1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আরো অনেক দেশে সোয়াইন ফ্লু-র সংক্রমণ

৩০ এপ্রিল ২০০৯

সারা বিশ্বে একের পর এক বিভিন্ন দেশে সোয়াইন ফ্লু-র সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ছে৷ এই পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা – ডাব্লিউএইচও সতর্ক করে দিয়েছে, যে বিশ্ব জুড়ে সোয়াইন ফ্লু দুর্যোগ আসন্ন৷

https://p.dw.com/p/Hhgv
নতুন নতুন দেশে ছড়াচ্ছে সোয়াইন ফ্লুছবি: AP

সোয়াইন ফ্লু আক্রান্ত হয়ে মেক্সিকোর বাইরে যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসে এক শিশুর মৃত্যুর পর সংস্থাটি মহামারী সতর্কতা ৫ মাত্রায় বাড়িয়েছে৷ এটি ব্যাপক আকারের মহামারী ঘোষণার আগের ধাপ৷ ডাব্লিউএইচও-র মহাপরিচালক মার্গারেট চ্যান বলেছেন, ইনফ্লুয়েঞ্জা মহামারীকে গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া উচিত৷ এই মুহূর্তে বিশ্বের প্রতিটি দেশকে আসন্ন মহামারী মোকাবিলার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করা উচিত৷ তিনি বলেন, বহুবিস্তৃত মহামারীর পর্যায়ে চলে যাওয়া ইনফ্লুয়েঞ্জা কতটা মারাত্মক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে সেটিই এখন বড় প্রশ্ন৷

মেক্সিকোর পরিস্থিতি

এইচওয়ানএনওয়ান ভাইরাসের উৎস হিসেবে এখন পর্যন্ত মেক্সিকোকেই বিবেচনা করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা৷ সবচেয়ে বেশি মানুষ আক্রান্তও হয়েছে সেদেশেই৷ মেক্সিকোর সরকারি সূত্র এই ফ্লু সংক্রমণে সেখানে মৃতের সংখ্যা ৮৪ বলে জানিয়েছে৷ যা আগে প্রকাশিত সংখ্যার প্রায় অর্ধেক৷ নতুন জাতের এই সোয়াইন ফ্লু যেন আরো বেশি ছড়িয়ে পড়তে না পারে সেজন্য দেশটির সরকার সাপ্তাহিক ছুটি বাড়িয়ে পাঁচ দিন করেছে৷ ছুটির সময় সবাইকে বাড়িতে অবস্থান করার অনুরোধ জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ফেলিপ কালডেরন৷ সোয়াইন ফ্লু আতঙ্কে তড়িঘড়ি মেক্সিকো ছেড়ে নিজ দেশে ফিরতে উদগ্রীব পর্যটক ও বিদেশি শিক্ষার্থীরা৷ এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মেক্সিকোর বাইরেও একজনের মৃত্যুর খবর আসার পর ফ্লাইট বাতিল হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায়ও উদ্বিগ্ন তারা৷ সমুদ্র সৈকত, প্রাচীন পিরামিড ও পুরনো ধাঁচের ঔপনিবেশিক শহর দেখতে প্রতি বছরই মেক্সিকোতে লাখ লাখ পর্যটক ভীড় জমায়৷ কিন্তু এবার ফ্লু আতঙ্কের কারণে অনেকেই ভ্রমণ সংক্ষিপ্ত করে আগাম ফ্লাইট নেওয়ার চেষ্টা করছে৷

