গায়ে বাগান, বারান্দায় ঝোপঝাড়
২ আগস্ট ২০১৪ভবিষ্যতের শহরগুলো দেখতে কেমন হবে, তা বলা সহজ নয়, কেননা ততোদিনে বিশ্বের জনসংখ্যার ৭০ শতাংশ বাস করবে শহরে৷ নগর পরিকল্পনা করেন যারা, তাদের পক্ষে এটা একটা বিরাট চ্যালেঞ্জ৷
অনাগত ভবিষ্যতের মেগা-শহরগুলো কতোটা ‘সবুজ' হবে, তাই নিয়েই ইটালির স্থপতি স্টেফানো বোয়েরি-র চিন্তা৷ তিনি চান বনানিকে শহরের মধ্যে নিয়ে আসতে৷ মিলান শহরের মাঝখানে তিনি দু'টি সবুজ বহুতল ভবন নির্মাণ করেছেন৷ এগুলোর নাম রেখেছেন ‘বস্কো ভ্যার্টিকালে' বা ভার্টিক্যাল ফরেস্ট, অর্থাৎ উল্লম্ব বনানি৷ স্টেফানো বোয়েরি একটি সবুজ শহরের স্বপ্ন দেখেন, ‘‘আমার ধারণা, আজকাল আমাদের অন্য পথে যেতে হবে৷ উদ্ভিদ ব্যবহার করে টেকসই বাড়ি নির্মাণ করতে হবে৷ সেটাই হলো দৃষ্টিভঙ্গির মূল পার্থক্য৷ অর্থাৎ প্রথাগত দৃষ্টিভঙ্গি থেকে মূল পার্থক্য৷''
দু'টি হাইরাইজ বিল্ডিং সাজানো হবে ৮০০-র বেশি গাছ, ৫,০০০ ঝোপঝাড় ও ৪০,০০০ অন্যান্য ধরনের গাছপালা দিয়ে – সব মিলিয়ে এক হেক্টর বনানি৷ এটা হবে প্রচলিত কাচ ও ইস্পাতের টাওয়ারগুলোর বিকল্প৷ তবে শহরের মাঝখানো সবুজের কোলে বসবাস বিত্তশালীদের একটা লাক্সারি, আজও সাধারণ মানুষদের জন্য নয়৷
‘বাড়ির গায়েই জঙ্গল'
অসম্ভব উচ্চতায় গজিয়েছে নানা ধরনের গাছ৷ গ্রীষ্মে তারা ছায়া দেয়; শীতে রোদ আটকায় না অথচ ঝড়ে বাতাস আটকায়; ঘরের আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণ করে, ধুলো ঢোকা নিবারণ করে আর সবচেয়ে বড় কথা – গাছের পাতা থেকে অক্সিজেন পাওয়া যায়৷ তবে ৮০ থেকে ১০০ মিটার উচ্চতায় গাছ লাগানো খুব সহজ কাজ নয়৷ তবে বোয়েরি বলেন, ‘‘আমরা ফ্লোরিডার মায়ামি-তে প্রতিটি গাছকে উইন্ড টানেলে পরীক্ষা করে দেখেছি, কোনটায় সবচেয়ে ভালো ফল পাওয়া যায়৷ এছাড়া আমরা গাছ পোঁতার বিভিন্ন পদ্ধতি নিয়েও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছি, যাতে কোনো গাছের কোনো অংশ উপড়ে রাস্তার ওপর গিয়ে না পড়ে৷''
গাছগুলোর জন্য আলাদা কংক্রিটের টব তৈরি করা হয়েছে, যার ভেতরে তাদের শক্ত ব্যান্ড দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে৷ এমনকি টবের মাটিও আলাদা করে বানানো হয়েছে যাতে বারান্দার পক্ষে টবগুলো বেশি ভারি না হয়, অথচ শিকড়গুলো যথেষ্ট মাটি পায়৷
এই ‘অরণ্যে' কিন্তু কোনো কিছুই প্রকৃতির মর্জির উপর ছেড়ে দেওয়া হয়নি৷ উঁচু বাড়ির গাছে জল দেওয়ার প্রণালীটা আলাদা করে সৃষ্টি করা হয়েছে – এবং দিক, বাড়ির তলা ও কোন জাতের গাছ, সেই অনুযায়ী বদলে৷ সব গাছপালা দেখাশোনার ভার দেওয়া হয়েছে একটি নার্সারি-কে৷ বাড়ির বাসিন্দাদের তাতে হাত দিলে চলবে না, তবে খরচটা শেষমেষ তাদেরই দিতে হবে৷
দক্ষিণে ডালিম, উত্তরে অ্যাশ
পুবে অলিভ গাছ, দক্ষিণে ডালিম, উত্তরে অ্যাশ গাছ – প্রত্যেক দিকের জন্য একটি বিশেষ ধরনের গাছ, সব মিলিয়ে চল্লিশ ধরনের গাছ৷ আর্দ্রতা, বাতাস আর রোদ্দুর অনুযায়ী বসানো হয়েছে৷ বোয়েরি জানান, ‘‘এখানে একটা আপেল গাছ লাগানো হয়েছে, যার ফলগুলো ছোট, যাতে সেগুলো ওপর থেকে রাস্তায় পড়ে বিভ্রাট না ঘটাতে পারে৷''
স্থপতি স্টেফানো বোয়েরি শুধু মানুষ আর গাছপালাই নয়, তাঁর দু'টি সবুজ টাওয়ারে জীবজন্তুদের বাস করার কিংবা বাসা বাঁধার ব্যবস্থা রাখছেন৷ পোকামাকড় পুষে মশামাছি নিয়ন্ত্রণ করা হবে স্বাভাবিক, প্রাকৃতিক উপায়ে; আবার সেই পোকামাকড়ের লোভে পাখিরা আসবে৷
এ বছরই এই ‘খাড়াই জঙ্গলে' বসতি বসবে, আসবেন প্রথম বাসিন্দারা৷ তবে ‘বস্কো ভ্যার্টিকালে' শুধু ধনী ও বিলাসীদের খেয়াল হয়েই থাকবে, না বাস্তবিক নগরায়ন বা মহানগরীর অরণ্যায়নের আদর্শ হয়ে উঠবে, তা বুঝতে আরো অন্তত বিশ বছর সময় লাগবে৷ স্টেফানো বোয়েরি-র স্বপ্ন হলো এক সবুজ মিলান, যেখানে যুগপৎ পরিবেশ ও স্থাপত্যের নতুন প্রতীক হিসেবে দাঁড়িয়ে থাকবে একটির পর একটি সবুজ বহুতল৷