‘আমাদের চুপ থাকতে বলা হয়েছে'
২০ মার্চ ২০১৭ঠিক একবছর আগে, অর্থাৎ ২০১৬ সালের ২০ মার্চ, শিক্ষার্থী ও নাট্যকর্মী তনুকে হত্যা করা হয় কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট এলাকায়৷ তনুর বাবা ক্যান্টমেন্টেই সিভিল চাকরি করেন৷ ঐ রাতে তাঁদের ক্যান্টনমেন্টের বাসা থেকে ভিতরেই আরেকটি বাসায় ছাত্র পড়াতে গিয়েছিলেন তনু৷ পরে তাঁর লাশ পওয়া যায়৷
হত্যাকাণ্ডের পর থেকে চারবার তদন্তকারী কর্মকর্তা বদল হলেও, তনু হত্যার সঙ্গে জড়িত কাউকে চিহ্নিত বা আটক করতে পারেননি পুলিশ৷ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও সিআইডি-র সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার জালাল উদ্দিন আহমেদ এখনো ‘মামলার তদন্ত চলছে' বললেও, কোনো অগ্রগতির খবর দিতে পারেননি৷ তনুর লাশের দু'দফা ময়না তদন্ত করেও কোনো ফল হয়নি৷ ডিএনএ টেস্টেও জড়িতদের কাউকে শনাক্ত করা যায়নি৷ তনুর পরিবারের পক্ষ থেকে সন্দেহভাজনদের নাম জানানো হয়েছিল তদন্তকারীদের৷ তাদের ধরার ব্যাপারেও পুলিশ কোনো উদ্যোগ নেয়নি৷
তদন্ত কর্মকর্তা সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘‘তদন্তে নতুন কোনো অগ্রগতি নেই৷ গত নভেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত সেনাবাহিনীর মহড়া থাকায় প্রয়োজনীয় ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলা যায়নি৷ তবে তনুর মোবাইল ফোন, ব্যাগ, স্যান্ডেলসহ আরো কিছু জিনিসের ফরেনসিক প্রতিবেদন পাওয়া গেলে তদন্ত এগিয়ে নেয়া যাবে বলে আশা করি৷''
তনুর বাবা ইয়ার হোসেন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সিআইডি আমাদের মামলার তদন্ত নিয়ে এখন আর কিছু জানায় না৷ কাউকে গ্রেপ্তার বা আটকও করেনি তারা৷ অথচ আমাদের চুপচাপ থাকতে বলা হয়েছে৷ বলা হয়েছে কথা না বলতে৷''
তাঁর কথায়, ‘‘আমার মনে হয়, ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় তনুকে হত্যা করা হয়েছে বলেই এর বিচার হবে না৷ যদি বাইরে হতো তাহলে বিচার পেতাম, আসামিরা ধরা পড়তো৷ আমি আল্লাহর কাছে বিচার দিয়েছি৷ তিনিই বিচার করবেন৷''
ইয়ার হোসেন বলেন, ‘‘আমাদের চাপ দেয়া হচ্ছে৷ নানা ধরনের চাপের শিকার হচ্ছি আমরা৷ মুখ বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে৷ ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের চারিকটাও শেষ পর্যন্ত থাকবে কিনা জানি না৷ প্রধানমন্ত্রীর কাছে একটাই আবেদন, আমরা বাঁচতে চাই, আমরা বিচার চাই৷''
তনুর বাবা বলেন, ‘‘গত একটি বছর আমার মেয়ে ছাড়া বেঁচে আছি৷ আশা ছিল বিচার পাবো৷ কিন্তু সে আশাও এখন আর নেই৷ আমার ভিতরে এখন শুধু আগুন জ্বলছে৷''
এদিকে তনু হত্যা মামলার তদন্তে এক বছরেও কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় সিআইডিকে ১০ দিনের সময় বেঁধে দিয়ে আল্টিমেটাম দিয়েছে গণজাগরণ মঞ্চ কুমিল্লা শাখা৷ আগামী ১০ দিনের মধ্যে সিআইডি যদি তদন্তে কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখাতে না পারে, তাহলে ২ এপ্রিল থেকে লাগাতার আন্দোলন গড়ে তুলবে তারা৷
সোমবার দুপুরে কুমিল্লা সিআইডিকে স্মারকলিপি দেয়ার পর, গণজাগরণ মঞ্চ কুমিল্লা জেলার মুখপাত্র খায়রুল আনাম রায়হান বলেন, ‘‘সংবাদ সম্মেলন করে বিভিন্ন স্কুল-কলেজে ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে জনসচেতনতা সৃষ্টি করে লাগাতার আন্দোলনে নামবো৷ আমরা আশা করি, অচিরেই তনু হত্যাকারীদের শনাক্ত করে খুনিদের সর্বোচ্চ শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে৷''