রুপকে চাঁদা দিতে হয়৷ তারপর পথে পুলিশের যতগুলো বক্স আছে সবখানে চাঁদা দিতে হয়৷ এরপর ঢাকায় প্রবেশের আগে আরেক দফা চাঁদা দিতে লাগে৷
তবে ঢাকা মহানগর পুলিশের উপ-কশিশনার মাসুদুর রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, চাঁদাবাজি বন্ধ করতে এরই মধ্যে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে৷ মহাসড়কে চাঁদাবাজি বন্ধে সাদা পোশাকে পুলিশের ১৭টি টিম কাজ শুরু করেছে৷ ঢাকা ও ঢাকার আশেপাশে ১৪টি মোবাইল কোর্টও নামছে৷ এছাড়া, বিআরটিএ-র ১৬টি টিম কাজ শুরু করতে চলেছে ২/১ দিনের মধ্যেই৷