আজকের বাচ্চারা ফিট নয়
২১ নভেম্বর ২০১৩৩০ বছর আগে বাবা-মায়েরা এক মাইল দৌড়তে যতটা সময় নিতেন, তাদের বাচ্চারা আজ তার থেকে ৯০ সেকেন্ড, অর্থাৎ প্রায় দেড় মিনিট বেশি সময় নেয়৷ ১৯৭৫ সাল যাবৎ ৯ থেকে ১৭ বছর বয়সের শিশু-কিশোরদের মধ্যে হৃদযন্ত্র সংক্রান্ত ‘ফিটনেস' প্রতি দশ বছরে পাঁচ শতাংশ করে কমে আসছে৷ অ্যামেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন বলছে, এই প্রথম প্রমাণ হলো যে, সারা বিশ্বে শিশুদের ফিটনেস গত তিন দশক ধরে কমছে৷
পেডিয়াট্রিসিয়ানরা তা-তে বিশেষ আশ্চর্য হচ্ছেন না, কেননা শিশুরা আজ আগের চেয়ে কম ‘অ্যাকটিভ' বা সক্রিয়৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংগঠনের পরিসংখ্যান থেকেও দেখা গেছে যে, বিশ্বব্যাপী শিশু-কিশোর-তরুণদের ৮০ ভাগ পর্যাপ্ত কায়িক পরিশ্রম করছে না৷ স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেন, ছ'বছর কিংবা তার কম বয়সের শিশুদের সারাদিনে অন্তত এক ঘণ্টা শারীরিক পরিশ্রম হওয়া উচিত৷ কিন্তু মার্কিন শিশুদের মাত্র এক-তৃতীয়াংশ সেই পরিমাণ এক্সারসাইজ পেয়ে থাকে৷
রানিং ফিটনেস
মার্কিন মুলুকে বহু স্কুলেই ফিজিক্যাল এডুকেশন বা ব্যায়ামের কোনো ব্যবস্থা নেই – প্রধানত বাজেটে কুলোয় না বলেই৷ নতুন যে জরিপটি আলোড়ন তুলেছে, তা-তে নেতৃত্ব দিয়েছেন ইউনিভার্সিটি অফ সাউথ অস্ট্রেলিয়ার এক্সারসাইজ ফিজিওলজিস্ট গ্রান্ট টমকিনসন৷ গবেষকরা রানিং ফিটনেস, বা দৌড় সংক্রান্ত ফিটনেসের ৫০টি জরিপ বিশ্লেষণ করে দেখেন৷ জরিপগুলি ছিল ৯ থেকে ১৭ বছরের শিশু-কিশোরদের নিয়ে৷ এ সব তথ্য ২৮টি দেশের আড়াই কোটি শিশুদের নিয়ে৷ সংগৃহীত হয়েছে ১৯৬৪ থেকে ২০১০ সাল অবধি৷
ছেলে এবং মেয়েদের রানিং ফিটনেসে একই রকমের পরিবর্তন ঘটেছে, তবে এলাকা অনুযায়ী অনেক ফারাক আছে – বলেছেন টমকিনসন৷ ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডে শিশুদের ফিটনেসের অবনতি রোধ করা সম্ভব হয়েছে, অর্থাৎ পরিস্থিতি আর খারাপের দিকে যাচ্ছে না৷ বিগত কয়েক বছরে উত্তর অ্যামেরিকাতেও সে প্রবণতা লক্ষণ করা যাচ্ছে৷ জাপানে ফিটনেস চিরকালই একই পর্যায়ের ছিল, কিন্তু চীনের ক্ষেত্রে ব্যাপক অবনতি ঘটেছে৷
বিশ্বজোড়া ফাঁদ পেতেছ
চীনের ক্ষেত্রে ফিটনেসের অবনতি স্কুলের ছাত্রছাত্রী থেকে শুরু করে কলেজের ছাত্র অবধি, সর্ব পর্যায়ে ছড়িয়েছে৷ চীনের ছাত্রছাত্রীরা ক্রমেই আরো মোটা এবং মন্থর হয়ে পড়ছে৷ তার জন্যে পড়াশুনা আর অ্যাডমিশনের চাপ থেকে শুরু করে গেমিং ও ওয়েব সার্ফিং অবধি সব কিছুকে দোষী করা হচ্ছে৷ কিন্তু বাস্তব এই যে, ২০১০ সালে চীনে কলেজের ছাত্ররা এক কিলোমিটার দৌড়াতে যে সময় নিয়েছে, তা ছিল ২০০০ সালের তুলনায় ১৪ থেকে ১৫ সেকেন্ড বেশি৷ মহিলা ছাত্রীরা ৮০০ মিটার দৌড়াতে গড়ে ১২ সেকেন্ড বেশি সময় নিয়েছে৷
মোটা হলে ব্যায়াম করতে ইচ্ছে করে না; টেলিভিশন দেখতে আর ভিডিও গেম খেলতে সময় চলে যায়; পাড়া আর এতটা নিরাপদ নয়, কিংবা হয়ত খেলার মাঠ নেই – এ সব নানা কারণে বিশ্বব্যাপী শিশু-কিশোরদের শারীরিক গতিবিধি কমছে, বলছেন গবেষকরা৷
এসি/ডিজি (এপি)