ইউরোপীয়ান ইউনিভার্সিটি ভিয়াদ্রিনা
৮ আগস্ট ২০১১ফ্রাঙ্কফুর্ট আন ডেয়ার ওডার শহরটি জার্মানির পূর্বে অবস্থিত৷ রাজধানী বার্লিন থেকে কিছুটা দূরে৷ এই শহরেই ১৯৯১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ইউরোপীয়ান ইউনিভার্সিটি ভিয়াদ্রিনা৷ এই বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে মাত্র তিনটি অনুষদ৷ ব্যবসা প্রশাসন অনুষদ, আইন অনুষদ এবং সমাজ বিজ্ঞান অনুষদ৷ এই অনুষদগুলো প্রায় ২১টি বিভিন্ন বিষয় নিয়ে পড়াশোনার সুযোগ দিচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়টি৷ বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রামে কাজ করছে ইউরোপীয়ান ইউনিভার্সিটি ভিয়াদ্রিনা৷
আইন অনুষদ কাজ করছে কোস্টা রিকা, ইকোয়েডর, কাজাখস্তান, কলম্বিয়া, মেক্সিকো এবং রাশিয়ার সঙ্গে৷ অর্থনীতি অনুষদ কাজ করছে আর্জেন্টিনা, ইকোয়েডর, কলম্বিয়া, মেক্সিকো, রাশিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, উরুগুয়ে এবং অ্যামেরিকার সঙ্গে৷ আর সমাজ বিজ্ঞান বিভাগ কাজ করছে আর্জেন্টিনা, চিলি, কলম্বিয়া, মেক্সিকো, রাশিয়া এবং অ্যামেরিকার সঙ্গে৷ প্রতি বছর এসব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছাত্র-ছাত্রীরা ইউরোপীয়ান ইউনিভার্সিটি ভিয়াদ্রিনায় আসছে এবং এখানে থেকেও ছাত্র-ছাত্রীরা বিভিন্ন দেশে যাচ্ছে৷
পেট্রা ভেবার ইন্টারন্যশনাল অফিসে কাজ করছেন দীর্ঘদিন ধরে৷ তিনি জানালেন এই মুহূর্তে ঠিক কত ছাত্র-ছাত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছে৷ পেট্রা ভেবার বললেন,‘‘ এই মুহূর্তে ১,৪২১ জন বিদেশি ছাত্র-ছাত্রী ইউরোপীয়ান ইউনিভার্সিটি ভিয়াদ্রিনায় পড়াশোনা করছে৷ অর্থাৎ ২৩ শতাংশ ছাত্র-ছাত্রীই বিদেশি৷ জার্মানির অন্য কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে এত বিদেশি ছাত্র-ছাত্রী নেই৷ সব মিলে আমাদের এখানে পড়াশোনা করছে ছয় হাজারেরও বেশি ছাত্র-ছাত্রী৷''
পড়াশোনার মেলার আয়োজন করা হয় নিয়মিত
জার্মানির খুব বেশি বিশ্ববিদ্যালয় ভারত-বাংলাদেশের ছাত্র-ছাত্রীরা চেনে না৷ কীভাবে এসব বিশ্ববিদ্যালয় প্রচারাভিযান চালায়? কীভাবে ভর্তির জন্য বিদেশি ছাত্র-ছাত্রীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়? ভেবারের ভাষ্য,‘‘ আমরা সবসময়ই বিভিন্ন দেশে ‘বিশ্ববিদ্যালয় মেলা' বা ‘পড়াশোনা মেলা'র আয়োজন করি৷ এসব মেলায় প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় নিজেদের সম্পর্কে একটা ছবি তুলে ধরে৷ এছাড়া আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট তিনটি ভাষায় তৈরি৷ আর আমরা বিদেশের মাটিতে স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে কাজ করি৷ আমাদের দু'জন সহকর্মী বিভিন্ন উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শনের যান, কী কী বিষয় পড়ানো হচ্ছে তা খতিয়ে দেখেন৷ এছাড়া আমরা কয়েক সপ্তাহের জন্য বিদেশি ছাত্র-ছাত্রীদের এখানে আনি৷ তারা ক্যাম্পাসের পরিবেশ খুব কাছ থেকে দেখে৷ তখন তাদের খরচ আমরাই বহন করি৷''
ইউরোপীয়ান ইউনিভার্সিটি ভিয়াদ্রিনার বৈশিষ্ট্য
ইউরোপীয় ইউনিভার্সিটি ভিয়াদ্রিনার বৈশিষ্ট্য বা বিশেষত্ব কী? কেন একজন বিদেশি ছাত্র বা ছাত্রী এখানে পড়ার আগ্রহ দেখাবে? এই প্রশ্নের উত্তরে পেট্রা ভেবার জানালেন,‘‘এখানে অনেক কিছু বলার আছে৷ প্রথমেই বলতে হবে ভিয়াদ্রিনা বিশ্ববিদ্যালয় অত্যন্ত আন্তর্জাতিক মানের – এর অন্যতম কারণ হল বিপুল পরিমাণে বিদেশি ছাত্র-ছাত্রীর সমাগম৷ আমরা যেহেতু পোল্যান্ডের সীমানায় অবস্থিত তাই আমাদের অনেক কর্মসূচি পোল্যান্ড এবং পূর্ব ইউরোপের অনেক দেশকে ঘিরে৷ এছাড়া জার্মানির অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার খরচের ভিয়াদ্রিনার পড়াশোনার খরচ তূলনামূলকভাবে অনেক কম৷ এর কারণ হল ফ্রাঙ্কফুর্ট আন ডেয়ার ওডার শহরে থাকতে খুব বেশি খরচের প্রয়োজন নেই৷ আমাদের এই বিশ্ববিদ্যালয় গত বছর বিশ্ববিদ্যালয় ব়্যাংকিং-এ জার্মানির প্রথম পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে উঠে এসেছে৷ বিশেষ করে আমাদের অর্থনীতি এবং বিজ্ঞান অনুষদ বেশ সুনাম কুড়িয়েছে৷''
কীভাবে নিজেকে তৈরি করবেন?
ভারত-বাংলাদেশ থেকে যেসব ছাত্র-ছাত্রী জার্মানিতে পড়তে আসতে চায়, তারা কীভাবে নিজেদের তৈরি করবে? বিশ্ববিদ্যালয় কী প্রত্যাশা করে এসব অতিথিদের কাছ থেকে? পেট্রা ভেবার বললেন,‘‘আমরা সবার আগে বলবো জার্মান ভাষার কথা৷ কেউ যদি জার্মান ভাষায় পড়তে চায় তাহলে তাকে খুব ভালভাবে ভাষাটি জানতে হবে৷ এছাড়া ইংরেজিও জানা প্রয়োজন যদি ছাত্র বা ছাত্রীটি ইংরেজিতে পড়তে চায়৷ ভারত-বাংলাদেশ এবং পাকিস্তানের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য এটা কোন সমস্যা নয় বলে আমি করি৷ আর অবশ্যই ছাত্র বা ছাত্রীকে আমাদের দেয়া প্রতিটি শর্ত পূরণ করতে হবে৷ আমরা সব সময়ই খোলা মনের ছাত্র-ছাত্রীদের আশা করি আমাদের ক্যাম্পাসে৷ বিদেশের মাটিতে নতুন ভাষা, নতুন সংস্কৃতিকে সাদরে তারা গ্রহণ করবে একই সঙ্গে নিজের দেশের ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতিকে তুলে ধরবে৷ এছাড়া পড়াশোনায় নিজেদের বেশ ভালভাবে সম্পৃক্ত করবে, ক্লাসে সক্রিয় হবে – এগুলোই আমরা আশা করি৷''
প্রতিবেদন: মারিনা জোয়ারদার
সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন