আফ্রো-অ্যামেরিকান যে ব্যক্তিদের কথা অবশ্যই জানা উচিত
যুক্তরাষ্ট্রে শ্বেতাঙ্গদের হাতে কৃষ্ণাঙ্গদের বিদ্বেষ ও নির্যাতনের ইতিহাস বহু পুরনো৷ এখানে কয়েকজন আফ্রো-অ্যামেরিকান ব্যক্তির কথা তুলে ধরা হলো, যাদের নাম গত তিনশ বছরের ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা আছে৷
ক্রিসপাস অ্যাটাকস (১৭২৩-১৭৭০)
তাঁর জীবদ্দশায় যুক্তরাষ্ট্র বলে কোনো দেশ ছিল না৷ ১৭৭০ সালের ৫ মার্চ ব্রিটিশ সেনাদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে যে পাঁচ বেসামরিক মানুষ নিহত হন তিনি তাদের একজন৷ এটি ‘বস্টন হত্যাকাণ্ড’ নামে পরিচিত৷ অ্যামেরিকান বিপ্লবে তিনি কৃষ্ণাঙ্গ শহিদ হিসেবে সমাদৃত৷ তার বাবা আফ্রিকান এবং মা ভারতীয়৷ তিনি একজন পলাতক ক্রীতদাস ছিলেন৷
বেনজামিন ব্যানেকার (১৭৩১-১৮০৬)
এই গণিতজ্ঞ ও জ্যোতির্বিদ প্রথম আফ্রো-অ্যামেরিকান বিজ্ঞানী হিসেবে পরিচিত৷ তিনি মৃত্যুদণ্ড প্রথা বিলুপ্ত করার পক্ষে সোচ্চার ছিলেন এবং সাবেক প্রেসিডেন্ট থমাস জেফারসনের সমালোচক ছিলেন, যিনি শ্বেতাঙ্গদের চেয়ে কৃষ্ণাঙ্গদের মানসিকতাকে নিকৃষ্ট ভাবতেন৷
ফিলিস হুইটলে (১৭৫৩-১৭৮৪)
আফ্রিকায় জন্ম নেয়া এই নারীকে মাত্র সাত বছর বয়সে ক্রীতদাস হিসেবে বিক্রি করা হয়েছিল৷ তিনি তার মালিকের কাছে লেখাপড়া শিখেছিলেন৷ ১৩ বছর বয়সে তার প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয় এবং ১৭৭৩ সালে তিনি প্রথম আফ্রো-অ্যামেরিকান হিসেবে কবিতা সংকলন বের করেন৷ জর্জ ওয়াশিংটন তার কবিতার প্রশংসা করে বাসায় আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন৷
জেমস ফোর্টেন (১৭৬৬-১৮৪২)
সমুদ্র দেখা এবং জাহাজের পাল তৈরিতে প্রশিক্ষণ নেয়ার শখ ছিলো ফিলাডেলফিয়ার জেমস ফোর্টেনের৷ ১৭৯৮ সালে পাল তৈরির যে কারখানায় তিনি শিক্ষানবিশ হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন, তা কিনে নেন এবং ধনী হয়ে ওঠেন৷ ক্রীতদাস বহনকারী কোনো জাহাজে তিনি পাল বিক্রি করতেন না৷ যুক্তরাষ্ট্রের কৃষ্ণাঙ্গদের নাগরিক অধিকার আদায়ের আন্দোলনে তার অর্থ-সম্পদকে কাজে লাগিয়েছিলেন৷ সর্বকালের সেরা একশ আফ্রো-অ্যামেরিকানের তালিকায় তার নাম আছে৷
সোজার্নার ট্রুথ (১৭৯৭-১৮৮৩)
ইসাবেলা বোমফ্রি নামে ক্রীতদাস হিসেবে জন্ম৷ ১৮২৭ সালে সন্তানসহ পালিয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত কঠোর শাস্তি ভোগ করতে হয়েছিল তাকে৷ দাসপ্রথার অবসান এবং নারী অধিকার নিয়ে আইনি লড়াই লড়েছেন, সেসময় তার নতুন নাম হয় সোজার্নার ট্রুথ৷ ১৮৫১ সালে বর্ণ ও লিঙ্গবৈষম্যের বিরুদ্ধে তার বিখ্যাত বক্তব্য ছিল ‘আমি কি নারী নই?’ তিনি যৌনাঙ্গচ্ছেদেরও বিরোধিতা করেছিলেন৷
মারিয়া ডাব্লিউ স্টুয়ার্ট (১৮০৩-১৮৭৯)
মুক্ত মানুষ হিসেবে জন্ম৷ একাধারে সাংবাদিক, মৃত্যুদণ্ডবিলোপপন্থি, প্রভাষক এবং নারী অধিকার আইনজীবী৷ তিনিই প্রথম আফ্রো-অ্যামেরিকান, যিনি শ্বেতাঙ্গ-কৃষাঙ্গ নারী-পুরুষের সামনে বক্তব্য দিয়েছিলেন৷ বলেছিলেন, ‘‘গায়ের রং নারী-পুরুষ নির্ধারণ করে না, আত্মা যে নীতির দ্বারা গঠিত, তা নির্ধারণ করে৷’’
