1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ইউক্রেন সংকট কি এবার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে?

৩০ সেপ্টেম্বর ২০২২

ইউক্রেনের পূর্ব ও দক্ষিণের কিছু অংশ রুশ ভূখণ্ড হিসেবে ঘোষণা করার পরিণাম নিয়ে দুশ্চিন্তা বাড়ছে৷ সীমিত যুদ্ধ আরো বড় আকারে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা আর উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না৷

https://p.dw.com/p/4HZKf
পুটিন ও জেলেন্সকি
ছবি: A. Gorshkov/SPUTNIK/AFP/Getty Images/Presidency of Ukraine/AA/picture alliance

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে ইউক্রেনের উপর রাশিয়ার হামলা শুরু হবার পর থেকে সংকট নিষ্পত্তির কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না৷ রাশিয়া প্রথমদিকে গোটা ইউক্রেনের উপর হামলা শুরু করলেও প্রবল প্রতিরোধের ধাক্কায় সে দেশকে মূলত পূর্ব ও দক্ষিণে পিছিয়ে আসতে হয়েছে৷ সম্প্রতি ইউক্রেনের সেনাবাহিনী অত্যন্ত দ্রুত গতিতে রুশ অধিকৃত এলাকার বেশ কিছু অংশ আবার ছিনিয়ে নিয়েছে৷ আরও জমি হাতছাড়া হবার আগে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন এবার রুশ বাহিনীর দখলে থাকা দুটি অঞ্চলকে আনুষ্ঠানিকভাবে রাশিয়ায় অন্তর্গত করার সিদ্ধান্ত নিলেন৷ বাকি দুটি অঞ্চলকে ‘স্বাধীন’ ঘোষণা করে ভবিষ্যতে রাশিয়ার অন্তর্গত করার ব্যবস্থাও করে রাখলেন৷ তড়িঘড়ি করে তথাকথিত ‘গণভোট’ আয়োজন করে তিনি কয়েক দিনের মধ্যেই গোটা প্রক্রিয়া শেষ করার পথ বেছে নিলেন৷

পুটিনের এমন ‘তাড়া’-র পেছনে অবশ্যই কিছু কারণ বেশ স্পষ্ট৷ ‘তিন দিনের বিশেষ সামরিক অভিযান’ মাসের পর মাস ধরে চলছে৷ রুশ সেনাবাহিনীতে হতাহতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে৷ অস্ত্র, গোলাবারুদ, সামরিক সরঞ্জাম দ্রুত কমে চলেছে৷ অন্যদিকে পশ্চিমা মদতপুষ্ট ইউক্রেনের বাহিনী অনেক কম লোকবল ও সরঞ্জাম সত্ত্বেও রুশ সৈন্যদের কোণঠাসা করে দিচ্ছে৷ মরিয়া হয়ে তিন লাখ রুশ পুরুষকে যুদ্ধক্ষেত্রে পাঠানোর সিদ্ধান্ত রাশিয়ায় প্রবল সমালোচনা, প্রতিবাদ-বিক্ষোভ ও গণ হারে দেশত্যাগের কারণ হয়ে উঠেছে৷ কিছু একটা ‘সাফল্য’ দেখিয়ে নিজের অবস্থান শক্ত করতে এবং দেশের মানুষকে কিছুটা শান্ত করতে চান রুশ প্রেসিডেন্ট৷ ২০১৪ সালে ক্রাইমিয়ার পর ২০২২ সালে ইউক্রেনের পূর্ব ও দক্ষিণ অংশকেও রাশিয়ার ভূখণ্ডে অন্তর্ভুক্ত করে সেই লক্ষ্যই পূরণ করার চেষ্টা করছেন পুটিন৷ এমনকি এমন পদক্ষেপকেই ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’-এর মূল লক্ষ্য হিসেবে ঘোষণা করে সেই অভিযানের সমাপ্তিও ঘোষণা করতে পারেন তিনি৷ এমন ‘জয়' তুলে ধরে এক ঢিলে কয়েকটি পাখি মারতে পারেন পুটিন৷

ইউক্রেন থেকে জবরদখলকারীদের তাড়ানোর যুদ্ধে পশ্চিমা বিশ্ব অভূতপূর্ব মদত দিয়ে আসছে৷ রাশিয়া এমন সামরিক সহায়তার বিরুদ্ধে তর্জনগর্জন করলেও বাস্তবে পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে সামরিক সংঘাতের পথে যায় নি৷ কিন্তু এবার ইউক্রেনের বাহিনী ‘রুশ ভূখণ্ড’ বা ‘স্বাধীন অঞ্চল’-এর নিয়ন্ত্রণ ফিরিয়ে নেবার জন্য অভিযান চালালে রাশিয়া কী করতে পারে, সে বিষয়ে জল্পনাকল্পনা চলছে৷ উল্লেখ্য, ইউক্রেনের বাহিনীও এতকাল রুশ অধিকৃত ক্রাইমিয়া উপদ্বীপ ফিরিয়ে নেবার সক্রিয় প্রচেষ্টা চালায়নি৷

শুক্রবারের পর দুই পক্ষই কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হবে, সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই৷ ইউক্রেনের বাহিনী সদ্য ঘোষিত অবৈধ রুশ ভূখণ্ডে অভিযান চালিয়ে আরও জমি ফিরিয়ে নিতে পারলে পুটিনের কর্তৃত্ব আবার প্রশ্নের মুখে পড়বে৷ এমন হামলা বরদাস্ত না করে পুটিন যদি তাঁর হুঁশিয়ারিকে সত্য প্রমাণ করে ইউক্রেনের উপর ছোট আকারের পরমাণু বোমা নিক্ষেপ করে বসেন, তার পরিণতির উপর কারও নিয়ন্ত্রণ থাকবে না৷ চীন, ভারত ও তুরস্কের মতো দেশের পক্ষেও রাশিয়ার প্রতি নরম মনোভাব দেখানো কার্যত অসম্ভব হয়ে উঠবে৷

পশ্চিমা বিশ্ব এতকাল ইউক্রেনকে যথেষ্ট মদত দিলেও সরাসরি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি এড়াতে বদ্ধপরিকর থেকেছে৷ পুটিনের সঙ্গে যোগাযোগও ছিন্ন করে নি অ্যামেরিকা ও ইউরোপ৷ কিন্তু শুক্রবারের পর সেই সব হিসেব গোলমাল হয়ে যাচ্ছে৷ একাধিক কিস্তিতে  ইউক্রেনের জবরদখল মেনে নেওয়া পশ্চিমা বিশ্বের পক্ষে একেবারেই সম্ভব নয়৷

এসবি/কেএম