ক্যাম্পের বাইরে থাকতে পারবে না রোহিঙ্গারা
২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭২৫শে আগস্টের পর থেকে বাংলাদেশে সাড়ে চার লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী এসেছেন৷ তাদের জন্য কুতুপালং এলারকার বালুখালি ক্যাম্প আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে৷ কিন্তু রোহিঙ্গাদের একটি অংশ ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ছে৷ শুধু কক্সবাজার এলাকাতেই নয়, তারা চট্টগ্রাম শহরেও পৌঁছে গেছে৷ এমনকি ঢাকার অদূরে মানিকগঞ্জেও তাদের কয়েকজনকে পাওয়া গেছে৷
শুক্রবার দুপুরে সাতক্ষীরার কলারোয়া বাসস্ট্যান্ড থেকে নারী ও শিশুসহ ১৩ রোহিঙ্গাকে আটক করেছে পুলিশ৷ আটক হওয়া রোহিঙ্গারা দালালের মাধ্যমে কাজের সন্ধানে ভারতে যাচ্ছিলেন বলে জানতে পেরেছে পুলিশ৷ কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এ কে এম ইকবাল হোসেন ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘আমরা বিভিন্ন এলাকায় চেকপোস্ট বসিয়েছি, রোহিঙ্গারা যাতে ছড়িয়ে পড়তে না পারে সেজন্য ব্যবস্থা নিচ্ছি৷ আমরা এ পর্যন্ত ১০ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গাকে আটক করে বালুখালি ক্যাম্পে পৌঁছে দিয়েছি৷''
কক্সবাজার এলাকার ১১টি পয়েন্টে ২৫টি চেকপোস্ট বসানো হয়েছে যাতে রোহিঙ্গারা আশ্রয়স্থলের বাইরে যেতে না পারে৷ এছাড়া ১২টি পেট্রোল টিম সার্বক্ষণিক টহলে রয়েছে, বাড়ানো হয়েছে গোয়েন্দা নজরদারি৷ কক্সবাজারের প্রধান সড়ক ছাড়াও সীমান্তের গ্রামগুলোতে পায়ে হাঁটার অনেক ছোট ছোট রাস্তা রয়েছে৷ পায়ে হেঁটে আসার যে পথগুলো রয়েছে সেগুলো দিয়ে তারা বিভিন্ন দিকে চলে যায়, সেকারণে ওই সব এলাকায়ও নজরদারি বাড়ানো হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ৷
পুলিশ সুপার জানান, ‘‘দেশের অন্যান্য এলাকা থেকে যেসব রোহিঙ্গা আটক হচ্ছে তাদেরও আমাদের কাছে পাঠান হচ্ছে৷ এ পর্যন্ত কক্সবাজারের বাইরে থেকে ৫০৪ জনকে আটক করে আমাদের কাছে পাঠানো হয়েছে৷ তাদের আমরা বালুখালি ক্যাম্পে পাঠিয়ে দিয়েছি৷''
জানালেন, ‘‘রোহিঙ্গাদের একটি গ্রুপ আছে যারা কিছুটা ধনী৷ তারা ক্যাম্পে থাকতে চান না৷ তারা কৌশলে কক্সবাজার এলাকা ছেড়ে অন্য কোথাও গিয়ে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতে চান৷ এছাড়া রোহিঙ্গাদের অন্য একটি দলকে প্রতারকরা চাকরি বা অন্য কোনো সুবিধা দেয়ার কথা বলে দেশের বিভিন্ন এলাকায় নিয়ে যাচ্ছে৷'' পুলিশ সূত্র জানায়, নারী ও শিশু পাচারকারীরাও সক্রিয় রয়েছে ঐ এলাকায়৷
এদিকে রোহিঙ্গাদের ত্রাণ বিতরণে সরাসরি সেনাবাহিনী যুক্ত হয়েছে শনিবার থেকে৷ ত্রাণ নিয়ে বিশৃঙ্খলা ঠেকাতেই এই ব্যবস্থা বলে ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মাহিদুর রহমান৷ তিনি বলেন, ‘‘১২টি জায়গা ঠিক করে দেয়া হয়েছে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে৷ প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে ব্যক্তি এবং সংগঠন সেখানে ত্রাণ বিতরণ করছেন৷ তবে অন্য কেউও চাইলে ত্রাণ বিতরণ করতে পারবে তবে প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে৷''
মাহিদুর রহমান জানান, ‘‘সেনাবাহিনী সরকারি এবং বিদেশ থেকে আসা ত্রাণ গ্রহণ ও বন্টন করছে, ফলে বিশৃঙ্খলা কমে আসছে৷''
সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিদিন এক লাখ রোহিঙ্গাকে রান্না করা খাবার দেয়া হচ্ছে৷ বালুখালি ক্যাম্পে এখন পর্যন্ত অন্তত এক লাখ রোহিঙ্গাকে নেয়া গেছে৷ তবে সেখানে এখনো থাকার জায়গায় চাল নির্মাণ হয়নি৷ নেই পানি ও অন্যান্য সুবিধা৷
এদিকে রোহিঙ্গাদের কাছে মোবাইল ফোনের সিম বিক্রি নিষিদ্ধ করা হয়েছে৷ যারা বিক্রি করবেন তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম৷ রোহিঙ্গাদের জন্য ক্যাম্পে টেলিফোন বুথ স্থাপন করা হবে বলে জানানো হয়েছে৷
এ প্রসঙ্গে আপনার কিছু বলার থাকলে লিখুন নীচে মন্তব্যের ঘরে৷