1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ছাত্রীর আত্মহনন

৩১ মে ২০১২

আপত্তিকর ছবি তুলে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয় সাবিয়া সুলতানা সাথীর সহপাঠীরা৷ এরপর স্থানীয় দুই সাংবাদিককে সাক্ষাত্কার দিতে না চাইলে, ছবি ও ভিডিও পত্রিকায় প্রকাশের হুমকি দেয়া হয়৷ হুমকিতে সন্ত্রস্ত হয়েই সে বেছে নেয় আত্মহত্যার পথ৷

https://p.dw.com/p/1558J
ছবি: AP

যেভাবে আপত্তিকর ভিডিও ধারণ এবং ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়া

সাবিয়া সুলতানা সাথী (১৫)৷ বাগেরহাট আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে আগামী বছর এসএসসি পরীক্ষা দেয়ার কথা ছিল তার৷ হয়তো কথা ছিল বড় হয়ে বাবা-মায়ের স্বপ্নও পূরণ করবে একদিন৷ কিন্তু এ সবের কিছুই হল না৷ কোনো কথাই রাখা আর হল না তার৷ অপমান বুকে চেপে কৈশোর না পেরোনো এ বালিকা বেছে নিয়েছে আত্মহননের পথ৷

কী ঘটেছিল ছোট্ট এই মেয়েটির জীবনে? কেন তাকে বেছে নিতে হল মৃত্যুর পথ? এ বিষয়েই বললেন বাগেরহাটের স্থানীয় সাংবাদিক এম আকবর টুটুল৷

‘‘গত ২৬ মার্চ বিদ্যালয় থেকে যখন স্টেডিয়ামে স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠান হচ্ছিল, সে সময় বিদ্যালয় বন্ধ ছিল৷ সেই বন্ধ বিদ্যালয়েই সাথীকে নিয়ে তার কয়েকজন সহপাঠী বিদ্যালয়ের একটি কক্ষে আসে৷ সেখানেই ইচ্ছার বিরুদ্ধে সাথীকে দশম শ্রেণীর ছাত্র পিয়াল কিছু কিস (চুমু) করে৷ ভিডিওতে আমরা যা দেখলাম তাতে বোঝা যাচ্ছে যে, জোর করেই তাকে আপত্তিকর কিস এবং তার সাথে অন্যান্য কিছু অশ্লীল আচরণ করে৷''

ঘটনাটি শুধু এখানেই শেষ নয়৷ টুটুল জানান যে, ‘‘সাথীকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছনা করার এ ঘটনাটি মোবাইল ফোনে এসময় ভিডিও করে এবং ছবি তোলে পিয়ালের অন্য কয়েকজন বন্ধু৷ তারপর সেই ছবি ছড়িয়ে দেয়া হয় ইন্টারনেটে৷''

এইটুকু হলো সাথীর অপমানের প্রথম অধ্যায়৷ সহপাঠীদের হাতে লাঞ্ছিত হবার পর স্কুল থেকে শাস্তিমূলক ব্যাবস্থা নেয়া হয়৷ ‘‘সেই শাস্তিতে অপরাধী ছাত্রদের সহ সাথীকেও স্কুলে আসতে নিষেধ করা হয় এবং এসএসসি পরীক্ষার জন্য প্রাক-নির্বাচনী ও নির্বাচনী পরীক্ষায় অংশ নিতে বারণ করা হয়৷ তবে তারা মেধাবী হওয়ায়, তাদের স্কুল থেকে বহিষ্কার না করে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেবার সুযোগ রাখা হয়'', জানান এম আকবর টুটুল৷

বিদ্যালয়ের এই শাস্তির পর বাড়িতেই বন্দি ছিল মেয়েটির জীবন৷ কিন্তু ঘরবন্দি সে জীবনের শান্তিটুকুও কেড়ে নিয়েছে দু'জন সাংবাদিকের হুমকি৷

অপমান বুকে চেপে আত্মহনন...

গত ১৫-২০ দিন আগে মাই টিভি'র বাগেরহাট প্রতিনিধি রিফাত আল মাহমুদ (৩২) এবং খুলনা থেকে প্রকাশিত দৈনিক জন্মভূমি পত্রিকার বাগেরহাট ব্যুরো প্রধান মোল্লা আব্দুর রব সাথীর বাসায় যান এবং তার সাক্ষাত্কার নিতে চান৷ কিন্তু সে সাক্ষাত্কার না দেয়ায় তার বাবাকে দুই সাংবাদিক হুমকি দিয়ে বলে যে, তাদের কাছে সব ছবি ও ভিডিও আছে৷ তারা এগুলো পত্রিকা ও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেবে৷

সাংবাদিকদের এই হুমকির পর সাথী মানসিক ভাবে আরো ভেঙে পড়ে৷ আর তার সেই মানসিক অবস্থারই একটি ছবি পাওয়া যাবে দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকার একটি প্রতিবেদনে৷

সাথীর ঘনিষ্ঠ বান্ধবির বরাত দিয়ে দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকায় ছাপা হয়েছে সাথীর বক্তব্য৷ মৃত্যুর ঠিক কিছুক্ষণ আগে সাথীর এক বান্ধবী গিয়েছিল তার সঙ্গে দেখা করতে৷ সে সময় সাথী তার বান্ধবীকে বলছিল, ‘‘ঘটনার জন্য দায়ী ছেলেদের বাড়িতে সাংবাদিক যায় না, আমার বাড়িতে সাংবাদিক আসে৷ আমি কোথাও বের হতে পারি না৷ বাড়ির মধ্যেও অনেক কথা শুনতে হয়৷ আমি আর পারছি না৷ আমার মনে হয় মরে যাওয়াই ভালো৷''

তারপর বান্ধবী চলে যাওয়ার পর, গত বৃহস্পতিবারই সকাল ১১টার দিকে স্যাভলন পান করে আত্মহত্যা করে সাথী৷ এ সময় সাথীর মা-বাবা ছিল কর্মক্ষেত্রে এবং ভাই ছিল অফিসে৷ বাসায় সে ছিল একা৷

মামলা দায়ের, দুই সাংবাদিক সহ ছয়জন আসামী...

এ ঘটনায় মামলা দায়ের করেছে সাথীর বাবা শেখ আলমগীর৷ বাগেরহাট মডেল থানার উপ-পরিদর্শক এবং এই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আবু জিহাদ খানের জানান, ‘‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে৷ দুই সাংবাদিক এবং চার ছাত্র সহ মোট ছয় জনকে আসামী করা হয়ছে৷ এ পর্যন্ত দুই জন (ছাত্র) আসামী আদালতে এসে আত্মসমর্পন করেছে৷ আর বাকি দুই সাংবাদিক এবং দুই ছাত্রকে গ্রেপ্তারের তৎপরতা চলছে৷''

সাথীর মৃত্যুর পর বাগেরহাটে প্রতিবাদ করেছে ছাত্র ইউনিয়ন ও মহিলা পরিষদ সহ অন্য কয়েকটি সংগঠন৷ এছাড়া মানব বন্ধন এবং প্রতিবাদ কর্মসূচিও পালন করেছে কিছু সংগঠন৷

প্রতিবদেন: আফরোজা সোমা

সম্পাদনা: দেবারতি গুহ

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য