অভিজিৎ হত্যাকাণ্ড
২ মার্চ ২০১৫সামহয়্যার ইন ব্লগে সাখাওয়াত হোসেন একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তুলে ধরেছেন৷ তাঁর মূল বক্তব্য হলো, ধর্ম অনুযায়ী সৃষ্টিকর্তাই সর্বশক্তিমান৷ প্রতিটি মুসলমান তাই বিশ্বাস করে, দুনিয়াতে মানুষ যা করবে আল্লাহ তাঁর বিচার করবেন৷ যদি কারো আল্লাহর পূর্ণ আস্থা থেকে থাকে, তাহলে সে কেমন করে নিজের হাতে অস্ত্র তুলে নেয়? কীভাবে সে আরেকজনকে হত্যা করে? বিচারক তো আল্লাহ, মানুষ তাঁর কাছে বিচার চাইবে৷ আল্লাহর কাছে বিচার না চেয়ে, কিংবা কোনো আদালতে অভিযোগ দায়ের না করে, একজন মানুষ কীভাবে হত্যা করে বিচারের ভার নিজের হাতে তুলে নেয়? সাখাওয়াতের ভাষায়, ‘‘ধর্মের মালিক কে? কে ধর্ম নাজিল করেছেন? কে ধর্ম টিকিয়ে রেখেছেন? উত্তর তো একটাই – স্রষ্টা বা আল্লাহ৷ তিনিই সব কিছু নির্ধারণ করেন৷ ভালো-মন্দ, উন্নতি-অবনতি কিছুই তাঁর ইশারা ছাড়া হয় না৷ তবে কেন আপনারা নাস্তিকদের ব্যাপারটা স্রষ্টা বা আল্লাহর উপর ছেড়ে দেন না? নাকি স্রষ্টা বা আল্লায় আপনাদের আস্থা কম? তাঁর উপর আস্থা রাখা তো আস্তিকদের জীবনের সবচাইতে বড় পরীক্ষা৷'' লেখাটিতে অবশ্য দুঃখজনক পরিণতির জন্য অভিজিৎকেও দায়ী করেছেন সাখাওয়াত৷ তাঁর মতে, অভিজিৎ নিজের লেখায় মানুষের বিশ্বাসে আঘাত দিয়েছেন যা কখনোই ঠিক নয়৷
‘অভিজিৎদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ এই রাষ্ট্র কী উত্তর দেবে?'৷ এটা আমার ব্লগে শওকত আলী বেনুর লেখার শিরোনাম৷ অভিজিৎ হত্যার জন্য মৌলবাদীদের দায়ী মনে করলেও তাঁকে নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ রাষ্ট্র বাংলাদেশেরও সমালোচনা করেছেন তিনি৷ তাঁর মতে, ‘‘যার দেহ রক্তাক্ত হয় নর পশুদের আঘাতে, যার মুণ্ডু দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন হয় উগ্রপন্থিদের অস্রাঘাতে, তার বাবা-মা, স্বামী-স্ত্রী আর পুত্র-কন্যাকেই কেবল বইতে হয় দেহের ভার আর অসহায়ত্বের স্মৃতি৷ সাথে তীব্র মানসিক যন্ত্রণা৷ আমাদের রাষ্ট্র, সরকার, সমাজ এই দায় নিতে সদা প্রস্তুত নয়৷ আর নয় বলেই ২৪ ঘণ্টা পার হলেও এখনো রাষ্ট্র-সরকার ঘাতকদের ধরতে পারেনি৷ অভিজিৎ-এর মৃত্যু এখন হিমালয় পাহাড়ের চাইতেও ভারি হয়ে চেপে বসে আছে তাঁর পিতার কাঁধে৷ শুধু পিতার নয় গোটা রাষ্ট্রের কাঁধে৷ অভিজিৎদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ এই রাষ্ট্র কী উত্তর দেবে?''
তাঁর এই লেখা প্রকাশিত হওয়ার পরই অবশ্য ব়্যাব হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে৷ নাম শাফিউর রহমান ফারাবী৷ তার বিরুদ্ধে ফেসবুকে অভিজিৎকে হত্যার আগাম ঘোষণা বা হুমকি দেয়ারও অভিযোগ আছে৷
সামহয়্যারইন ব্লগেই মোহাম্মদ গালিব মেহেদী খাঁন-এর লেখার শিরোনাম, ‘‘আসুন আমরা মৃত্যুর জন্য প্রস্তুতি নিয়ে রাখি৷'' খুব হতাশা থেকেই কথাটা লিখেছেন৷ গালিব তাঁর লেখা শেষ করেছেন এভাবে, ‘‘এ দেশে যারা প্রথম কোমলমতি শিশুদের হাতে ব্লগারদের ফাঁসি চাই সম্বলিত প্ল্যাকার্ড তুলে দিয়েছিল, তাদের আমরা সবাই জানি৷ তাদের কী কোনো বিচার হয়েছিল? হয়নি৷ গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনে সম্পৃক্ত হয়ে রাজিব হায়দার নামের যে ব্লগার ‘নাস্তিক' বলে পরিগণিত হয়ে ঠিক একইভাবে হত্যাকাণ্ডের শিকার হলো, সেই হত্যাকাণ্ডের বিচারের কতদূর? ফারাবী কোথায়? এ দেশে ফারাবীকে (তার ভাষায়) নাস্তিকদের হত্যার দায়িত্বই বা কে দিল? এ প্রশ্নগুলির উত্তর যতদিন পর্যন্ত না মিলবে, ততদিন পর্যন্ত এমন হত্যাকাণ্ড চলতেই থাকবে৷ যে দেশের একজন সাধারণ মানুষ নিজেকে ইসলামের হেফাজতকারী দাবি করে নেতা বনে যায়৷ সে বা তাঁর অনুসারীরা তো নেতৃত্ব ফলাতে অনেক কিছুই করবে এটাই স্বাভাবিক৷ আসুন হয় আমরা নির্বোধ নির্বাক হয়ে যাই নয়ত এমন মৃত্যুর জন্য প্রস্থুতি নিয়ে রাখি৷''
সংকলন: আশীষ চক্রবর্ত্তী
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