অবৈধ বাংলাদেশিদের নিয়ে বৈঠক
২৯ আগস্ট ২০১৭ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)-এর দাবি, ২০০৮ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ৯৩ হাজার ৪৩৫ জন বাংলাদেশিকে অবৈধভাবে প্রবেশের সময় আটক করা হয়েছে৷ চলতি বছর আটক হয়েছেন ৮ হাজার৷ তাঁরা বলছেন, ইউরোপিয় ইউনিয়নের ২৮ দেশে এক লাখেরও বেশ অবৈধ বাংলাদেশি আছেন৷ তারা বাংলাদেশকে এই বাংলাদেশিদের ফেরত নিতে বলছে৷ এর আগে তাঁদের ফেরত না নিলে বাংলাদেশিদের ভিসা দেয়ার ক্ষেত্রে কড়াকড়ি আরোপের কথা বলেছিল ইইউ৷ বাংলাদেশও তাঁদের ফেরত আনতে সম্মত হয়েছে৷ তবে কী প্রক্রিয়ায় ফেরত আনা হবে সেটা নির্ণয় নিয়েই ঢাকায় মঙ্গলবার থেকে শুরু হওয়া এই বৈঠক৷
ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন মেঘনায় বাংলাদেশের পক্ষে এই বৈঠকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব কামরুল ইসলাম৷ আর ইইউ-এর পক্ষে নেতৃত্ব দিচ্ছেন ইইউ পররাষ্ট্র দপ্তরের এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক পাওলা পাম্পালনির৷
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, গত জুলাই মাসেই ইইউ এসওপি-র প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করতে বাংলাদেশকে চাপ দিয়েছিল৷ পরে তা সেপ্টেম্বরে চূড়ান্ত করার কথা বলা হয়৷ গত বছরও ইইউ থেকে অবৈধ বাংলাদেশিদের দেশে ফিরিয়ে আনতে এসওপির প্রস্তাব দিয়েছিল বাংলাদেশ৷ তবে তখন ইইউ বলেছিল তালিকা অনুযায়ী দু’দিনের মধ্যে আটক লোকজনের পরিচয় নিশ্চিত করতে হবে৷ অন্যথায় ওই সময়সীমা শেষে তাদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হবে৷
২০১৪ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত প্রায় ২৫ হাজার বাংলাদেশি ইউরোপীয় দেশগুলোতে বৈধভাবে কাজের জন্য ওয়ার্ক পারমিট বা স্থায়ীভাবে থাকার জন্য রেসিডেন্সি পারমিট পেয়েছে৷
এদিকে বাংলাদেশ এরইমধ্যে ইউরোপে তালিকাভুক্ত অবৈধ বাংলাদেশিদের পরিচয় নিশ্চিত হতে কিছু পদ্ধতি নিয়ে কাজ করছে বলে সূত্র জানায়৷ ওই সূত্র জানায়, এসওপি অনুমোদন ও স্বাক্ষর হওয়ার পর ন্যাশনাল ডাটাবেজ, এমআরপি পাসপোর্টের তথ্যভাণ্ডারসহ আরো কিছু প্রক্রিয়া অনুসরণ করে তাদের পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে৷
সূত্র আরো জানায়, বাংলাদেশ মনে করে ইউরোপে অবৈধ বাংলাদেশিদের ফেরত না আনা হলে বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য এবং সেখানে বৈধভাবে বসবাসকারীদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে৷ তবে বাংলাদেশ চায় একটি যৌক্তিক সময় এবং প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে তাঁদের ফেরত আনা৷
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি রিচার্স মুভমেন্ট রিচার্স ইউনিটের সমন্বয়কারী অধ্যাপক ড. সি আর আবরার এ নিয়ে ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘যে কোনো দেশ অবৈধ অভিবাসীদের সেদেশে না রাখতে চাইতেই পারে৷ ইউরোপের দেশগুলোর কিছু সমস্যা আছে অবৈধ বিদেশি নাগরিকদের নিয়ে৷ তাদের দিকটা আমাদের দেখতে হবে৷ আবার তাদের জোর করে বের করে দেয়াও মানবিক বা যৌক্তিক নয়৷ তাদের ব্যাপারে একটা সম্মানজনক পথ বের হোক এটা আমি চাই৷''
তবে তিনি বলেন, ‘‘এর সঙ্গে ভিসা না দেয়া, ব্যবসা-বাণিজ্যে কোনো শর্ত দেয়া যৌক্তিক নয়৷ আর তা করা হলে বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে৷ অনেকেই তাদের ন্যায্য সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবেন৷''
বৈঠক নিয়ে কোনো পক্ষই এখনো সংবাদমাধ্যমকে কোনো আনুষ্ঠানিক তথ্য দেয়নি৷ বুধবার এই বৈঠক শেষ হবে৷