ইউক্রেনে শান্তির উদ্যোগে চীনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন
২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩এক বছর আগে ইউক্রেনের উপর হামলার শুরু থেকে চীন নিজেকে নিরেপক্ষ হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করছে৷ বার বার শান্তির কথা বললেও বেইজিং এখনো পর্যন্ত হামলার জন্য রাশিয়ার সরাসরি নিন্দা করে নি৷ উলটে পশ্চিমা বিশ্বের বিরুদ্ধে প্ররোচনার অভিযোগ করেছে৷ সেইসঙ্গে ইউক্রেনকে অস্ত্র সরবরাহেরও বিরোধিতা করছে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং-এর প্রশাসন৷ তবে চীন এখনো প্রকাশ্যে রাশিয়ার সঙ্গে কোনো সামরিক সহায়তার পথে যায় নি৷ শুধু পরমাণু অস্ত্র প্রয়োগের হুমকির তীব্র বিরোধিতা জানিয়েছে বেইজিং৷
শুক্রবার চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইউক্রেন সংকটের ‘রাজনৈতিক রফা’ হিসেবে ১২ দফার পরিকল্পনাসহ একটি নথি প্রকাশ করেছে৷ তাতে রাশিয়া ও ইউক্রেনের সংলাপের লক্ষ্যে সব পক্ষের সমর্থনের অনুরোধ জানানো হয়েছে৷ সেইসঙ্গে বেসামরিক জনগণের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে দুই পক্ষের উদ্দেশ্যে আন্তর্জাতিক মানবিক আইন মেনে চলার ডাক দিয়েছে চীন৷
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চীনের এই পরিকল্পনার কড়া সমালোচনা করেছে৷ মার্কিন প্রেসিডেন্টের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেক সালাইভান সিএনএন নেটওয়ার্কে বলেন, রাশিয়া ইউক্রেনের উপর হামলা বন্ধ করে সৈন্য প্রত্যাহার করলে আগামীকালই যুদ্ধ বন্ধ হতে পারে৷ অর্থাৎ ১২ দফা পরিকল্পনার বদলে চীন শুধু একটি বিষয় উল্লেখ করলেই পারতো৷ সালাইভানের মতে, সব দেশের সার্বভৌমত্ব মেনে নেবার কথা বলাই যথেষ্ট৷ তিনি মনে করিয়ে দেন, যে ইউক্রেন, ন্যাটো বা অ্যামেরিকা রাশিয়ার উপর হামলা চালাচ্ছে না৷
গত কয়েক দিনে ইউক্রেন সংকটকে ঘিরে চীনের জোরালো কূটনৈতিক তৎপরতা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠছে৷ চীনের শীর্ষ কূটনীতিক মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলন ও ইউরোপের কয়েকটি রাজধানী সফরের পর মস্কোয় গিয়ে রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক আরও নিবিড় করার কথা বলেছেন৷ অন্যদিকে চীন নিজেকে নিরপেক্ষ মধ্যস্থাকারী হিসেবে দাবি করে শান্তির পক্ষে সওয়াল করে চলেছে৷ ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কি বৃহস্পতিবার বলেন, তিনি চীনের তরফ থেকে কোনো শান্তি পরিকল্পনা দেখেন নি৷ বেইজিং-এর প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে তিনি তাদের প্রস্তাব সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া জানানোর আগ্রহ দেখিয়েছেন৷
জার্মানির ‘ডেয়ার স্পিগেল’ পত্রিকার সূত্র অনুযায়ী চীনের এক কোম্পানি রাশিয়াকে ১০০টি কামিকাজি ড্রোন সরবরাহের বিষয়ে আলোচনা চালাচ্ছে৷ এপ্রিল মাসে সেই ড্রোন হস্তান্তর করা হতে পারে৷ পত্রিকার দাবি, শিয়ান বিংগো ইনটেলিজেন্ট এভিয়েশন টেকনোলজি নামের ড্রোন কোম্পানি তাদের জেড-টি-১৮০ মডেলের ১০০টি প্রোটোটাইপ তৈরি করতে প্রস্তুত৷ সেই ড্রোন নাকি ২৫ থেকে ৫০ কিলো ওজনের অস্ত্র বহন করতে পারে৷ ইরানে তৈরি ‘শাহিদ-১৩৬’ ড্রোনের সঙ্গে সেটির মিল রয়েছে৷ রাশিয়া সেই ড্রোন কাজে লাগিয়ে ইউক্রেনে ব্যাপক ধ্বংসলীলা চালিয়েছে৷ ‘ডেয়ার স্পিগেল’ আরও জানিয়েছে, যে বিংগো খোদ রাশিয়ায় উৎপাদন কেন্দ্র খোলার পরিকল্পনা করছে৷ উল্লেখ্য, সম্প্রতি অ্যামেরিকা, জার্মানিসহ অন্যান্য পশ্চিমা দেশ রাশিয়াকে অস্ত্র সরবরাহের বিষয়ে চীনকে সতর্ক করে দিয়েছে৷ জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস এক সাক্ষাৎকারে বলেন, তিনি চীনের প্রতিনিধিদের স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, যে এমন পদক্ষেপ একেবারেই মেনে নেওয়া হবে না৷
এসবি/এসিবি (রয়টার্স, এএফপি)