হ্যারিয়েট টাবম্যান (১৮২০-১৯১৩)
১৮৪৯ সালে মালিকের কাছ থেকে পালিয়ে যান ক্রীতদাস হ্যারিয়েট৷ ‘পাতাল রেলের কন্ডাকটার’ হিসেবে বিখ্যাত হয়ে ওঠেন৷ আসলে ক্রীতদাসদের মুক্ত করতে ‘সেফ হাউজ’ তৈরি করতেন তিনি৷ পরবর্তীতে দরিদ্র ক্রীতদাসদের সাহায্য করতেন তিনি৷ ক্রীতদাস ব্যবসায়ী সাবেক প্রেসিডেন্ট অ্যান্ড্রু জ্যাকসনের বদলে ২০ ডলারের নোটে টাবম্যানের ছবি ব্যবহার করা হবে৷
বুকার টি ওয়াশিংটন (১৮৫৬-১৯১৫)
গৃহযুদ্ধ তাকে দাসত্ব থেকে মুক্তি দিয়েছিল৷ তিনি ছিলেন প্রভাবশালী শিক্ষক, লেখক এবং অনেক মার্কিন প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা৷ আফ্রিকান-অ্যামেরিকানদের শিক্ষার মাধ্যমে এবং উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেদের মানোন্নয়নের পরামর্শ দিতেন তিনি৷ তিনিই প্রথম আফ্রো-অ্যামেরিকান যিনি ১৯০১ সালে কোনো প্রেসিডেন্টের সাথে খাবার খেয়েছিলেন৷
আইডা বি ওয়েলস-বার্নেট (১৮৬২-১৯৩১)
গৃহযুদ্ধের আগে ক্রীতদাস ছিলেন বাবা-মা৷ তিনি একজন প্রভাবশালী সাংবাদিক, শিক্ষাবিদ, নাগরিক অধিকার আন্দোলনের নেতা এবং ‘ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য অ্যাডভান্সমেন্ট অফ কালার্ড পিপল’ বা এনএএসিপি-র সহ-প্রতিষ্ঠাতা৷
জেমস ওয়েলডন জনসন (১৮৭১-১৯৩৮)
নিউ ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম আফ্রো-অ্যামেরিকান অধ্যাপক, যিনি প্রেসিডেন্ট থিওডর রুজভেল্টের অধীনে কূটনীতিক ছিলেন৷ তিনি এনএএসিপি’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন৷ বর্ণবিদ্বেষ এবং কৃষ্ণাঙ্গ হত্যার বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন৷ তার লেখা কবিতা ‘লিফট এভরি ভয়েস অ্যান্ড সিং’ পরবর্তীতে ‘আফ্রো-অ্যামেরিকান জাতীয় সংগীতে রূপ নেয়৷
ডাব্লিউ ই বি ডু বোইস (১৮৬৮-১৯৬৩)
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট ডিগ্রি পাওয়া প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ, যিনি একাধারে এনএএসিপি’র প্রতিষ্ঠাতা, সাংবাদিক, ইতিহাসবিদ এবং নাগরিক অধিকার কর্মী৷ ১৮৯৫ সালে তিনি ওই ডিগ্রি পান৷ দাস-বাণিজ্যের উপর তিনি থিসিস লিখেছিলেন৷ মেধাবী শিক্ষার্থী হয়েও যুক্তরাষ্ট্রের কোনো শীর্ষ প্রতিষ্ঠানে যোগ দেননি৷ ১৯১৯ সালে প্যারিসে প্রথম ‘এক্সিবিট অফ অ্যামেরিকান নিগ্রোস’ প্রদর্শনীর আয়োজন করেন৷
রোজা পার্কস (১৯১৩-২০০৫)
১৯৫৫ সালে একটি বাসে শ্বেতাঙ্গ ব্যক্তির জন্য নিজের আসন ছাড়তে রাজি না হওয়ায় গ্রেপ্তার করা হয়েছিল তাকে৷ এই ঘটনা ‘মন্টগামরি বাস বয়কট’ আন্দোলনে রূপ নেয়৷ এর সূত্র ধরে মার্টিন লুথার কিং নাগরিক অধিকার আন্দোলনে সোচ্চার হন৷ ‘নাগরিক অধিকারের প্রথম নারী’ এবং ‘স্বাধীনতা আন্দোলনের জননী’ হিসেবে অমর হয়ে আছেন তিনি৷