আসল হাতি রক্ষায় ভারতের মন্দিরে ‘রোবট হাতি’
ভারতের কেরালার এক মন্দিরে সম্প্রতি এক যান্ত্রিক হাতি উপহার দিয়েছে প্রাণি অধিকার নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক সংগঠন পেটা৷
রোবট হাতি
প্রাণি অধিকার নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক সংগঠন ‘পিপল ফর এথিক্যাল ট্রিটমেন্ট অব অ্যানিম্যালস’ বা পেটার ভারতীয় শাখা সম্প্রতি কেরালার ইরিঞ্জাদাপ্পিল্লি শ্রী কৃষ্ণ মন্দিরকে একটি যান্ত্রিক হাতি উপহার দেয়৷
লোহার তৈরি
ভারতের ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস জানিয়েছে, রোবট হাতির উচ্চতা ১১ ফুট, ওজন ৮০০ কেজি৷ লোহার ফ্রেম দিয়ে তৈরি হাতিটির বহিরাবরণ রাবার দিয়ে ঢাকা৷ পেটা জানিয়েছে, রোবট হাতিতে পাঁচটি শক্তিশালী বৈদ্যুতিক মোটর রয়েছে৷ জীবিত হাতির মতোই এটি মাথা, চোখ এবং কান নাড়াতে পারে৷
খরচ
কেরালার থ্রিসুর শহরের কয়েকজন শিল্পী হাতিটি তৈরি করেছেন৷ এতে খরচ হয়েছে প্রায় পাঁচ লাখ রূপি৷ এই হাতিতে একসঙ্গে পাঁচজন চড়তে পারবেন৷ আর মাহুত সুইচ দিয়ে শুঁড় নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে৷
উদ্দেশ্য
এক বিবৃতিতে পেটা ইন্ডিয়া জানিয়েছে, ইরিঞ্জাদাপ্পিল্লি শ্রী কৃষ্ণ মন্দির কর্তৃপক্ষ ধর্মীয় আচার পালন, উৎসব আয়োজন বা অন্য কোনো উদ্দেশ্যে জীবন্ত হাতি বা অন্য কোনো প্রাণি ব্যবহার না করার অঙ্গীকার করেছিল৷ এর পরই পেটা ইন্ডিয়া ঐ মন্দিরকে রোবট হাতিটি উপহার দেয়৷
ধর্মীয় আচার
মন্দির কর্তৃপক্ষ রোবট হাতিটির নাম দিয়েছে ‘ইরিঞ্জাদাপ্পিল্লি রমন’৷ সম্প্রতি এই হাতিকে দিয়ে ‘নাদায়িরুথাল’ (দেবতার উদ্দেশ্যে হাতি উৎসর্গ করা) পালন করা হয়৷ জ্যোতিষী পদ্মনভ শর্মা, তান্ত্রিক কারুমাথ্রা বিজয়ন ও শ্রী পদ্মনভস্বামী মন্দিরের পুরোহিত সাদিশান নামবুথিরি এই আচারে অংশ নেন৷
হাতির ব্যবহার
কেরালার বিভিন্ন মন্দিরে ধর্মীর অনুষ্ঠানে হাতি ব্যবহার করা হয়৷ তবে নিরাপত্তার স্বার্থে তাদের প্রায়ই শিকলে বেঁধে রাখা হয়৷ মন্দিরে এভাবে হাতির ব্যবহারের সমালোচনা করেছিলেন প্রাণি অধিকারকর্মীরা৷ বছরের পর বছর ধরে এসব বন্দি হাতির স্বাস্থ্য, পরিচর্যা ও চিকিৎসা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছিলেন তারা৷
আহ্বান
বিবৃতিতে পেটা জানিয়েছে, উৎসবের সময় অতি উচ্চ শব্দে হাতিগুলোকে বশীভূত করা এক ধরনের ‘নিষ্ঠুর’ চর্চা৷ এই অমানবিক চর্চা বন্ধে প্রতিটি মন্দিরের উচিত যান্ত্রিক হাতি ব্যবহারের দিকে মনোনিবেশ করা৷
খুশি মন্দির কর্তৃপক্ষ
ইরিঞ্জাদাপ্পিলি শ্রী কৃষ্ণ মন্দিরের পুরোহিত রাজকুমার নাম্বুথিরি জানান, তারা এই যান্ত্রিক হাতিটি পেয়ে খুশি৷ তিনি বলেন, ‘‘আমাদের দেখাদেখি অন্য মন্দির কর্তৃপক্ষও তাদের আচার-অনুষ্ঠান পালনের জন্য এ ধরনের রোবট হাতি প্রতিস্থাপনের বিষয়ে চিন্তা করবে বলে প্রত্যাশা করি৷’’
হাতির মৃত্যু
প্রাণি অধিকার সংক্রান্ত গবেষণা কেন্দ্র সম্প্রতি কেরালার মুখ্যমন্ত্রীকে স্তন্যপায়ী প্রাণীর বর্ধিত মৃত্যুহার সম্পর্কে চিঠি লিখে জানিয়েছে যে, কেরালায় ২০১৮ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ১৩৮টি বন্দি হাতি মারা গেছে৷
বুনো হাতির সংখ্যা
বর্তমানে ভারতে প্রায় ২ হাজার ৫০০ বুনো হাতি বন্দি অবস্থায় আছে৷ এর প্রায় পাঁচ ভাগের একভাগই রয়েছে কেরালায়৷