আবারো সেই এক পুরনো গল্প...
২৭ জুলাই ২০১৫মার্কিন ম্যাগাজিন ‘মারি ক্লেয়ার'-এ বিষয়টি একটি প্রতিবেদন প্রকাশের পর পত্রিকাতেও নাসিমা আক্তারকে নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে৷ মারি ক্লেয়ার-এ নাসিমাকে বাংলাদেশের প্রথম নারী সার্ফার হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়েছে৷ সানডে টাইমস ও দ্য অস্ট্রেলিয়ানের প্রতিবেদনের ভাষ্য একই৷ তাদের শিরোনামটি এমন, ‘বাংলাদেশের সার্ফার তরুণী মুসলিম ট্যাবুকে ডুবিয়ে দিচ্ছে'৷
ইংরেজি ছাড়াও বিভিন্ন ভাষায় নাসিমা আক্তারকে নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে৷ কারণ পশ্চিমা বিশ্বের কাছে মুসলিম প্রধান বাংলাদেশের একটি মেয়ে সার্ফিং করে সেটা বেশ বড় খবর৷ বাংলাদেশেও মূল ধারার অন্তত একটি পত্রিকা ও একটি অনলাইন সংবাদমাধ্যমে এ সংক্রান্ত খবর প্রকাশ হতে দেখেছি৷
এ সব খবরের সূত্র ধরে ফেসবুকে কেউ কেউ নাসিমা আক্তারের প্রশংসা করেছেন৷ করভি রাকসান্দ ধ্রুব ফেসবুকে নাসিমার কয়েকটি ছবি আপলোড করে লিখেছেন, ‘‘১৮ বছরের এই মেয়েটার নাম নাসিমা আক্তার৷ যে সমাজে মেয়েদের ওড়না ছাড়া বের হওয়াতেই পাড়ায় রসালো কথা রটে যায়, বাড়ির পাশের পুকুরে গোসলে নামলে চারিধারে বারবার আতংক নিয়ে নজর রাখতে হয় কেউ দেখে ফেললো নাকি, সেখানে এই মেয়েটি বাংলাদেশের প্রথম মহিলা সার্ফার৷'' তিনি নাসিমাকে দাঁড়িয়ে সম্মান জানানোর কথাও লিখেছেন৷
নাসিমাকে নিয়ে এই হৈচৈ এর মধ্যে প্রতিবেদন তৈরির জন্য আমাদের ঢাকা প্রতিনিধি যখন নাসিমার সঙ্গে কথা বলেন তখন তিনি জানতে পারেন যে নাসিমা আর সার্ফিংয়ের জগতে নেই! হ্যাঁ, বছর দেড়েক আগেই নাকি তিনি সার্ফিং ছেড়ে দিয়েছেন৷ আমাদের ঢাকা প্রতিনিধি জানিয়েছেন, বছর দেড়েক আগে নাসিমার দরিদ্র পিতা নাকি মেয়ের বিয়ে দেন৷ সেই থেকে সার্ফিং বিচ্ছিন্ন নাসিমা৷
এমন কথা, গল্প আর কত শুনবো? বিয়ে করে মেয়েরা, তরুণীরা তাদের কাজকর্ম ছেড়ে দিচ্ছে বা ছাড়তে বাধ্য হচ্ছে৷ এই আধুনিক যুগে এসেও কেন এমনটা হচ্ছে? জানি, বাংলাদেশে নারীর অনেকটা ক্ষমতায়ন হয়েছে৷ মেয়েরা এখন ছেলেদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে লড়ছে৷ পাবলিক পরীক্ষায় মেয়েরা ছেলেদের চেয়ে ভালো ফল করছে৷ কিন্তু তারপর? ভালো ফল করে ভালোভাবে লেখাপড়া শিখে সেটা যদি জীবনে কাজেই না লাগানো যায় তাহলে শিক্ষার মূল্য আর কোথায় থাকে? বিষয়টা যেমন ভাবতে হবে মেয়েটির স্বামী কিংবা পরিবারকে, তেমনি সরকারেরও এক্ষেত্রে একটি দায়িত্ব আছে বলে আমি মনে করি৷ এই যে নাসিমা সার্ফিং শিখেছিল, তারপর কী হলো? সে এখন সংসার সামলাচ্ছে৷ কিন্তু সরকার বা তাঁর স্বামী উদ্যোগ নিলে নাসিমাকে হয়ত ভালো প্রশিক্ষণ দিয়ে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় পাঠানোর ব্যবস্থা করা যেত৷ সেক্ষেত্রে গরিব পরিবারের মেয়ে নাসিমা যেমন অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হতো, তেমনি দেশও সুনাম কুড়াতে পারতো৷
নাসিমার মতো মেয়েদের মেধা যত কম অপচয় হবে দেশের জন্য ততই মঙ্গল৷ বিষয়টা সবার আগে বুঝতে হবে আমাদের মতো পুরুষদের৷ সেটা যত তাড়াতাড়ি হবে তত ভালো৷ সেই দিনের প্রত্যাশায় থাকলাম৷