আবদালা: কিউবার বিস্ময় জাগানো ভ্যাকসিন
২৮ জুন ২০২১সম্প্রতি এক টুইট বার্তায় কিউবার প্রেসিডেন্ট মিগুয়েল দিয়াজ-কানেলে আবদালার প্রশংসা করতে গিয়ে বলেন, ‘‘দুটি মহামারিতে (করোনাভাইরাস ও যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা) আক্রান্ত হয়েও ফিনলে ইনস্টিটিউট ও জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি কেন্দ্রে আমাদের বিজ্ঞানীরা দুটি কার্যকর ভ্যাকসিন উপহার দিয়েছেন।''
৬০ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক অবরোধের শিকার কিউবা৷ ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জের দেশটি অবরোধের বিরুদ্ধে যেভাবে লড়েছে, করোনার বিরুদ্ধেও যেন লড়ছে সেভাবেই৷ এক কোটি দশ লাখ মানুষের দেশটি মহামারির শুরুতেই রাশিয়া বা চীন থেকে ভ্যাকসিন আমদানি না করার সিদ্ধান্ত নেয়৷ জাতিসংঘের কোভ্যাক্স উদ্যোগের সহায়তা না নেয়ারও সিদ্ধান্ত নেয় তারা৷ পরমুখাপেক্ষী না হয়ে নিজেদের সামর্থ্যে ভ্যাকসিন তৈরি করে দেশবাসীকে করোনা থেকে রক্ষার সেই সিদ্ধান্ত এখন সফল বলে দাবি করছে কিউবা৷ সে দেশের স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে, আবদালা নামের ভ্যাকসিনটি বায়োনটেক-ফাইজার এবং মডার্নার মতোই করোনার বিরুদ্ধে শতকরা ৯২.২৮ ভাগ কার্যকর৷ তবে এ টিকা তিন ডোজ নিতে হয়৷
ভ্যাকসিনের নামে দেশপ্রেম
কিউবার স্বাধীনতা সংগ্রামের বীর সৈনিক, জাতীয় বীর, কবি হোসে মার্তির কাব্যের চরিত্র আবদালা৷ আবদালাও ছিলেন বীর যোদ্ধা৷ দেশকে রক্ষা করতে নিজের সীমিত সামর্থে পূর্ণ আস্থা রেখেই যুদ্ধে গিয়েছিলেন৷ কিউবা মনে করছে, ভ্যাকসিনের নাম আবদালা রাখা পুরোপুরি সার্থক, কারণ, হোসে মার্তির সেই চরিত্রের মতো ভ্যাকসিন আবদালাও করোনা নামের ভয়ঙ্কর শত্রুকে রুখে দিতে সক্ষম৷
আসল নায়ক বিজ্ঞানী নিয়েতো
আবদালা লাতিন অ্যামেরিকা অঞ্চলে তৈরি প্রথম করোনা ভ্যাকসিন৷ সমাজতান্ত্রিক দেশ কিউবা এমন একটি ভ্যাকসিন উদ্ভাবনের মূল কৃতিত্ব দিচ্ছে বিজ্ঞানী গেরার্দো এনরিকে গুইলেন নিয়েতোকে৷ হাভানার সেন্টার ফর জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি (সিআইজিবি)র বায়োমেডিকেল রিসার্চের পরিচালক নিয়েতোর নেতৃত্বেই এ মুহূর্তে সবচেয়ে কার্যকর ভ্যাকসিনগুলোর সমমানের ভ্যাকসিনটি তৈরি করেছেন কিউবান বিজ্ঞানীরা৷ এ সাফল্য খুব সাড়ম্বরে উদযাপনও করেছে কিউবা৷ গত রোববার বাবা দিবসে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দেখানো হয় নিয়েতোকে নিয়ে তৈরি বিজ্ঞাপন৷ সেখানে ৫৮ বছর বয়সি বিজ্ঞানীর সন্তান জানান, তার বাবা পরিবার এবং দেশের মানুষের জন্য কিভাবে অক্লান্ত পরিশ্রম করে চলেছেন৷ কিউবায় জাতীয় বীরের মর্যাদা পাওয়া নিয়েতো জানান, দীর্ঘদিন ধরে সপ্তাহের প্রতিটি দিন ভোর থেকে মাঝরাত পর্যন্ত সহকর্মীদের নিয়ে কাজে ডুবে থেকে এখন তিনি তৃপ্ত, কারণ, আবদালার কার্যকারিতা রীতিমতো বিস্ময়কর৷ নিয়েতোর ভাষায়, ‘‘ভ্যাকসিনটা যে ভালো করবে তা আমরা জানতাম, কিন্তু ফলাফল এত ভালো হবে তা আসলেই ভাবিনি৷''
করোনার বিরুদ্ধে কিউবার যুদ্ধ
গত মে মাসে দেশে তৈরি দুটি ভ্যাকসিন নিয়ে টিকা দেয়ার কর্মসূচি শুরু করা হয়৷ অন্য ভ্যাকসিনটির নাম সোবেরানা টু৷
গুইলেন নিয়েতো জানান, এ পর্যন্ত একটি করে ডোজ পেয়েছেন কিউবার ২২ লাখ মানুষ আর ১৭ লাখ মানুষকে দ্বিতীয় ডোজও দেয়া শেষ৷ এছাড়া নয় লাখ মানুষ ইতিমধ্যে তিনটি ডোজই পেয়ে গেছেন৷
আবদালার চাহিদা
আবদালার তিনটি ডোজ৷ দু সপ্তাহ পর পর নিতে হয় একেকটি ডোজ৷ আগামী আগস্টের মধ্যে দেশের অন্তত ৭০ ভাগ মানুষকে তিন ডোজ টিকা দেয়ার লক্ষ্য স্থির করেছে কিউবা৷ দেশের মানুষকে দেয়ার পাশাপাশি এ টিকা রপ্তানির উদ্যোগও চলবে৷
আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে একটি বিশেষজ্ঞ প্যানেল আবদালার কার্যকারিতা চূড়ান্তভাবে পরীক্ষা করবে৷ তাদের অনুমোদন পেলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডাব্লিউএইচও)র অনুমোদন চাইবে কিউবা৷ ডাব্লিউএইচও-র সবুজ সংকেত পেলেই শুরু হবে রপ্তানি৷ বলিভিয়া, জ্যামাইকা, ভেনিজুয়েলা, আর্জেন্টিনা এবং মেক্সিকো জানিয়েছে তারাও এই টিকা পেতে আগ্রহী৷
অলিভার পিপার/ এসিবি