ইউরোপেও মশার উপদ্রব
২১ জুলাই ২০১৩পুরুষ মশাগুলি নিরীহ৷ তারা পছন্দ করে উদ্ভিদের রস৷ ফোটায় না হুল৷ এদেরকে বাঁচিয়ে রাখা যায়৷ রোমশ শুঁড় দেখে বোঝা যায় যে এগুলি পুরুষ৷ কীট বিশেষজ্ঞ স্ভেন ক্লিম্পেল হেসে বলেন, ‘‘প্রত্যেকটি মৃত মশা একটি ভালো মশা, আর তা যদি নারী মশা হয় তাহলে তো কথাই নেই৷'' কেননা এইগুলিই উপদ্রব করে বেশি৷
হুল ফুটিয়ে প্রচুর রক্ত শুষে নেয় তারা৷ তখন এদের ওজনও বেড়ে দ্বিগুণ হয়ে যায়৷ ডিমের জন্য তাদের প্রয়োজন হয় দুই থেকে পাঁচ মিলিগ্রাম রক্ত৷ এই ভাবে মশককূলের বংশ বিস্তার হতে থাকে৷ রক্ত চোষার সময় ভাইরাস, প্যারাসাইট ও নানা জীবাণুর সংক্রমণ ঘটাতে পারে মশারা৷ এর ফলে ম্যালেরিয়া, স্লিপিং ডিজিজ, ডেঙ্গু ইত্যাদি রোগ হতে পারে৷ এই সব মশা বাহিত রোগের প্রকোপ এশিয়া, আফ্রিকা কিংবা ল্যাটিন অ্যামেরিকায় দেখা যায় বেশি৷ অর্থাৎ উষ্ণ ও স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে বিস্তৃত হয় মশারা৷ বলেন হামবুর্গের ট্রপিক্যাল মেডিসিন ইন্সটিটিউটের এগব্যার্ট টানিশ৷ ‘‘আর গরম পড়লে মশার ভেতরে থাকা ভাইরাসরাও দ্রুত বাড়তে থাকে৷''
উষ্ণ অঞ্চলের মশারা ইউরোপে আসছে
প্রায়ই দেখা যায় উষ্ণ অঞ্চলের মশারা ইউরোপ তথা জার্মানিতে ঢুকে পড়ছে৷ যেমন এশিয়ার বাঘ মশা ও পীতজ্বর মশার উপস্থিতি দেখা গিয়েছে এখানে৷
গবেষকরা এক সমীক্ষায় জার্মানির ৫৫টি জায়গা থেকে ৭৫,০০০ মশা সংগ্রহ করেছিলেন৷ এর মধ্যে তাঁরা ৫০ রকমের বিভিন্ন ধরনের দেশি-বিদেশি মশা আবিষ্কার করেন৷ ‘‘আমরা লক্ষ্য করেছি, কিছু কিছু এলাকায় অভিবাসী মশারা এসে থিতু হয়৷ আর অন্য মশারা মাঝে মধ্যে দেখা দেয়৷'' বলেন গবেষক এগব্যার্ট টানিশ ও তাঁর সহকর্মী স্ভেন ক্লিম্পেল৷
বিভিন্ন দেশের মশারা পর্যটক ও ব্যবসায়ীদের সাথে জার্মানিতে চলে আসে৷ কিছুদিন তারা বেঁচেও থাকে৷ তারপর আবার শীত এলে বিলীন হয়ে যায়৷ কিন্তু জার্মানিতে আবহাওয়ার পরিবর্তন হচ্ছে৷ গরম বাড়ছে সেই সাথে শীতের সময় কমছে৷ বলেন স্ভেন ক্লিম্পেল৷ ‘‘জার্মানির কোনো কোনো অঞ্চলে গড় তাপমাত্রা আগের চেয়ে তুলনামূলক বেড়েছে এবং ভেজা ভেজা হচ্ছে আবহাওয়া৷ মশাদের বেঁচে থাকার জন্য আদর্শ পরিবেশ বলা যায়৷
দেশি মশারাও বিপজ্জনক হতে পারে
শুধু বিদেশি মশাই নয়, জার্মানির মশারাও বিপজ্জনক হতে পারে বলে মনে করেন গবেষকরা৷ ‘‘আমাদের দেশীয় মশারাও এই আবহাওয়ায় বেশ আরাম পায়৷ বংশ বিস্তারেও পিছিয়ে থাকে না তারা৷ বছরে কয়েক প্রজন্মের জন্ম দেয়৷ এই মশাগুলিও মারাত্মক জীবাণু বহন করতে পারে৷'' বলেন গবেষক টানিশ ও ক্লিম্পেল৷
কিছুদিন আগে কুকুরের চর্মের কীটের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে জার্মান মশার মধ্যে৷ আসলে এই কীটের নিবাস আফ্রিকা, এশিয়া ও দক্ষিণ ইউরোপে৷ এটি কুকুর, শিয়াল, নেউল ইত্যাদি প্রাণীর দেহে থাকে৷ কোনো মশা যদি সংক্রমিত প্রাণীর রক্ত চোষে তাহলে তার দেহেও জীবাণু ঢুকে পড়ে৷ এরপর এটি মানুষকে হুল ফুটিয়ে সংক্রমিত করতে পারে৷ অবশ্য এই কীট তেমন মারাত্মক নয়৷ দ্রুতই মারা যায় এটি৷
বিভিন্ন দেশ থেকে কোন কোন জীবাণু এখানে আসছে ও বিস্তৃত হচ্ছে, এ ব্যাপারে লক্ষ্য রাখাটা খুবই জরুরি৷ বলেন স্ভেন ক্লিম্পেল৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘আগামী ১০ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ইউরোপ বিশেষ করে জার্মানিতে রক্তচোষা কীটপতঙ্গের মাধ্যমে সংক্রামক ব্যাধি আরো বিস্তৃত হবে৷''