আর্থিক সংকট
১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১২রেটিং কমছে ইউরোপের
ইটালি, স্পেন ও পর্তুগালের রেটিং আরও কমানোর পাশাপাশি ফ্রান্স, ব্রিটেন ও অস্ট্রিয়া সম্পর্কে সাবধানবাণী শুনিয়েছে এই সংস্থা৷ রেটিং কমে গেছে স্লোভেনিয়া, স্লোভাকিয়া ও মাল্টার৷ আসলে ইউরোপের আর্থিক সংকট ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির অভাব কোনো নতুন ঘটনা নয়৷ ইউরোপের নেতারা কী সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, সেই সিদ্ধান্ত কতটা কার্যকর করতে পারছেন এবং বাস্তবে তার ফলে কী ঘটছে, পুঁজিবাজার সেদিকে লক্ষ্য রাখছে৷ মুডিস বলছে, বাজেট ঘাটতি নিয়ন্ত্রণে আনতে দেশগুলি ব্যয় সংকোচ করতে চাইছে, সেটা ভালো কথা৷ কিন্তু বাস্তবে তা কার্যকর করার কাজ ঠিকমতো হচ্ছে না৷ কাঠামোগত সংস্কার করে প্রতিযোগিতার বাজারে আবার নিজেদের অবস্থানের উন্নতি করতেও ব্যর্থ হচ্ছে ইউরোপের দেশগুলি৷
এই অবস্থায় বাজারে স্থায়ী আস্থা দেখা যাচ্ছে না৷ ফলে লাগাতার সংস্কারের জন্য প্রয়োজনীয় মূলধন জোগাড় করতেও অসুবিধা হতে পারে৷ এই অবস্থা মোকাবিলার জন্য ইউরোপ কতটা প্রস্তুত, মুডিস সেই প্রশ্নও তুলেছে৷ দেখা যাচ্ছে, ক'দিন আগে পর্যন্ত রেটিং এজেন্সিগুলি এই ধরণের অপ্রিয় প্রশ্ন তুললে ইউরোপীয় নেতারা কড়া প্রতিক্রিয়া দেখাতেন৷ এবার কিন্তু তাদের সুর অনেক নরম৷ আর রোববার রাতে গ্রিসের সরকার শেষ পর্যন্ত ব্যয় সংকোচ নীতি চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেবার পর বাজার মোটামুটি শান্ত রয়েছে৷
চীনের সক্রিয় ভূমিকার আশা
মঙ্গলবার চীন ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের শীর্ষ সম্মেলনের সময় চীনা প্রধানমন্ত্রী ওয়েন জিয়াবাও ইউরো এলাকার সহায়তার বিষয়ে আগ্রহ দেখিয়েছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘ঋণ সংকটের সমাধানের লক্ষ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন'কে সাহায্যের যে সদিচ্ছা আমাদের রয়েছে, সেটা সত্যি আন্তরিক৷ ইউরোপ ও ইউরো মুদ্রার প্রতি আমাদের আস্থা রয়েছে৷ চীন ইউরোপীয় সহযোগীদের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে আরও সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে প্রস্তুত৷''
প্রায় ১০ দিন আগে বেইজিং সফরের সময় জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল'এর সঙ্গে এই বিষয়ে আলোচনা করেছেন চীনা প্রধানমন্ত্রী৷ তবে মঙ্গলবারের আলোচনার পরেও চীন কোনো সুস্পষ্ট পরিকল্পনার কথা জানায় নি৷ আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল – আইএমএফ'এর মাধ্যমে চীন ইউরোপে আরও অর্থ ঢালতে পারে, এমনটাই আশা করা হচ্ছে৷
গ্রিসে তীব্র অস্থিরতা
এদিকে গ্রিসের পরিস্থিতি ক্রমশঃ আরও জটিল হয়ে উঠছে৷ সেদেশের মানুষের ধৈর্যের বাঁধ প্রায় ভেঙে পড়েছে বলা চলে৷ এতকাল শুধু বেকার, গরিব বা অসবরপ্রাপ্তদের বিক্ষোভে অংশ নিতে দেখা যেত৷ এখন মধ্যবিত্ত, উচ্চ মধ্যবিত্ত – এমনকি ছোট আকারের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের মালিকরাও সংস্কার ও ব্যয় সংকোচের মারাত্মক প্রভাব টের পাচ্ছেন৷ দেখা যাচ্ছে ক্রমাগত হরতাল ও হিংসাত্মক বিক্ষোভও৷ বাজারের কাছে দুশ্চিন্তার কারণ হলো, মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে যাওয়ার ফলে এবং অর্থনৈতিক কাঠামো এতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়লে গ্রিস কি আদৌ কোনোদিন মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে? আর যদি না পারে, তা সত্ত্বেও সেদেশকে এত কোটি কোটি ইউরো দেওয়ার কোনো অর্থ আছে কি? তাছাড়া গ্রিস'এর দৃষ্টান্ত বাজারের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷ কারণ তার উপর বাকি দুর্বল দেশগুলির ভবিষ্যতও অনেকটা নির্ভর করছে৷
গ্রিসকে আগামী কিস্তির আর্থিক সাহায্য দেওয়া হবে কি না, বুধবারই ইইউ অর্থমন্ত্রীদের এক বৈঠকে সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে৷ শুধু কথায় কাজ হবে না, এবার গ্রিক সরকারের প্রতিটি দলকে লিখিতভাবে নিশ্চয়তা দিতে হবে, যে ভবিষ্যতেও তারা শর্ত মেনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে, যাতে তারা আসন্ন নির্বাচনে ভোটারদের মন জয় করতে অবাস্তব প্রতিশ্রুতি দিতে না পারে৷
প্রতিবেদন: সঞ্জীব বর্মন
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক