ইউরোপে দারিদ্র্য
১১ জানুয়ারি ২০১৩চলতি বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার কারণে বেশ খেসারত দিতে হচ্ছে ইউরোপকে৷ বেকারত্বের হার বাড়ছে, যাঁদের চাকরি নেই তাঁদের পক্ষে নতুন চাকরি পাওয়া দুরূহ হয়ে উঠছে৷ তাই অনেক মানুষই ক্রমশ দারিদ্র্যের দিকে ধাবিত হচ্ছেন৷ ইউরোপীয় কমিশনের চাকরি, সামাজিক বিষয়াদি এবং অন্তর্ভুক্তি বিষয়ক কার্যালয় থেকে গত মঙ্গলবার প্রকাশিত এক প্রতিবদনে জানা গেছে এসব তথ্য৷
এই কার্যালয়ের দায়িত্বে রয়েছেন লাজলো আন্ডোর৷ সর্বশেষ প্রতিবেদনের প্রকাশকালে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘‘ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে পারিবারিক আয় কমছে এবং দারিদ্র্যের ঝুঁকি ক্রমশ বাড়ছে৷ কিছু মানুষ অন্যদের চেয়ে বেশি ভুগছে৷ বিশেষ করে মধ্য বয়সীরা, বেকার নারীরা এবং একক মায়েরা অন্যদের তুলনায় বেশি দারিদ্রের ঝুঁকিতে রয়েছে৷''
প্রসঙ্গত, অর্থনৈতিক মন্দার যখন শুরু হয়, তখন কমিশন এবং ইইউ সদস্য দেশগুলো সাধারণ মানুষকে আশ্বাস দিয়েছিল এই বলে যে, সামাজিক ব্যবস্থা মন্দার ধাক্কা কিছুটা হলেও সামাল দেবে এবং স্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করবে৷ তবে কর থেকে আয় কমে যাওয়ায় এবং ব্যয় বেড়ে যাওয়ায়, অনেক দেশের পক্ষে মন্দার ফলে পারিবারিক আয়ে যে ঘাটতি তৈরি হয়েছে, তা পূরণ অসম্ভব হয়ে পড়ছে, বলেন আন্ডোর৷
অস্ট্রিয়া এবং স্পেন – ব্যবধান বিশাল
অর্থনৈতিক মন্দার কারণে ইউরোপের বিভিন্ন অঞ্চলের মধ্যে নানা ধরনের ব্যবধানও ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে উঠছে৷ উত্তরাঞ্চল মোটামুটি স্থিতিশীল অবস্থায় থাকলেও দক্ষিণের অবস্থা ক্রমশ পড়তির দিকে৷ উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে বেকারত্বের কথা৷ ইউরোপীয় পরিসংখ্যান কর্তৃপক্ষ, ইউরোস্ট্যাটের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, অস্ট্রিয়াতে এখন বেকারত্বের হার ৪ দশমিক পাঁচ শতাংশ৷ অন্যদিকে, স্পেনে এই হার ২৬ দশমিক ছয় শতাংশ৷
আন্ডোর এই বিষয়ে বলেন, ‘‘সদস্য দেশগুলোর মধ্যে বেকারত্বের ঘটনায় তারতম্য রয়েছে৷ দীর্ঘমেয়াদি বেকারত্ব আসলে দক্ষ কর্মীর ঘাটতির কথাই মনে করিয়ে দেয়৷ প্রয়োজনীয় চাকুরির জন্য সঠিক দক্ষতা প্রয়োজন৷ পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করে দেখা যাচ্ছে, বিশেষ করে দক্ষিণ এবং পূর্ব ইউরোপের কিছু দেশে চাকরি বাজারের চাহিদা এবং চাকুরি প্রার্থীদের দক্ষতার মধ্যে সামঞ্জস্যের অভাব রয়েছে৷''
নতুন প্রস্তাব
এমতাবস্থায় ইউরোপীয় কমিশন নতুন কিছু পরিকল্পনা হাতে নিচ্ছে৷ কর্মীদের দক্ষতা বৃদ্ধি, শ্রম-বাজারের সংস্কার এবং সামাজিক সুযোগ-সুবিধা ব্যবস্থায় কিছু পরিবর্তনের পরামর্শ দিচ্ছে কমিশন৷ এক্ষেত্রে একটি ন্যূনতম বেতন কাঠামো গড়ে তোলার প্রস্তাবও আসছে৷
ইউরোপীয় ট্রেড ইউনিয়ন কনফেডারেশন কমিশনের কিছু প্রস্তাবকে সমর্থন করেছে৷ এই গোষ্ঠীর উপ-মহাসচিব পেট্রিক ইট্শার্ট মনে করেন, ন্যূনতম বেতন কাঠামো এবং কর্মীদের দক্ষতা বাড়ানোর প্রস্তাবে কোনো আপত্তি তাদের নেই৷ তবে শ্রম বাজারে সংস্কার নতুন চাকুরি সৃষ্টি করবে না, বলে মত তাঁর৷ তিনি বরং নতুন করে একটি ‘মার্শাল প্ল্যান ফর ইউরোপ' চান৷
উল্লেখ্য, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের পুর্নগঠনে এই পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল৷ এর আওতায় বড় মাপের আর্থিক সহায়তা কর্মসূচি পরিচালনা করা হয়৷ এই ধরনের পরিকল্পনা এখন আবারো প্রয়োজন বলে মনে করেন ইট্শার্ট৷
আর্থিক মন্দার মাঝে কিছু দেশ অবশ্য সুখবরও দিচ্ছে৷ জার্মানি, ফ্রান্স এবং পোল্যান্ডে পারিবারিক আয় বেড়েছে, যা ইতিবাচক৷