আতশবাজির দাপট কমছে
২৮ অক্টোবর ২০১৯শব্দবাজি, যার বিকট আওয়াজ ব্যাপক শব্দদূষণের কারণ হয়, সরকারিভাবে নিষিদ্ধ হয়েছে৷ বেশ কয়েক বছর ধরেই পুলিশ দীপাবলি উৎসবের রাতে সতর্ক থাকে শহরে, জেলায়৷ আইন ভাঙলে ব্যবস্থা নেয়৷ কিন্তু তার পরেও লুকিয়ে চুরিয়ে শব্দবাজির কেনাবেচা এবং ফাটানো পুরোপুরি বন্ধ করা যায়নি৷ সেখানে সব ধরনের আতসবাজি পোড়ানোয় কমবয়সিদের অনাগ্রহ রীতিমত উল্লেখযোগ্য এক ঘটনা৷ সেটাই ঘটছে গত দু-এক বছর ধরে৷ এবারও কলকাতা শহরে আতসবাজির রোশনাই যেন কিছুটা কম৷ তার জায়গায় দেদার বিকোল রঙিন মোমবাতি, নানা বাহারের মাটির প্রদীপ এবং রঙিন আল্পনা, বা রঙ্গোলির সরঞ্জাম৷ এটা সম্ভব হল একটাই কারণে৷ বাড়ির বাচ্চাদের চাপে বড়রাও ক্রমশ হাত গুটিয়ে নিচ্ছেন৷ আতসবাজি পুড়িয়ে পরিবেশের দূষণ একটু একটু করে কমছে৷
১০ বছরের আরভ সরকার বাজি পোড়ানোর ব্যাপারে খুব উৎসাহী ছিল সারা ছোটবেলা৷ কিন্তু ওদের স্কুলে এখন শেখাচ্ছে, বাজির আলো আর শব্দে যেমন মানুষ, বিশেষত বয়স্ক, শিশু এবং অসুস্থদের প্রবল অসুবিধে হয়, তেমনই মনুষ্যেতর প্রাণিদেরও কষ্ট হয়৷ এর সঙ্গে হয় ব্যাপক পরিবেশ দূষণ৷ তাই বাজি না পুড়িয়ে রঙিন আলপনা দিয়ে, বা ঘরে মিষ্টি তৈরি করে দীপাবলি পালনের শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে ওদের৷ আর আতসবাজির জন্য বরাদ্দ টাকায় গরিব বাচ্চাদের মিষ্টি কিনে দিতে বলছে স্কুল থেকে৷ এবং বাচ্চারা প্রায় সবাই সানন্দে মেনে নিয়েছে এই নতুন ধরনের উদযাপন৷ ডয়চে ভেলে-কে জানালেন আরভের মা সোনালি সরকার৷
তবে এই দূষণের ব্যাপারে কলকাতা যতটা সচেতন, দিল্লি তার থেকে বেশি৷ কারণ দিল্লির বাসিন্দারা ভয়াবহ বায়ুদূষণের ভুক্তভোগী৷ যদিও সেটা কিছুটা লাগোয়া রাজ্যে ফসলের গোড়া পোড়ানোর কারণে তৈরি ধোঁয়া থেকে, কিন্তু তার সঙ্গে বাজি পোড়ানোর ধোঁয়া যুক্ত হলে সমস্যা আরও বাড়ে৷ ফলে গত তিন বছর ধরে আর বাজি পোড়ান না দিল্লির বাসিন্দা সৌরাংশু সিনহা৷ তিনি ডয়চে ভেলে-কে জানালেন, শুধু বাজি পোড়ানো বন্ধ করাই নয়, উৎসবের যে বিষয়গুলি পরিবেশ দূষণ ঘটাতে পারে, সেরকম সব আচার আচরণই ওঁরা ধীরে ধীরে বদলে ফেলছেন৷ যেমন দিল্লিতে ওঁদের যে বেঙ্গলি অ্যাসোসিয়েশন, তার দুর্গাপুজোর পর এখন আর কোনও নদীতে প্রতিমা বিসর্জন হয় না৷ পুজোর মাঠেই বড় পরিখা খুঁড়ে, তাতেই মূর্তি ফেলে মাটি চাপা দিয়ে দেওয়া হয়৷
যদিও কলকাতা শহরে এক শ্রেণির মানুষের মধ্যে আতসবাজি পুড়িয়ে জাঁক করা এখনও প্রায় নিজেদের অর্থনৈতিক জাহির করার অন্যতম উপায়৷ কিন্তু শিক্ষা এবং সচেতনতা যেহেতু স্কুলশিক্ষার স্তর থেকে শুরু হয়ে গেছে, সম্পূর্ণ দূষণমুক্ত উৎসব হয়ত অদূর ভবিষ্যতেই সম্ভব হবে৷