ইউরোপের প্রতি বাইডেনের সহযোগিতার হাত
১৬ জুন ২০২১প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের আমলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে সংঘাতের যে জট সৃষ্টি হয়েছিল, প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন একে একে সেগুলি দূর করে সহযোগিতা আরও নিবিড় করার পথে এগোচ্ছেন৷ বৃহত্তর স্বার্থে অনেক ‘ক্ষুদ্র' বিষয়ে আপোশ করতে প্রস্তুত তাঁর প্রশাসন৷ এমনই সদিচ্ছার পরিচয় হিসেবে অ্যামেরিকার বোয়িং ও ইউরোপের এয়ারবাস কোম্পানিকে ঘিরে প্রায় দুই দশকের সংঘাত আপাতত পাঁচ বছরের জন্য মুলতুবি করে স্থায়ী সমাধানসূত্রের পথ প্রশস্ত করে দিয়েছেন তিনি৷ প্রতিযোগিতার বাজারে সরকারি ভরতুকির অভিযোগে দুই পক্ষ এতকাল একে অপরের বিরুদ্ধে এমনকি আইনি পদক্ষেপ নিয়ে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক শীতল করে তুলেছিল৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ২০১৯ সালে মার্কিন প্রশাসনকে ইউরোপের উপর ৭৫০ কোটি ডলার অংকের শাস্তিমূলক শুল্ক চাপানোর অধিকার দিয়েছিল৷ এক বছর পর ইউরোপও অ্যামেরিকার উপর প্রায় ৪০০ কোটি ডলার অংকের পালটা পদক্ষেপ নেবার অনুমতি পায়৷
মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্র-ইইউ শীর্ষ বৈঠকে এমন সাফল্য সম্পর্কে উচ্ছ্বসিত ইইউ নেতারা৷ ইইউ কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডেয়ার লাইয়েন বলেন, এমন বোঝাপড়ার ফলে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের নতুন অধ্যায় শুরু হতে চলেছে৷ বিরোধ মেটাতে আলোচনার মাধ্যমে স্থায়ী সমাধানসূত্র সম্পর্কে আশা প্রকাশ করেছে দুই পক্ষ৷ সেটা সম্ভব না হলে আবার শাস্তিমূলক পদক্ষেপের ইঙ্গিত দিয়েছে বাইডেন প্রশাসন৷ বাইডেন প্রশাসনের গঠনমূলক মনোভাবের কারণে ইউরোপ থেকে চিজ, মাখন, ওয়াইন, বিমান শিল্পের যন্ত্রাংশ আমদানির উপর শাস্তিমূলক শুল্ক তুলে নেওয়া হবে৷ ইউরোপীয় ইউনিয়নও অ্যামেরিকা থেকে বিমান শিল্পের যন্ত্রাংশ, কৃশিজাত পণ্য ও শিল্পক্ষেত্রে ব্যবহারযোগ্য পণ্যের আমদানির উপর শুল্ক তুলে নেবে৷
এমন মীমাংসার ফলে বোয়িং ও এয়ারবাস কোম্পানির প্রায় একচেটিয়া ব্যবসার সুবিধা হবে বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে৷ করোনা সংকটের জের ধরে যথেষ্ট অর্ডারের অভাবে দুই কোম্পানিই বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে৷ তাছাড়া চীনও ভবিষ্যতে বিশাল সরকারি সহায়তা সম্বল করে বেসামরিক বিমান উৎপাদনের ক্ষেত্রে আরও সক্রিয় হয়ে ওঠার প্রস্তুতি নিচ্ছে৷ সে ক্ষেত্রে বোয়িং ও এয়ারবাসের আধিপত্য খর্ব হতে বাধ্য৷
এমন সাফল্যের ফলে অন্যান্য বিরোধ মেটানোর ক্ষেত্রেও বাড়তি প্রত্যাশা দেখা যাচ্ছে৷ তবে ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামকে ঘিরে দুই পক্ষের মতমার্থক্য আরও বেশি হওয়ায় দ্রুত নিষ্পত্তির আশা আপাতত কম৷ প্রেসিডেন্ট বাইডেন এখনো প্রায় তিন বছর আগে ট্রাম্প আমলের চাপানো আমদানি শুল্ক বহাল রেখেছেন৷ একটি ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করে দুই পক্ষ বিষয়টি খতিয়ে দেখার কাজ শুরু করছে৷ চলতি বছরের শেষের মধ্যেই সমাধানসূত্রের লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা হয়েছে৷
অন্য একটি বিরোধের ক্ষেত্রেও অ্যাটলান্টিকের দুই প্রান্তের মধ্যে মীমাংসার সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়ে উঠছে৷ ফ্রান্স, জার্মানি, ইটালি ও ব্রিটেনের মতো কিছু শিল্পোন্নত দেশ বাইডেন প্রশাসনের প্রস্তাব মেনে বহুজাতিক কোম্পানিগুলির আয়ের উপর বিশ্বজুড়ে সর্বনিম্ন ১৫ শতাংশ কর চাপাতে রাজি হয়েছে৷ সেই প্রস্তাব কার্যকর করতে অনেক সময় লাগলেও একক নীতির ফলে আখেরে সব পক্ষের লাভ হবে বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে৷
এসবি/কেএম (ডিপিএ, এপি)