আণবিক শক্তি
৩১ ডিসেম্বর ২০১২আণবিক শক্তির স্থান পূরণে নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদন ও এর ব্যবহার বাড়ানোর পথে এগোচ্ছে জার্মানি৷ বিশেষ করে সৌর ও বায়ু চালিত শক্তির দিকে বিশেষ নজর দেয়া হচ্ছে৷ দেশের উত্তরাঞ্চলে একের পর এক উৎপাদন কেন্দ্র গড়ে তোলা হচ্ছে৷ আর সেগুলো পুরো জার্মানিতে ছড়িয়ে দেয়ার জন্য বিতরণ লাইন স্থাপন করা হচ্ছে৷ কেননা নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে উৎপাদিত বিদ্যুতের ভোল্টেজ এত বেশি ওঠানামা করে যে, সাধারণ লাইন দিয়ে সেটা পরিবহন সম্ভব নয়৷ এজন্য নতুন করে ১,৮৩৪ কিলোমিটার বিদ্যুৎ লাইন স্থাপনের পরিকল্পনা করা হয়েছে৷ এর জন্য হাতে রয়েছে আরও দশ বছর৷ ইতিমধ্যে প্রায় আড়াইশো কিলোমিটার লাইন বসানোর কাজ শেষের পথে৷
এসব কাজের জন্য প্রয়োজন হচ্ছে অতিরিক্ত অর্থ৷ তার জন্য মাঝেমধ্যেই বাড়ানো হচ্ছে ভোক্তা পর্যায়ে বিদ্যুতের মূল্য৷ এমনিতেই জার্মানিতে বিদ্যুতের দাম তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি৷ যেখানে বিশ্বের অন্যান্য দেশে এক মেগাওয়াট ঘণ্টা বিদ্যুতের দাম পড়ে গড়ে ২৩ ইউরো করে, সেখানে জার্মানিতে তার মূল্য প্রায় দ্বিগুন, ৪৫ ইউরো৷ তার সঙ্গে নতুন করে যোগ হচ্ছে নবায়নযোগ্য জ্বালানির প্রসার বাড়াতে বাড়তি খরচের বোঝা৷ ফলে সব মিলিয়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোতে বেশ উদ্বিগ্ন জার্মানির ব্যবসায়ী সমাজ৷
জার্মানির জিডিপিতে শিল্পখাতের অবদান প্রায় ২৪ শতাংশ৷ বিদ্যুতের দাম আরও বাড়লে তার প্রভাব গিয়ে পড়বে এই খাতে৷ ‘ফেডারেশন অফ জার্মান চেম্বার্স অফ ইন্ডাস্ট্রি অ্যান্ড কমার্স'-এর প্রধান হান্স-হাইনরিশ ড্রিফটমান বলছেন, ২০১২ সালের তুলনায় ২০১৩ সালে প্রত্যেকটি কোম্পানির বিদ্যুৎ বিল বাড়বে৷ নিজের কোম্পানির উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ২০১২-র তুলনায় ২০১৩ সালে বিদ্যুতের জন্য তাঁকে প্রায় দেড় লক্ষ ইউরো বেশি খরচ করতে হতে পারে৷
নবায়নযোগ্য জ্বালানির জন্য এই বোঝা বহন করার পাশাপাশি আরেকটা সমস্যার কথাও জানালেন ব্যবসায়ীদের নেতা ড্রিফটমান৷ সেটা হচ্ছে, বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার সম্ভাবনা৷ বর্তমানে জার্মানিতে বছরে হয়তো সর্বোচ্চ ১৫ মিনিটের জন্য বিদ্যুৎ নাও থাকতে পারে৷ কিন্তু সৌর ও বায়ু চালিত বিদ্যুৎ দিয়ে এই পরিস্থিতিটা নিশ্চিত করা যাবে কিনা – তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন অনেকে৷
যেমন সিমেন্ট উৎপাদনকারী ডির্ক স্প্যানার৷ তিনি বলছেন, যদি একবার বিদ্যুৎ চলে যায় তাহলে তার কোম্পানিকে পুনরায় উৎপাদনে যেতে অপেক্ষা করতে হয় প্রায় ৭২ ঘণ্টা৷ যন্ত্রপাতিগুলো কর্ম প্রক্রিয়ায় নিয়ে যেতে এই সময়টা লাগে৷ তাই নবায়নযোগ্য জ্বালানির কারণে যদি মাঝেমধ্যেই বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার ভোগান্তি পোহাতে হয় তাহলে তিনি বড় বিপদে পড়বেন বলে জানান স্প্যানার৷
জার্মান সরকার অবশ্য এসব বিষয় চিন্তা করেই সম্ভাব্য সবধরণের ব্যবস্থা গ্রহণের চেষ্টা করছে৷ এজন্য সম্প্রতি তারা নরওয়ের সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে৷ এর ফলে দুই দেশের মধ্যে সংযোগ স্থাপনে নর্থ সি বা উত্তর সাগরের নীচ দিয়ে একটি কেবল লাইন বসানো হবে৷ জার্মানিতে যখন বাতাস আর সূর্যের সরবরাহ কম থাকবে তখনকার বিদ্যুতের চাহিদা মেটানোর জন্য নরওয়ে থেকে জলবিদ্যুৎ আমদানি করা হবে৷ আর এই বিদ্যুতটা আসবে সাগরের নীচের ঐ কেবলের মধ্যে দিয়ে৷
আবার এর উল্টোটা যখন হবে, অর্থাৎ যখন জার্মানিতে বায়ু ও সূর্যের উপস্থিতি বেশি থাকবে তখন উৎপাদিত অতিরিক্ত বিদ্যুৎ সংরক্ষণের জন্য ঐ কেবলের মধ্য দিয়ে নরওয়েতে নিয়ে যাওয়া হবে৷ পরবর্তীতে যখন প্রয়োজন পড়বে তখন সেটা আবার নিয়ে আসা হবে৷
এই কেবল লাইন তৈরিতে ব্যয় হবে প্রায় দেড় থেকে দুই বিলিয়ন ইউরো৷ আর এর নির্মাণকাজ শেষ হবে ২০১৮ সালে৷