অনিশ্চয়তায় ‘প্রকল্প ইউরোপ’
২৭ মে ২০১৪জার্মানিতে ইইউ-বিরোধী সেন্টিমেন্ট মোটামুটি ইউরো-বিরোধী সেন্টিমেন্টে সীমিত, বলা চলে, সেটাই বাঁচোয়া৷ ‘অল্টারনেটিভ ফর জার্মানি’, অর্থাৎ ‘জার্মানির জন্য বিকল্প’ বা এএফডি দল প্রথম আবির্ভাবেই সাত শতাংশ ভোট পেয়েছে, যেখানে উদারপন্থিদের মতো সুপ্রতিষ্ঠিত দল তিন শতাংশের কাছাকাছি নেমে গেছে৷ উগ্র দক্ষিণপন্থি এনপিডি দল সাকুল্যে ইউরোপীয় সংসদে একটি আসন পাবে বটে, কিন্তু তাদের জোড়োয়া রিপাবলিকানদের সেটা পাবারও সম্ভাবনা নেই৷
নেদারল্যান্ডসে গের্ট উইল্ডার্স-এর ইসলাম বিরোধী, ইইউ-নিন্দুক ডাচ ফ্রিডম পার্টি; ডেনমার্কে অভিবাসন বিরোধী পিপলস পার্টি; হাঙ্গেরিতে চরম দক্ষিণপন্থি, জাতিবাদী বলে নিন্দিত জবিক দল, সকলেই সফল৷ ওদিকে ইইউ-এর দুই প্রধান অংশীদার দেশ ফ্রান্স ও ব্রিটেনে যা ঘটেছে, তাকে ফরাসি প্রধানমন্ত্রী মানুয়েল ভাল্স-এর ভাষায় ‘‘রাজনৈতিক ভূমিকম্প’’ ছাড়া আর কিছু বলা চলে না৷
ফ্রান্সে মারিন ল্য পেন-এর অভিবাসন এবং ইউরো বিরোধী ন্যাশনাল ফ্রন্ট ২৫ শতাংশ ভোট পেয়ে প্রথম স্থানে৷ ব্রিটেনে নাইজেল ফারাজ-এর ইউকে ইনডিপেন্ডেন্স পার্টি বা ইউকেআইপি প্রায় ২৮ শতাংশ ভোট পেয়ে প্রথম হওয়ায় ইইউ-তে ব্রিটেনের দীর্ঘমেয়াদি অবস্থান নিয়েই – সংশয় না হলেও – প্রশ্ন দেখা দিয়েছে৷ আর কিছু না হলে, ইউকেআইপি-র সাফল্যের ফলে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন যদি ইউরোপের প্রতি আরো কড়া অবস্থান নেন, তাহলে স্কটল্যান্ডের প্রো-ইউরোপীয় ভোটাররা সেপ্টেম্বরের গণভোটে ব্রিটেন পরিত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিতে পারে৷
কিন্তু এবারকার ইউরোপীয় নির্বাচনের ফলে ইউরোপের বৈধতা যে দুর্বলতর হয়েছে, তা-তে কোনো সন্দেহ নেই, বলছেন বিশ্লেষকরা৷ দ্বিতীয়ত, স্থায়িত্বের জন্য ইউরোপের প্রয়োজন ফ্রান্স ও জার্মানির মধ্যে ভারসাম্য৷ অথচ ফ্রান্স অর্থনৈতিক বিচারে ইটালি অথবা গ্রিসের দিকে এগোচ্ছে; আবার রাজনৈতিক বিচারে ইউরোপের সঙ্গে ফ্রান্সের সম্পর্ক ক্রমেই ব্রিটেনের মতো হয়ে যাচ্ছে৷
এই পরিস্থিতিতে জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল সোমবার বার্লিনে একটি সাংবাদিক সম্মেলনে বলেছেন, উগ্র দক্ষিণপন্থিদের এই সাফল্য ‘‘লক্ষণীয় এবং দুঃখজনক’’৷ তাঁর মতে, ভোটারদের ফিরিয়ে আনার জন্য ‘‘প্রতিযোগিতার ক্ষমতা, প্রবৃদ্ধি এবং চাকুরি সৃষ্টির উপর মনোযোগ দেওয়াটাই হলো আশাভঙ্গের সেরা উত্তর৷’’
ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট কে হবেন? এই প্রশ্নের কোনো সহজ জবাবও ম্যার্কেলের পক্ষে দেওয়া সম্ভব হয়নি৷ রক্ষণশীল ইউরোপিয়ান পিপলস পার্টি জোটের জঁ-ক্লোদ ইয়ুংকার-এর শেষ নির্বাচনি প্রচারসভায় ম্যার্কেল নিজে উপস্থিত ছিলেন৷ কিন্তু সোমবার তিনি স্পষ্ট করে দেন যে, ইইউ-এর প্রধান কর্মকর্তা নির্ধারণের আগে ব্যাপক আলাপ-আলোচনার প্রয়োজন পড়বে৷
তার কারণটা সহজ: নির্বাচনে ইপিপি পেয়েছে ২১৪টি আসন; অপরদিকে সমাজতন্ত্রীরা পেয়েছে ১৮৯টি আসন; অথচ ৭৫১ জন সদস্যের ইউরোপীয় সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজন ৩৭৬টি আসনের৷ ওদিকে সমাজতন্ত্রীদের হয়ে জার্মানির এসপিডি দলের সভাপতি সিগমার গাব্রিয়েল পরিষ্কার করে দিয়েছেন যে, তাঁরা এখনও মার্টিন শুলৎস-এর জয়ের আশা ছাড়ছেন না৷
এসি/ডিজি (ডিপিএ, রয়টার্স, এএফপি)