আন্তর্জাতিক নারী দিবসের শততম বার্ষিকী
১১ মার্চ ২০১১শুরুটা হয়েছিল ঠিক এভাবে৷ নারীদের ভোটাধিকার আদায়ের লক্ষ্যে বেশ কিছু নারী বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন ১৯০০ সালে অ্যামেরিকায়৷ প্রতি বছরই কোন একটি সময়ে বিক্ষোভ প্রদর্শিত হতে থাকে৷ এরপর ১৯০৮ সালে প্রায় পনেরো হাজার মহিলা নিউ ইয়র্ক সিটিতে মিছিল বের করেন৷ দাবি ছিল কাজের নির্দিষ্ট সময় স্থির করা, বেতন বাড়ানো এবং ভোটাধিকার৷ এরপর ১৯০৯ সালে অ্যামেরিকার সোশ্যালিস্ট পার্টি ২৮শে ফেব্রুয়ারি ন্যাশনাল ওমেন'স ডে অর্থাৎ জাতীয় নারী দিবস নামে একটি দিন ধার্য করে৷
১৯১০ সালে ডেনমার্কের রাজধানী কোপেনহেগেনে মহিলাদের জন্য একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়োজন করা হয়৷ জার্মানির সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটিক দলের ক্লারা সেটকিন সর্বপ্রথম প্রতি বছর একটি নির্দিষ্ট দিনে আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালনের কথা বলেন৷ কীভাবে তা পালন করা যেতে পারে, তাও বিশদভাবে উপস্থিত সকলে বুঝিয়ে দেন৷ সেই সম্মেলনে মাত্র ১৭টি দেশ থেকে প্রায় দেড়শ জন মহিলা উপস্থিত ছিলেন৷ এরা সবাই কোন না কোনভাবে বিভিন্ন সংগঠন, রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত, জড়িত বা তার প্রতিনিধিত্ব করছিলেন৷ তখন সাদরে গ্রহণ করা হয় ক্লারা সেটকিনের প্রস্তাব৷ ১৯১১ সালে প্রথম বারের মত আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালনের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়৷
এরপর আসলো বহু প্রতীক্ষিত ১৯১১ সালের মার্চ মাস৷ তখনও তারিখ ঠিক করা হয়নি৷ প্রথমবারের মত অস্ট্রিয়া, ডেনমার্ক, জার্মানি এবং সুইজারল্যান্ড ১৯শে মার্চ পালন করে আন্তর্জাতিক নারী দিবস৷ প্রতিটি দেশে ব়্যালি বের করা হয়৷ তাতে অংশগ্রহণ করে প্রায় দশ লক্ষ মানুষ৷
১৯১৩ এবং ১৯১৪ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ঠিক আগে রাশিয়া ফেব্রুয়ারি মাসে আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন করে৷ ১৯১৩ সালে আলোচনার মাধ্যমে ৮ই মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে স্থির করা হয়৷ এরপর থেকে ৮ই মার্চের অর্থ হল আন্তর্জাতিক নারী দিবস৷
আন্তর্জাতিক নারী দিবসের একশো বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল বলেন,‘‘আমি এখনো সাবেক পূর্ব জার্মানিতে আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালনের কথা মনে করতে পারি৷ তখনো নারীদের সব ক্ষেত্রে পূর্ণ অধিকার ছিল না৷ যদিও সবাই কাজ করতো৷ বিশেষ করে রাজনৈতিক অঙ্গনে নারীদের দেখাই যেত না৷ আমরা বাচ্চারা এই দিনে মাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানাতাম৷ পৃথিবীর অনেক দেশে মহিলাদের পূর্ণ স্বাধীনতা ছিল না৷ বাইরে একা যাওয়ার অনুমতি এরা কেউ পেত না৷ কোনো ধরণের সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতাও এদের ছিল না৷ কেউ যদি কাজ করতে যেত, তাহলে সঙ্গে একজন পুরুষ থাকতে হতো৷ সেকারণেই আমাদের সবার জন্য আন্তর্জাতিক নারী দিবস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷ বিশ্বায়নের এই যুগে কোনো মহিলা পিছিয়ে থাকতে পারে না, থাকবে না৷ যার যে অধিকার প্রাপ্য, তা তাকে দিতে হবে৷ আর একারণেই আমাদের উচিত দুস্থ এসব মহিলার সাহায্যে এগিয়ে যাওয়া৷''
আজ একশ বছর পরে শুধু হাতে গোনা কয়েকটি দেশ নয়, বিশ্বের প্রতিটি দেশেই পালন করা হচ্ছে আন্তর্জাতিক নারী দিবস৷ আফগানিস্তান, আর্মেনিয়া, আজেরবাইজান, বেলারুশ, বুর্কিনা ফাসো, কম্বোডিয়া, চীন, কিউবা, জর্জিয়া, গিনি বিসাউ, ইরিত্রিয়া, কাজাখস্তান, কির্গিজিস্তান, লাওস, মাদাগাস্কার, মোলদাভিয়া, মঙ্গোলিয়া, মন্টেনেগ্রো, নেপাল, রাশিয়া, তাজিকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান, উগান্ডা, ইউক্রেন, উজবেকিস্তান, ভিয়েতনাম, এবং জাম্বিয়ায় ৮ই মার্চ সরকারি ছুটি৷ এর মধ্যে নেপাল, চীন এবং মাদাগাস্কারে শুধু মহিলারা ছুটি পান৷
শুরু হয়েছে নতুন একটি শতাব্দী৷ যদি একশো বছর আগে দৃষ্টি ফেরানো যায়, তাহলে বলতেই হবে পরিবর্তন হয়েছে লক্ষ্য করার মত৷ যেখানে নারীদের ভোটাধিকার পর্যন্ত ছিল না সেখানে আজ বেশ কিছু দেশে নেতৃত্ব দিচ্ছে নারীরা৷ বেশ সাফল্যের সঙ্গেই তারা তাদের কাজ করে যাচ্ছেন৷ কেউ প্রেসিডেন্ট হয়েছেন, কেউ বা প্রধানমন্ত্রী৷ ফার্স্ট লেডিরাও আজ আর পিছিয়ে নেই৷ এদের সবাইকে সাহস যুগিয়েছে আন্তর্জাতিক নারী দিবস৷
প্রতিবেদন: মারিনা জোয়ারদার
সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন