1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আমার দেখা কার্নেভাল

ফারজানা কবীর খান৯ মার্চ ২০০৯

ফেব্রুয়ারী মাস মানেই জার্মানিতে কার্নিভালের মাস৷ পথে-ঘাটে, রেঁস্তোরায়, অফিসে সব জায়গায় শুধু কার্নিভালের আলোচনা৷ প্রতি বছর জার্মানিতে উদযাপিত হয় কার্নিভাল উৎসব৷ ছেলে বুড়ো থেকে শুরু করে প্রায় সবাই অংশগ্রহণ করে কার্নিভালে৷

https://p.dw.com/p/H8Q6
পুরো ফেব্রুয়ারী মাস গোটা জার্মানি জুড়ে চলে কার্নিভাল৷ছবি: picture-alliance / dpa

প্রতিদিন যখনই ট্রামে উঠি কখনো দেখি একদল বাচ্চা রং-বেরং-এর পোশাক পরা৷ ভাবি বোধহয় ক্লাস- পার্টি আছে৷ কিন্তু না এরপর দেখি বয়স্ক মানুষেরাও সেজেছে মনের মাধুরী মিশিয়ে৷ কেউ সেজেছে সঙ, কেউবা ডাইনী বুড়ি৷ কেউ কেউ পরীর সাজে৷ আবার কেউ কাউন্ট ড্রাকুলা৷ আমি প্রথমবার জার্মানিতে, জানিনা কোন রীতি-রেওয়াজ৷ ঠিক করে জানিওনা কেন এই উৎসব৷

Deutschland Karneval Rosenmontag Köln
এবারের কার্নিভালে ১২ হাজার মানুষ শুধু শোভা যাত্রায় অংশগ্রহণ করেছে৷ছবি: AP

১৯শে ফেব্রুয়ারী ট্রামে চড়ে অফিসে আসার পথে ঘটল এক আজব ঘটনা৷ একদল তরুণী ভীষণ সেজে-গুজে ট্রামে চড়েছে৷ আমি তাদের পাশে বসে আছি৷ একটি ষ্টেশনে ট্রাম থামল৷ ট্রামে চড়ে বসল দুজন যুবক৷ পড়নে অফিসিয়াল পোশাক, কোর্ট-টাই৷ আর তরুনীদল এক লাফে কেঁচি নিয়ে তাঁদের পাশে দাড়ালো৷ তারা কিছু বোঝার আগেই কেটে ফেললো টাই৷ আমি ভাবলাম, ভীষণ ক্ষেপে যাবে যুবক দুজন৷ অথচ অবাক চোখে দেখলাম দাঁত বের করে হাসছে তারা৷ পরে ভাবলাম হয়তো চেনা পরিচিত হবে, আগে থেকেই পরিকল্পনা করা ব্যাপারটা৷ তারপরও মনের কৌতুহল মেটাতে পাশের সহযাত্রীকে প্রশ্ন করলাম আসলে ব্যাপারটা কি ঘটেছে জানতে৷ সে জানালো ‘‘ হয়টে ইষ্ট ফ্রাউয়েন টাগ''৷ মানে ‘‘আজ হলো মহিলাদের দিন''৷ আমি বললাম, ‘‘কিন্তু ওমেন্স ডে-তো ৮ই মার্চ''৷ সে জানালো, এখানে কার্নিভালের সময় একদিন থাকে, যেদিন মহিলা দিবস পালন করা হয়ে থাকে৷ এরপর ধীরে ধীরে জানতে শুরু করলাম কার্নিভালের ইতিহাস৷

এরপর অফিস থেকে আমাকে পাঠানো হয় কোলনের কার্নিভালের রিপোর্ট কভার করতে৷ আমি ভাবার চেষ্টা করছিলেম, পহেলা বৈশাখের শোভা-যাত্রার মতো কিছু৷যাওয়ার পথে যখন কোলনের ট্রেন ধরতে গেলাম দেখি সেখান থেকেই সাজ সাজ রব পড়েছে৷পৌঁছে দেখি লাখ লাখ মানুষ সেখানে জড়ো হয়েছে৷ কেউ কেউ এসেছে ইতালি থেকে, কেউবা লুক্সেমবার্গ থেকে, ফ্রান্স থেকে...৷ দূর-দূরান্ত থেকে সেখানে এসেছে কত শত মানুষ ৷ জার্মানির বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষ এসে জড়ো হয়েছে সেখানে৷ নানা রং-এর পোশাক তাদের পরনে৷ পৌঁছানোর পর দেখি পহেলা বৈশাখের ধারে কাছেও নেই এই উৎসব৷কোলনের কার্নিভালের উৎসব পুরো পৃথিবী বিখ্যাত৷

Deutschland Karneval Rosenmontag Köln
উদ্দাম তালে গানের সাথে নাচছে মানুষ৷ আর বলছে, কোলন কার্নিভাল ‘‘আলাফ''৷ছবি: AP

