ইউরোপে কি যুদ্ধকালীন অর্থনীতির ঘোষণা আসছে?
৩০ মে ২০২৩এরপর ইউরোপীয় ইউনিয়নের কমিশনার থিয়েরি ব্রেতঁ এ বছরের মার্চ মাসে থেকে মাঝেমধ্যেই এমন অর্থনীতি চালুর কথা বলছেন৷
ইউক্রেনকে অস্ত্র সহায়তা দিতে এবং নিজেদের অস্ত্রভাণ্ডার পূর্ণ রাখতে ইইউ সরকারগুলো যেন দ্রুত অস্ত্র উৎপাদন বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়, সেই চেষ্টা করে যাচ্ছেন ব্রেতঁ৷
যুদ্ধকালীন অর্থনীতি মানে হচ্ছে, একটি দেশের সরকার তার দেশের পুরো অর্থনৈতিক ব্যবস্থা পরিবর্তন করবে এবং সেই দেশের কারখানাগুলোতে যুদ্ধের জন্য প্রয়োজনীয় পণ্য জরুরি ভিত্তিতে উৎপাদিত হবে৷
তবে ইইউ কমিশনার ব্রেতঁর সঙ্গে একমত নন পোল্যান্ডে নিযুক্ত জার্মানির রাষ্ট্রদূত টমাস বাগার৷ ‘যুদ্ধ অর্থনীতি' বিষয়ে জার্মানিতে ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যাবে না বলে জানান তিনি৷
এদিকে, সেন্টার ফর ইউরোপিয়ান পলিসি অ্যানালিসিসের এডওয়ার্ড লুকাস ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘যুদ্ধ অর্থনীতি' পরিভাষার অর্থ একেক দেশে একেক রকম৷ ‘‘যুদ্ধ অর্থনীতির আসল অর্থ হচ্ছে, মানুষ বন্দুক নিয়ে আপনার কারখানা দখল করে সেখানে আরও বন্দুক তৈরি করবে৷ আমার মনে হয় না ইউরোপের কেউ এমন পরামর্শ দিচ্ছে,'' বলেন তিনি৷
তবে রাশিয়া ইতিমধ্যে এটি শুরু করেছে বলেও জানান লুকাস৷ তিনি বলেন, জার্মানির ক্ষেত্রে বিষয়টি (যুদ্ধ অর্থনীতি) নাৎসি আমলে অর্থনীতির নিয়ন্ত্রণ নেয়ার সময়টা সামনে নিয়ে আসবে- যে সময়টায় অর্থনীতির মারাত্মক ক্ষতি হয়েছিল এবং ক্রীতদাস শ্রমিকেরা নিপীড়নের শিকার হয়েছিলেন৷
জার্মান কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশন্সের বেন তালিস বলছেন, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট মাক্রোঁ যুদ্ধ অর্থনীতির কথা বলেছেন৷ কিন্তু তারপর সেটি বাস্তবায়নে তাকে নাটকীয় পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি৷ ‘‘এর (যুদ্ধ অর্থনীতি) অনেক প্রভাব থাকবে,'' বলেন তিনি৷ যেমন ‘‘অর্থনীতির উপর অনেক বেশি রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ থাকবে৷ এটা সম্ভবত অন্যরকমের রেশন ব্যবস্থা চালুর কথা বোঝাবে, যা ইউরোপীয়দের মধ্যে খুব গুরুত্বপূর্ণ সংকেত পাঠাবে৷ আমার মনে হয় না, পশ্চিম ইউরোপের বর্তমান প্রজন্মের রাজনীতিবিদরা তেমনটা চাইবেন৷''
এস্তোনিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী হানো পেভকুর বলছেন, তার দেশ ইতিমধ্যে ইউক্রেনকে সহায়তা হিসেবে জিডিপির এক শতাংশ খরচ করেছে৷ এর জন্য তার দেশে ‘যুদ্ধ অর্থনীতি' চালুর প্রয়োজন পড়েনি বলে ডয়চে ভেলেকে জানান তিনি৷ পেভকুর বলেন, ‘‘আমাদের সেটা বিশেষ করে উল্লেখ করতে হবে না৷ আমরা হুমকি দেখতে পাচ্ছি এবং আমরা বলছি যে, ইউরোপের সবাইকে বুঝতে হবে, রাশিয়া আমাদের অস্তিত্বের জন্য হুমকি৷''
সামরিক ইতিহাসবিদ ও পোলিশ ইনস্টিটিউট অফ ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্সের পরিচালক স্লাভোমির ডেবস্কি ‘যুদ্ধ অর্থনীতির' প্রয়োজনীয়তার কথা স্বীকার করেন৷ তবে এখনও এর সময় আসেনি বলে ডয়চে ভেলেকে জানান তিনি৷ তার সন্দেহ, রাজনীতিবিদেরা যখন যুদ্ধ অর্থনীতির কথা বলেন তখন তারা সম্ভবত জানেন না যে, আসলে কী বলছেন৷ ‘‘১৯৪২ সালে যুক্তরাষ্ট্র মাত্র ১৪ দিনে (দুই বছরের বদলে) বড় জাহাজ তৈরি করতে সমর্থ হয়ে উঠেছিল৷ যুদ্ধ অর্থনীতি বিষয়টা এমনই৷ আমরা এখনও সেই পর্যায়ে পৌঁছাইনি এবং আমাদের অর্থনীতিতে এমন অর্থনীতি চালু করার কোনো প্রয়োজন নেই,'' বলেন ডেবস্কি৷
টেরি শুলৎস/জেডএইচ