আনন্দ আর আশঙ্কার মধ্যেই ঈদ
২৯ জুলাই ২০১৪তার আগে শনিবার খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানান৷ তাঁদের এই ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় দেশের মানুষের মধ্যে আলোচিত হলেও আশার কোনো সঞ্চার করেনি৷ কারণ জনগণ শুভেচ্ছা বিনিময়ের সঙ্গে শুনেছেন ঈদের পরে মাঠের লড়াইয়ের কথা৷
এ কারণে এবার ঈদে গ্রামের বাড়ি যাননি ধানমণ্ডির সানোয়ার হোসেন৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ঈদের পর দেশের পরিস্থিতি কোন দিকে যায় বলা যায় না৷ তাই ঢাকায় থেকে গেছেন৷ ‘‘গত কয়েক বছর ধরেই প্রতি ঈদের পরই আন্দোলন শুরুর ঘোষণা দেয়া হয়৷ আর ডাক আসে প্রতিরোধের৷ মানুষ খুশি মনে ঈদ না করে নতুন সংঘাতের আশঙ্কা নিয়ে ঈদ উদযাপন করেন,'' বলেন তিনি৷
ঢাকার কারওয়ান বাজারে কথা হয় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে৷ ঈদের ছুটিতে ঢাকার ফাঁকা রাস্তায় তিনি মনের আনন্দে ঘুরছেন৷ তাঁর কথা, বছরে দুই ঈদেই এরকম নিরিবিলি ঢাকাকে পাওয়া যায়৷ কোনো যানজট নেই৷ নেই মাঠের রাজনীতির গরম বাতাস৷ তবে ঈদের পর কি হয় তা নিয়ে তাঁর মনে আতঙ্ক আছে৷ তিনি বললেন, ঈদে দুই নেত্রী পরস্পরকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন৷ তবে তা লোক মারফত কার্ডের মাধ্যমে৷ এটা টেলিফোনে বা সরাসরি হলে অনেক বড় খবর হতো, বলে মনে করেন তিনি৷ তাঁর কথা, নেত্রীরা শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন কিন্তু শুভ ইচ্ছা তাঁদের মধ্যে আছে বলে মনে হয় না৷ কারণ তাঁরা ঈদের পরই লড়াইয়ে নামার কথা বলছেন৷
অনেকে বেতন, বোনাস পাননি
ঢাকার তোবা গার্মেন্টস-এর শ্রমিকরা আন্দোলন, ঘেরাও করেও ঈদের বেতন-বোনাস আদায় করতে পারেননি৷ রবিবারও তাঁরা বিজিএমইএ ভবনের সামনে ঠাঁয় বসেছিলেন৷ শুধু তোবা নয়, আরো অনেক গার্মেন্টস মালিক কথা রাখেননি৷ প্রকাশ্যে মন্ত্রীর সামনে ২৬ জুলাইয়ের মধ্যে বেতন, ভাতা পরিশোধের প্রতিশ্রুতি দিলেও তা ভুলে গেছেন৷ রবিবার বিজিএমইএ ভবনের সামনে তোবা গার্মেন্টস এর শ্রমিকদের কেউ কেউ তাদের সন্তানদেরও নিয়ে এসেছিলেন৷ কিন্তু খালি হাতেই ফিরে গেছেন৷ তাদের অনেককে কাঁদতেও দেখা যায়৷
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক ড. হেলাল উদ্দিন মনে করেন, ঠকানো যাদের মানসিকতা, তাদের কাছে ঈদের গুরুত্ব নেই৷ গুরুত্ব নেই বেতন, বোনাস না পাওয়া শ্রমিকের কান্নার৷
দারিদ্র্য নিয়ে ব্যবসা
এবার দারিদ্র্যকে নিয়ে উপহাস করেছে বাংলাদেশের একটি মোবাইল ফোন কোম্পানি৷ তারা গ্রাহকদের কাছ থেকে বঞ্চিত শিশুদের ঈদের জামা দেয়ার কথা বলে টাকা নিয়েছে৷ পোশাকও দিয়েছে৷ তবে তাদের প্রতিষ্ঠানের লোগো আর রংয়ে৷ ঈদের পোশাক দেয়ার নামে তারা ২৫,০০০ দরিদ্র শিশুকে তাদের পণ্যের বিজ্ঞাপন বানিয়েছে৷ এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞানের অধ্যাপক মাহবুবা নাসরিন বলেন, ‘‘ঈদ সাম্য আর ভ্রাতৃত্বের কথা বললেও তা বাস্তবে দেখা যায় না৷ ঈদ অনেক সময় সামাজিক অসাম্যকেই আরো বড় করে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়৷ ত্যাগের মানসিকতা এখনো গড়ে ওঠেনি৷ ব্যবসায়ী, রাজনৈতিক দল সবাই যার যার ফায়দা লুটছে৷''