আগ্রাসী মিয়ানমার, বাংলাদেশের করণীয় কী?
৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭২৬ আগস্ট বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু সীমান্তে মিয়ানমার বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি) ৮ থেকে ১০ রাউন্ড গুলি ছোড়ে৷ এরপর ২৮ আগস্ট বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার কোণাপাড়ার কলাবাগান সীমান্তে আবারো গুলি ছোড়ে বিজিপি৷
২৭ ও ২৮শে আগস্ট এবং ১ সেপ্টেম্বর মিয়ানমারের হেলিকপ্টার বেশ কয়েকবার বাংলাদেশের আকাশসীমা লঙ্ঘন করে বাংলাদেশের সীমানায় চলে আসে৷ বলা বাহুল্য, ঢাকা এর তীব্র প্রতিবাদ জানায়৷
কক্সবাজারের সাংবাদিক অব্দুল আজিজ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সীমান্তে বিজিপি-র গুলি বর্ষণের ঘটনা প্রায়ই ঘটে৷ তারা নো ম্যান'স ল্যান্ডে রোহিঙ্গাদের টার্গেট করে গুলি ছোড়ার কথা বললেও, সীমান্ত পেরিয়ে এদিকে এসে গুলি ছোড়ায় সীমান্তবর্তী বাংলাদেশি জনপদে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে অচিরেই৷''
জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর-এর হিসাবে, গত ১১ দিনে মিয়ানমার থেকে নির্যাতনের শিকার হয়ে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গার সংখ্যা ৯০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে৷ গত ২৪ ঘণ্টায় ১৪ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী ঢুকেছে বাংলাদেশে৷ ২৪ আগস্ট সীমান্তে নতুন করে রোহিঙ্গাদের ঢল নেমেছে৷ যদিও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের প্রতি মানবিক আচরণের নির্দেশ দিয়েছেন৷
ঈদের ছুটির পর সোমবার, অর্থাৎ প্রথম কর্মদিবসেই সচিবালয়ে রোহিঙ্গা এবং মিয়ানমার নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়েন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত৷ তিনি বলেন, ‘‘মিয়ানমারের রাখাইনে দমন অভিযানের মুখে বাংলাদেশ সীমান্তে নতুন করে রোহিঙ্গাদের ঢল নামায় সরকার কিছুটা হলেও চিন্তিত ও ক্ষুব্ধ৷ আমরা এখন যেটা করছি, সেটা হলো বিশ্ব জনমতে ব্যাপকভাবে নাড়াচাড়া দেওয়ার চেষ্টা করছি৷''
তিনি আরো বলেন, ‘‘আপনারা শুনেছেন, আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ সম্পর্কে কী বলেছেন৷ আমরা মনে করি এটা এমন একটা বিষয়, যেখানে আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপ অত্যন্ত প্রয়োজনীয় হয়ে দাঁড়িয়েছে৷’’
আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘মিয়ানমার চাইছে রোহিঙ্গাদের মধ্যে যারা অস্ত্র হাতে নিয়েছে, তারা যেন আরো সক্রিয় হয়৷ সীমান্তে তারা অস্থিরতা তৈরি করতে চায়৷ এর মধ্য দিয়ে বিশ্বের কাছে যুদ্ধাবস্থা প্রমাণ করতে চায় তারা৷ তাই বাংলাদেশকে মাথা ঠান্ডা রেখে কাজ করতে হবে৷ কোনো ফাঁদে পা দিলে চলবে না৷ কূটনৈতিক তৎপরতা আরো জোরদার করে বিশ্ব জনমত গড়ে তুলতে হবে৷ এছাড়া একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়োজন করার জন্য সবাইকে রাজি করাতে হবে৷ সেই সম্মেলনে কোফি আনান কমিশনের রিপোর্ট নিয়ে কথা বলা যাবে৷ চাপ দেয়াও যাবে৷ কারণ সু চি বলেছেন, তিনি কোফি আনান কমিশনের প্রতিবেদন অনুযায়ী কাজ করবেন৷’’
নিরাপত্তা বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার জেনারে শাহেদুল আনাম খান (অব.) ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘মিয়ানমারের আগ্রাসী মনোভাব স্পষ্ট৷ তবে আমাদের কূটনৈতিক সমাধান খুঁজতে হবে৷ কোনো সামরিক সমাধান নয়৷ অবশ্য মিয়ানমারকে এটাও বুঝিয়ে দিতে হবে যে, বাংলাদেশ তার স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্বের ব্যাপারে কোনো ছাড় দেবে না৷ নিজ ভূখণ্ডের ওপর কোনোরকম অনধিকার চর্চা প্রতিহত করতে সক্ষম বাংলাদেশ৷’’
অন্যদিকে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম সাখাওয়াত হোসেন (অব.) ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘মিয়ানমার এবং রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারের অবস্থান আমার কাছে স্পষ্ট নয়৷ তবে আমি মনে করি, মিয়ানমারের আগ্রাসী আচরণের জবাবে সীমান্তে বাংলাদেশকে কঠোর অবস্থানে যেতে হবে৷ আবার যদি মিয়ানমারের হেলিকপ্টার বাংলাদেশের আকাশসীমা লঙ্ঘন করে, তাহলে সঠিক শিক্ষা দিতে হবে৷''
রোহিঙ্গা প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘‘মিয়ানমারের রাখাইনে জাতিগত নির্মূল প্রক্রিয়া চলছে৷ তারা কথিত বাংলাভাষী, তা সে মুসলিম, হিন্দু বা খ্রিষ্টান যাই হোক না কেন, কাউকে রাখবে না৷ তাই বাংলাদেশের উচিত হবে বিশ্ব শক্তিকে এ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করার আহ্বান জানানো৷''
প্রসঙ্গত, মিয়ানমারে জাতিগত নিপীড়নের মুখে গত কয়েক দশক ধরে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে পাঁচ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা মুসলমান৷ বাংলাদেশ সরকার তাঁদের ফেরত নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে এলেও মিয়ানমার তাতে সাড়া দেয়নি৷
আগ্রাসী মিয়ানমারকে মোকাবিলা করতে বাংলাদেশের আদতে করণীয় কী? জানান নীচের ঘরে৷