অন্যান্য দেশে সোয়াইন ফ্লু-র সংক্রমণ

যুক্তরাষ্ট্রে ১০৯ জনের দেহে সোয়াইন ফ্লু সংক্রমণের খবর পাওয়া গেছে৷ ইতিমধ্যে সেখানে এই ফ্লু-র মহামারী ঠেকাতে প্রায় ১০০ টি স্কুল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে৷ মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা সেখানে সোয়াইন ফ্লু-র সংক্রমণ প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন৷ তবে তিনি এই ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে মেক্সিকোর সাথে সীমান্তপথে যোগাযোগ বন্ধ করার প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছেন৷ এছাড়া নিউজিল্যান্ড সরকার সেখানে ১৬ জনের দেহে এই ভাইরাসের সংক্রমণের কথা জানিয়েছে৷ তবে সেখানে কমপক্ষে ১১১ জন সোয়াইন ফ্লু-তে আক্রান্ত হয়েছে বলে আশংকা করা হচ্ছে৷ বৃহস্পতিবার বাল্টিক রাষ্ট্র লিথুয়ানিয়ায় সোয়াইন ফ্লু আক্রান্ত একজন ব্যক্তির সন্ধান পাওয়া গেছে৷ দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ২৩ এপ্রিল মেক্সিকো থেকে দেশে ফেরার পর ঐ ব্যক্তি অসুস্থ হয়ে পড়লে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে তার দেহে টাইপ এ ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের অস্তিত্ব নিশ্চিত হওয়া গেছে৷ তবে এটি সোয়াইন ফ্লু কিনা তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য যুক্তরাজ্যে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে৷ এছাড়া এ পর্যন্ত জার্মানি, সুইজারল্যান্ড, স্পেন, অস্ট্রিয়া, যুক্তরাজ্য, কানাডা, ইসরায়েল, সার্বিয়া, কোস্টারিকা, পেরু, জাপান এবং নেদারল্যান্ডস তাদের দেশে সোয়াইন ফ্লু সংক্রমণের কথা নিশ্চিত করেছে৷ এছাড়া আর্জেন্টিনা, অস্ট্রেলিয়া, চিলি, কলম্বিয়া, ডেনমার্ক, ফিনল্যান্ড, ফ্রান্স, হংকং, আয়ারল্যান্ড, ইটালি, পোল্যান্ড, পর্তুগাল, দক্ষিণ আফ্রিকা, দক্ষিণ কোরিয়া, গুয়াতেমালা, এল স্যালভাডর, বাহরাইন, নরওয়ে এবং সুইডেনে বেশ কিছু মানুষের শরীরে সোয়াইন ফ্লু ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটেছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে৷

Schweinegrippen-Test
গবেষণাগারে সোয়াইন ফ্লু ভাইরাসের পরীক্ষা চলছেছবি: AP

বিভিন্ন দেশের সতর্কতামূলক পদক্ষেপ

যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা এবং চীন ইতিমধ্যে তাদের দেশের মানুষদের জরুরি প্রয়োজন ছাড়া মেক্সিকো ভ্রমণ না করার আহ্বান জানিয়েছে৷ আর্জেন্টিনা, পেরু ও কিউবা সামিয়কভাবে মেক্সিকো থেকে বিমান চলাচল বন্ধ রেখেছে৷ ওদিকে, মেক্সিকোর সঙ্গে একমাস যাত্রীবাহী বিমান চলাচল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইকুয়েডর৷ মেক্সিকোর সঙ্গে বিমান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য বৃহস্পতিবার ইউরোপীয় ইউনিয়নের দ্বারস্থ হচ্ছে ফ্রান্স৷ ক্যানাডার বেশ কয়েকটি বিমান সংস্থাও মেক্সিকোর সঙ্গে সাময়িকভাবে বিমান চলাচল বন্ধ করে দিচ্ছে৷ এছাড়া নিকারাগুয়ার সরকার সতর্কতা হিসেবে সেখানে দুই মাসের স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে জরুরি অবস্থা জারি করেছে৷

এদিকে, মিশরের সরকার সোয়াইন ফ্লু-র সংক্রমণ ঠেকাতে সেখানকার সকল শূকর হত্যার উদ্যোগ নিয়েছে৷ পশু স্বাস্থ্য বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা ওআইই, জাতিসংঘ এবং শূকর খামারের মালিকরা এর তীব্র প্রতিবাদ করা সত্ত্বেও সরকার বৃহস্পতিবার থেকে শূকর নিধন শুরু করেছে৷ এক সূত্র মতে, শূকর নিধনের জন্য শূকর প্রতি ১৭৭ মার্কিন ডলার ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে মালিকদের৷ এছাড়া কায়রো বিমান বন্দরে যাত্রীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য সেখানে চিকিৎসকের সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়েছে৷ সংযুক্ত আরব আমিরাত, ভেনিজুয়েলা, গ্যাবোন এবং ঘানা শূকর এবং শূকরের মাংসজাত পণ্য আমদানি নিষিদ্ধ করে দিয়েছে৷ এছাড়া জাম্বিয়া এবং জিম্বাবুয়ে বিশেষ টাস্ক ফোর্স গঠন করে তাদের প্রতিটি সমুদ্র ও বিমান বন্দরে যাত্রীদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে৷

