হাঁটতে শেখায় ‘রোবট-সুট’
৮ ডিসেম্বর ২০১৩জার্মানি ও জাপানের যৌথ উদ্যোগে গঠিত বখুমের একটি প্রতিষ্ঠান ‘সাইবারডিন কেয়ার রোবটিকস গেএমবেহা' স্নায়ুচালিত একটি রোবট বাজারে ছেড়েছে সম্প্রতি৷ অত্যাধুনিক এই রোবট-সুটটি পক্ষাঘাতগ্রস্ত রোগীদের নড়াচড়ায় সাহায্য করতে পারে৷ শেখাতে পারে হাঁটতে৷ প্রতিষ্ঠানের টিমে রয়েছেন চিকিৎসক, থেরাপিস্ট, ও প্রযুক্তি-কারিগর৷
জাপানের বেশ কিছু ক্লিনিকে এই রোবট কাজে লাগানো হয়েছে৷ জাপানের বিজ্ঞানী ইয়োশিয়ুকি সানকাই যন্ত্রটি উদ্ভাবন করেছেন৷ ইউরোপের রোগীদের শারীরিক মাপের সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর জন্য কিছুটা পরিবর্তন করতে হয়েছে এটিকে৷ এজন্য বিশেষজ্ঞদের একটি টিম বেশ কয়েকমাস কাজ করেছেন৷
১৪ কিলোগ্রাম ওজনের এই সুটটিতে রয়েছে বেশ কিছু সেন্সর ও কম্পিউটার৷ বখুমের ব্যার্গমানসহাইল ইউনিভার্সিটি ক্লিনিকে পরীক্ষা নিরীক্ষার পর ইউরোপের বাজারে ছাড়া হয়েছে এটি৷
রোগীরা হাঁটতে শিখছেন
প্রথম দিকের রোগীদের মধ্যে ফিলিপ ফন গ্লিৎসিনস্কি একজন, যিনি এই রোবট-সুটটি দিয়ে ট্রেনিং নিচ্ছেন৷ এক দুর্ঘটনার পর তার শরীরের নিম্নাংশ অসাড় হয়ে পড়ে৷ হতে হয় হুইল চেয়ারের ওপর নির্ভরশীল৷ ৩৫ বছর বয়স্ক এই স্থপতি এখন অত্যাধুনিক এই প্রযুক্তির সাহায্যে হাঁটতে শিখছেন একটু একটু করে৷ ‘‘এর মাধ্যমে রোগীকে হাঁটানো হয় না৷ বরং রোগী স্পন্দনের ফলে নিজেই হাঁটতে পারেন৷ একটা কিছু আবার অনুভব করা যায়,'' বলেন ফিলিপ৷
রয়েছে বেশ কিছু সেন্সর
১৪ কিলোগ্রাম ওজনের এই সুটটিতে রয়েছে বেশ কিছু সেন্সর৷ এগুলি ত্বকের ওপর স্নায়ু সিস্টেমের স্পন্দন চিনতে পারে৷ নড়াচড়া করতে সাহায্য করে৷ রোগী নিতম্ব ও পায়ে জোর পান, হাঁটতেও পারেন৷ ‘‘মস্তিষ্ক একটি সংকেত পাঠায়, যা স্নায়ুপথে পেশিতে পৌঁছে,'' বলেন ক্লিনিকের পরিচালক টমাস শিল্ডহাউয়ার৷ সম্পূর্ণভাবে পক্ষাঘাতগ্রস্ত না হলে রোগীর পেশিতে কিছুটা স্পন্দন পাওয়া যায়৷ ত্বকের মাধ্যমে তা পরিমাপ করা যায়৷ কিছুটা ধরাও যায়৷ এই সংকেত রোবটের সাহায্যে উজ্জীবিত করলে নড়াচড়া করতে পারেন রোগী৷
অনেক রোগীকে সাহায্য করতে পারবে এই যন্ত্র
এই রোবট-সুট শুধুমাত্র পক্ষাঘাতে আক্রান্তদেরই নয়, পেশির রোগে আক্রান্ত, যেমন পার্কিনসন ও স্ট্রোকে আক্রান্ত রোগীদেরও সাহায্য করতে পারে৷
মস্তিষ্ক থেকে পাওয়া নির্দেশ অসুস্থ পেশি পূরণ করতে না পারলে অত্যাধুনিক এই যন্ত্র সাহায্যে এগিয়ে আসে৷ শিল্ডহাউয়ার বলেন, ‘‘রোবটের সাহায্যে ট্রেনিং দেওয়া হলে পেশির অবশিষ্ট কর্মক্ষমতা উজ্জীবিত ও সম্প্রসারিত করা সম্ভব৷ এছাড়া অনেকদিন ব্যবহার না করা মস্তিষ্কেও আসে ‘প্রাণে'র সঞ্চার৷ এর ফলে রোগী পুরানো অনেক অভ্যাস মনে করতে পারে৷ হাঁটতেও পারে৷''
মূল্য কম নয়
এক্ষেত্রে চিকিৎসকরা অসাধারণ অগ্রগতি লক্ষ্য করেছেন৷ যে সব রোগী আগে হুইল চেয়ারে চলাচল করতেন, তারা মাত্র মাস পাঁচেকের ট্রেনিং-এর পর ওয়াকার দিয়ে হাঁটতে পারেন৷ স্থপতি ফিলিপও ওয়াকার দিয়ে ১৫০ মিটার পর্যন্ত যেতে পারেন৷
বিভিন্ন ক্লিনিক ও রোগী পুনর্বাসন কেন্দ্র রোবট-সুট লিজ নিতে পারে৷ কেননা অত্যাধুনিক প্রযুক্তির মূল্যও কম নয়৷ জার্মানিতে দুই ঘণ্টার ট্রেনিং-এর জন্য ৫০০ ইউরো খরচ হয়৷ রোগীদের সপ্তাহে পাঁচদিন কমপক্ষে দুই ঘণ্টা করে ট্রেনিং নিতে হয়৷