ইউরোপের মাঝেই রাশিয়া-প্রীতির কারণে অস্বস্তি
৭ জুন ২০২২ইউক্রেনের উপর রাশিয়ার হামলার পর থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ পশ্চিমা বিশ্ব মস্কোর বিরুদ্ধে একের পর এক কড়া পদক্ষেপ নিয়ে চলেছে৷ ইইউ-পদপ্রার্থী দেশগুলিও মোটামুটি সেই নীতি মেনে চলছে৷ কিন্তু সোমবারের একটি ঘটনা সেই ঐক্যের মধ্যে চিড় আরও স্পষ্ট করে দিয়েছে৷ উত্তর ম্যাসিডোনিয়া, বুলগেরিয়া ও মন্টেনেগ্রো রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভের জন্য আকাশসীমা বন্ধ করে দেওয়ায় তিনি সার্বিয়া সফর বাতিল করতে বাধ্য হয়েছেন৷ বলা বাহুল্য, মস্কো এমন বিঘ্নের কারণে ইইউ ও ন্যাটোর কিছু দেশের নীতি সম্পর্কে প্রবল ক্ষোভ জানিয়েছে৷ কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি সত্ত্বেও লাভরভকে আদৌ স্বাগত জানাতে সার্বিয়ার ভূমিকা নিয়ে আরও বড় প্রশ্ন উঠছে৷ উল্লেখ্য, পশ্চিমা বিশ্বের নিষেধাজ্ঞার তালিকায় লাভরভের নামও রয়েছে৷
মস্কোয় লাভরভ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, পশ্চিমা বিশ্ব বলকান অঞ্চলকে নিজেদের বলে ভাবছে, ঠিক যেমন রাশিয়া ইউক্রেনকে নিজের মনে করে৷ ইউরোপীয় ইউনিয়ন রাশিয়ার সবকিছুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে বলে তিনি অভিযোগ করেন৷ লাভরভের মতে, সার্বিয়ার সঙ্গে রাশিয়ার বিশেষ সম্পর্ক কেউ ধ্বংস করতে পারবে না৷ তিনি শীঘ্র মস্কোয় সার্বিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিকোলা সেলাকোভিচের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন বলে জানিয়েছেন৷
ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগদানের প্রার্থী হিসেবে সার্বিয়া ইউক্রেনের উপর রাশিয়ার নিন্দায় ব্রাসেলসের সঙ্গে সুর মেলালেও মস্কোর উপর কোনো রকম নিষেধাজ্ঞা চাপায় নি৷ বরং রাশিয়া থেকে আরও বেশি গ্যাস আমদানি করার পথ বেছে নিয়েছে বেলগ্রেডের সরকার৷ রাশিয়াও আরও সস্তায় গ্যাস সরবরাহের আশ্বাস দিচ্ছে৷ সার্বিয়ার প্রেসিডেন্ট আলেক্সান্ডার ভুচিচ সোমবার রাশিয়ার রাষ্ট্রদূতের কাছ থেকে লাভরভের সফর বাতিল হবার কথা জানতে পারেন৷ তিনি এই সফল বাতিলের প্রেক্ষাপট সম্পর্কে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেন৷ তার মতে, রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে সার্বিয়া স্বাধীন মনোভাব রক্ষা করে চলবে৷
বলা বাহুল্য, ইইউ সার্বিয়ার এমন আচরণ মোটেই ভালো চোখে দেখছে না৷ ভবিষ্যতে এই রাষ্ট্রজোটের সদস্য হতে হলে জোটের নীতি ও পদক্ষেপের সঙ্গে আরও সমন্বয়ের প্রয়োজন হবে বলে সার্বিয়াকে পরোক্ষভাবে বুঝিয়ে দেওয়া হচ্ছে৷ বিশেষ করে ইউক্রেনের উপর হামলার পর রাশিয়ার সঙ্গে স্বাভাবিক সম্পর্ক বজায় রাখা অথবা আরও নিবিড় করা মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়৷ চলতি সপ্তাহে জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎসের বেলগ্রেড সফরের সময় সেই বার্তা আরও স্পষ্ট হয়ে উঠবে বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে৷
এমন পরিস্থিতিতে সার্বিয়ার ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগদানের প্রক্রিয়া সম্পর্কে নতুন করে প্রশ্ন উঠছে৷ রাশিয়ার সঙ্গে ঐতিহাসিক, জাতিগত ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক ইউরোপীয় মূল্যবোধের পথে অন্তরায় হলে শেষ পর্যন্ত ব্রাসেলস কী সিদ্ধান্ত নেবে, তা স্পষ্ট নয়৷ তাছাড়া ইউক্রেন সংকটের জের ধরে সার্বিয়ায় রাশিয়ার পক্ষে ও ইইউ-র বিপক্ষে জনমত আরও বাড়তে থাকায় অনিশ্চয়তা আরও বাড়ছে৷ মুসলিম-প্রধান কসোভো অঞ্চলের সংকটের সময় রাশিয়া সার্বিয়ার পাশে দাঁড়ানোর ফলে সেই সমর্থন আরও জোরালো হয়েছে৷ কসোভোর স্বাধীনতার প্রতি শুরু থেকেই ইইউৃর সমর্থন সার্বিয়ায় অনেকে ক্ষোভের কারণ৷ এমন অবস্থায় সে দেশের সরকারের পক্ষে ইইউ-তে যোগদানের প্রচেষ্টা বাধার মুখে পড়তে পারে৷
এসবি/কেএম (ডিপিএ, এপি)