ইউরোপীয় ইউনিয়নের উদ্যোগ

সোয়াইন ফ্লু-র অব্যাহত সংক্রমণের প্রেক্ষিতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য দেশগুলোর স্বাস্থ্য মন্ত্রীরা বৃহস্পতিবার লুক্সেমবুর্গে এক জরুরি বৈঠক করেছেন৷ বৈঠকে ইইউ এর পক্ষ থেকে মেক্সিকোয় সোয়াইন ফ্লু মোকাবিলায় সহযোগিতার হাত বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে৷ এছাড়া ইইউ সদস্য দেশগুলোর জন্য যথেষ্ট পরিমাণ প্রতিষেধক প্রস্তুত রাখার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে৷ তবে আকাশ পথে মেক্সিকোর সাথে ইউরোপের যোগাযোগ বন্ধে ফ্রান্সের প্রস্তাবে দ্বিধা বিভক্ত সদস্য দেশগুলো৷ অধিকাংশ দেশ মনে করে, এই ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে এখন মেক্সিকোর সাথে বিমান চলাচল বন্ধ করা কোন ফলপ্রসূ উদ্যোগ হবে না৷ অধিকন্তু, ডব্লিউএইচও স্বাস্থ্য বিষয়ক জরুরি বার্তায় বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক বিমান চলাচল বন্ধকে নিরুৎসাহিত করেছে৷

Japan Schweinegrippe Gesundheitsmitarbeiter auf dem Flughafen von Narita Tokyo
বিমানবন্দরগুলিতে কড়া সতর্কতামূলক ব্যবস্থাছবি: AP

সিডিসিপি‘র পরামর্শ

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র সিডিসিপি সোয়াইন ফ্লুর প্রকোপ থেকে বাঁচতে বেশি বেশি হাত ধোয়া এবং সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়েছে৷ সিডিসিপি জানিয়েছে, সোয়াইন ফ্লু মূলত মানবদেহে নয় বরং শূকরের দেহে সংক্রমিত হয়৷ তবে আক্রান্ত শূকরের সাথে মানুষের সংস্পর্শ অথবা এই ভাইরাসযুক্ত কোন দ্রব্য মানবদেহের সংস্পর্শে আসলে, এই ভাইরাস মানবদেহে জায়গা করে নেয়৷ সাধারণত এই ভাইরাস বিরাজ করছে এমন কোন শূকর কিংবা দ্রব্য স্পর্শ করার পর সেই হাত নাকে অথবা মুখে দিলে মানুষ সহজেই সংক্রমিত হয়৷ তাই এর প্রকোপ থেকে বাঁচতে বেশি বেশি হাত ধোয়ার অভ্যাস করতে হবে৷

বিমান বন্দরগুলোতে থারমাল স্ক্যানার

এদিকে, সোয়াইন ফ্লু-র সংক্রমণ প্রতিরোধে বিশ্বের বেশ কিছু দেশে বিমান বন্দরগুলোতে থারমাল স্ক্যানার স্থাপন করা হয়েছে৷ কিন্তু বিশেষজ্ঞরা সোয়াইন ফ্লু সনাক্তকরণে এই যন্ত্রটির ক্ষমতার বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছেন৷ হংকং এর শীর্ষ পর্যায়ের সরকারি স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ম্যাথিউ লিউং স্বীকার করেছেন, যে যন্ত্রটির এই ধরণের রোগী সনাক্তকরণে সীমাবদ্ধতা রয়েছে৷ তিনি বলেন, এই ধরণের যন্ত্রের উপর পুরোপুরি নির্ভর না করে বরং অন্যান্য উপায়সমূহের মধ্যে অন্যতম একটি হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে৷ ইতিমধ্যে ইন্দোনেশিয়া, কম্বোডিয়া, সিঙ্গাপুর এবং অস্ট্রেলিয়া তাদের বিমানবন্দরগুলোতে এই যন্ত্র ব্যবহার শুরু করেছে৷

প্রতিবেদক: হোসাইন আব্দুল হাই, সম্পাদনা: আবদুল্লাহ আল-ফারূক