আমফানের ধাক্কায় এখনো বেসামাল কলকাতা
২৪ মে ২০২০বুধবার সন্ধ্যায় কলকাতার উপর দিয়ে বয়ে গিয়েছে ঘূর্ণিঝড় আমফান৷ তারপর প্রায় চারদিন কেটে গেলেও এখনও ধাক্কা সামলে উঠতে পারেনি পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী৷ একই অবস্থা উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুর, হুগলি, হাওড়া জেলায়৷ এই ঝড়ে কলকাতায় মারা গিয়েছেন ১৯ জন৷ সাড়ে ১২ হাজার গাছ ঝড়ের দাপটে পড়ে গেছে৷ একটা বড় অংশই পড়েছে রাস্তায়৷ বিভিন্ন জায়গায় উপড়ে গেছে বিদ্যুতের খুঁটি৷ প্রবল বৃষ্টিতে বহু জায়গা এখনো জলমগ্ন৷
ঝড়ের পর পরই প্রশাসনের পক্ষ থেকে গাছ কেটে রাস্তা চলাচল উপযোগী করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে৷ যেসব জায়গায় বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে গেছে, তা জোড়া লাগিয়ে সরবরাহ শুরু করার কাজ চলছে৷ কিন্তু বিপর্যয়ের ব্যাপকতা এতটাই বেশি যে পুরসভা, সরকারি দপ্তর এবং বেসরকারি বিদ্যুৎ সংস্থা সিইএসসি-র কর্মীদের পক্ষে এখনও সব জায়গায় পরিষেবা শুরু করা সম্ভব হয়নি৷ সেই কারণে শহরের বিভিন্ন জায়গায় রাস্তায় নেমে অবরোধে শামিল হয়েছে জনতা৷ দমদম পুরসভার বহু ওয়ার্ডে পানীয় জল, বিদ্যুতের দাবি জানিয়ে বিক্ষোভ হয়েছে৷ গাছ না সরানো এবং পরিষেবাগুলো চালু না হওয়ায় তারা প্রশাসনকে দায়ী করেছে৷ এ সম্পর্কে দমদম পুরসভার উপ-পুরপ্রধান বরুণ নট্ট বলেন, ‘‘আমরা ২৪ ঘণ্টা কাজ করছি, যাতে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়৷ গাছ কাটা চলছে৷ কিন্তু, সব জায়গাই বিপর্যস্ত৷ এত কর্মী নেই যে একসঙ্গে সর্বত্র কাজ করানো যাবে৷’’
অবরোধ হয়েছে কলকাতার সঙ্গে দক্ষিণ ২৪ পরগনার সংযোগকারী ইস্টার্ন মেট্রোপলিটন বাইপাস-এ৷ দমদম থেকে বেহালার বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষ দুদিন ধরে পথে নেমেছেন৷ বিক্ষোভ হয়েছে নেতাজিনগর, আজাদগড়ে৷ বেহালার বাসিন্দা সমীর রায় ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ এসেছে৷ বাকিটা এখনো অন্ধকার৷ এর ফলে জল সরবরাহ বন্ধ৷ অবর্ণনীয় অবস্থার মধ্যে দিন কাটছে৷’’
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বেহালায় বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, ‘‘বিক্ষোভ করবেন না৷ সিইএসসি-র সঙ্গে আমরা বারবার কথা বলেছি৷ লকডাউনের জন্য ওদের কর্মী কম আছে বলে জানিয়েছে৷ আমরা দেড়শোটা জেনারেটর ভাড়া করে আপাতত বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু করতে বলেছি৷’’
মেয়র ফিরহাদ হাকিমের প্রতিশ্রুতি, ‘‘আর দিন দুয়েকের মধ্যে জল ও বিদ্যুতের সরবরাহ ফিরে আসব৷ সাতদিন সময় দিন, কলকাতাকে আগের চেহারায় ফিরিয়ে দেব৷ এত বড় বিপর্যয় কলকাতা আগে দেখেনি, আমরা নিরুপায়৷’’
বিপর্যয় মোকাবিলায় শুধু কলকাতাতেই ন্যাশনাল ডিজাস্টার রেসপন্স ফোর্স-এর ২২৫টি দল কাজ করছে৷ এর সঙ্গে রয়েছে রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী, পুলিশ, পুরসভা, দমকল৷ রাজ্য সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের একশোটির বেশি দল গাছ কাটাসহ সার্বিক ত্রাণের কাজে হাত লাগিয়েছে৷ এক-একটা গাছ সরাতে ঘণ্টা দেড়েক সময় লাগছে৷ গাছ কেটে রাস্তা সাফ করার জন্য শনিবার টালিগঞ্জ, বালিগঞ্জ, রাজারহাট-নিউটাউন, বেহালা প্রভৃতি স্থানে পাঁচ কলাম সেনা নামানো হয়েছে৷ ৷ জনস্বাস্থ্য কারিগরী দপ্তরের পক্ষ থেকে বিভিন্ন জায়গায় পানীয় জল বিলি করা হচ্ছে৷ ত্রাণকাজের জন্য রেলওয়ে, বন্দর কর্তৃপক্ষ এবং বেসরকারি সংস্থার কাছে রাজ্য সরকার সহযোগিতা চেয়েছে৷
কলকাতা ও জেলায় টেলিফোন পরিষেবা ঝড়ের তিনদিন পরেও ব্যাপকভাবে বিঘ্নিত৷ অনেক জায়গায় বন্ধ রয়েছে ডিটিএইচ ও কেবল টিভি পরিষেবা৷ উল্টোডাঙার বাসিন্দা অপরেশ সান্যাল বলেন, ‘‘একটা মোবাইল ফোন পুরো চার্জ দেওয়ার জন্য ২০ টাকা নিচ্ছে৷ পাওয়ার ব্যাঙ্কের বিক্রি বেড়ে গিয়েছে৷ জেনারেটরের ভাড়া প্রতি ঘণ্টায় দেড় হাজার টাকা৷’’ কবে স্বাভাবিক ছন্দে ফিরবে কলকাতা, এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন শহরবাসী৷