পুরো ফেব্রুয়ারী মাস গোটা জার্মানি জুড়ে চলে কার্নিভাল৷ বিশেষ করে নর্থ রাইন- ওয়েষ্টফালিয়া এবং রাইনল্যান্ডের মানুষেরা উদযাপন করে কার্নিভাল৷ এসময় মানুষেরা রং-বেরং-এর পোশাক পরে, যার যেমন খুশী৷ নিজেকে সাজায় মনের মাধুরী মিশিয়ে৷ এক কথায় বলা যায় যেমন খুশী তেমন সাজো৷

কার্নিভালের জন্য অপেক্ষা করে এ অঞ্চলের মানুষেরা সারা বছর ধরে৷ এসময় তাঁরা সময় সুযোগ পেলেই একজন আরেক জনের সাথে দেখা করে, কুচকাওয়াজের মাধ্যমে শোভা-যাত্রা করে, পার্টি করে আর উৎসবে মেতে ওঠে৷ মন খুলে কথা বলে, নাচে- গানে মেতে ওঠে৷

কার্নিভাল মূলত খ্রীষ্টান ধর্মাবলম্বীদের ক্যাথলিক গোত্রের ধর্মীয় উৎসব৷ কিন্তু আমার মনে হলো যেন ধর্ম-গোত্র, বর্ণভেদে সবাই এই উৎসব পালন করে৷ পূর্ব ইতিহাস থেকে জানা যায়, এটি যিশুর উপবাস স্মরণের উদ্দেশ্যে ইস্টারের পূর্বে খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের চল্লিশ দিন ব্যাপী বাৎসরিক উপবাস উপলক্ষ্যে পালন করা হয়৷ এই উপবাস শুরু করার আগে তারা উৎসব পালন করে৷ বছরের এই সময়টায় তারা যা খুশী তাই করতে পারে৷পছন্দনীয় ভালো খাবার খায়, ইচ্ছেমতো পানীয় পান করতে পারে৷ কারণ এরপরেই তারা সংযম পালন করে চল্লিশ দিন ব্যাপী৷

Deutschland Karneval Rosenmontag Mainz Clown auf Fahrrad
কেউ কেউ এসেছে ইতালি থেকে, কেউবা লুক্সেমবার্গ থেকে, ফ্রান্স থেকে...ছবি: AP

এবারের কার্নিভালে ১২ হাজার মানুষ শুধু শোভা যাত্রায় অংশগ্রহণ করেছে৷ শোভা যাত্রা থেকে ১৫০ টন চকলেট সেখানে উপস্থিত লক্ষ মানুষকে বিলানো হয়৷ ছিটানো হয় অগণিত গোলাপসহ অন্যান্য ফুল৷ শোভা যাত্রা শুরু হয় স্বর্গের দেব-দেবীর বেশধারী কিছু মানুষের আগমন দিয়ে৷ তারা উপস্থিত জনতাকে জানায় শান্তির বার্তা৷তারপরই একের পর এক সাজানো বাহন আসতে শুরু করে৷ শুধু যে শুভেচ্ছা-বার্তা আর চকলেট নিয়ে আসে এই বাহনগুলো তা কিন্তু নয়৷ বর্তমান বিশ্বের রাজনৈতিক পটভুমি, অর্থনৈতিক মন্দা, ব্যাংক ধ্বস সব কিছুই ছিলো বিদ্যমান৷ এমন কি পুতিনের ডামিকে ভালুকের পোশাক পড়নো হয়, যে স্বর্গ জয় করতে চায়৷ ওবামা থেকে শুরু করে, গুয়ান্তানামো কারাগার সব কিছুই ছিল এই কার্নিভালে৷ কার্নিভাল শুরু হওয়ার কথা ছিল সকাল ১১টায়৷ কিন্তু খারাপ আবহাওয়ার কারণে কার্নিভাল শুরু হয় বেলা দুটোয়৷

অনেক তরুণ-তরুনী, বয়স্ক মানুষ এবং শিশুরা জড়ো হয় কার্নিভালে৷ এই দিনে মানুষ ভুলে যায় সমস্ত ভেদাভেদ৷ এক সাথে পালন করে কার্নিভাল৷ ছেলে-বুড়ো সব বয়স ভুলে, গন্ডি ভুলে একসাথে চিৎকার করে ‘‘কামেলে, কামেলে'' মানে ‘‘চকলেট, চকলেট''৷ কেউ কেউ ছাতা পেতে ধরে বেশী চকলেট পাওয়ার আশায়৷ এক কথায় দারুণ এই উৎসব৷ বাবা-মায়েরা তাদের সন্তানদের সাথে নিয়ে এসেছে নিজের দেশের সংস্কৃতির সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে৷

শোভাযাত্রা শেষ হলো বিকেল পাঁচটায়৷ আমিও কোলন স্টেশন থেকে ট্রেন ধরলাম বন-এ ফিরে আসার জন্য৷ ফিরে আসছি আমি কিন্তু চলছে উৎসব৷ উদ্দাম তালে গানের সাথে নাচছে মানুষ৷ আর বলছে, কোলন কার্নিভাল ‘‘আলাফ''৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য