ইরাকে প্রখ্যাত নারীদের হত্যায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া
৩ অক্টোবর ২০১৮সাবেক ‘মিস বাগদাদ' তারা ফারেসকে গত বৃহস্পতিবার বাগদাদে গুলি করে হত্যা করে দুই মোটর সাইকেল আরোহী৷ ইন্সটাগ্রামে ফারেসের অনুসারীর সংখ্যা ছিল প্রায় ২৭ লক্ষ৷ তিনি প্রায়ই পশ্চিমা পোশাক পরে ইন্সটাগ্রাম ভিডিওগুলোতে উপস্থিত হতেন৷ এছাড়া ইরাকে নারীদের অবস্থারও সমালোচনা করতেন ফারেস৷
ফারেসকে হত্যার দুদিন আগে ইরাকের আরেক শহর বসরার একটি বাজারে গুলিতে প্রাণ হারান মানবাধিকার কর্মী সৌদ আল-আলী৷
এর আগে আগস্ট মাসে প্লাস্টিক সার্জন রাফিফ আল-ইয়াসিরি ও কসমেটোলজিস্ট রাশা আল-হাসানকে তাঁদের বাড়িতে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়৷ এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁদের মৃত্যুর কারণ নির্ধারণ করা হয়নি৷
এসব ঘটনার পর গত শনিবার সাবেক ‘মিস ইরাক' ও বর্তমানে মডেল শিমা কাশিম সামাজিক মাধ্যমে একটি ভিডিও আপলোড করেন৷ সেখানে তিনি কাঁদো কাঁদো কণ্ঠে জানান, ফারেসের হত্যার পর তিনি একটি টেক্সট মেসেজ পেয়েছেন, যাতে বলা হয়েছে, ‘এরপর আপনি'৷
যুক্তরাজ্যের ‘রয়েল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইন্সটিটিউট'-এর মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক বিশেষজ্ঞ অ্যালিসন পারগেটার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এসব নারী হত্যায় ইরাকে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে৷''
তিনি বলেন, অনেকে এসব হত্যার ঘটনায় হতাশা প্রকাশ করেছেন৷ কেউ কেউ আতঙ্কিতও হয়ে পড়েছেন৷ তবে অন্যরা খুব একটা উদ্বিগ্ন নন বলে মনে করছেন পারটেগার৷ তিনি বলেন, সামাজিক নিয়মের বাইরে যাওয়ায় এসব নারীরা তাঁদের ‘প্রাপ্য' পেয়েছেন বলেও মনে করেন ইরাকি সমাজের একটি অংশ৷ এমনকি গণমাধ্যমেও কয়েকজন নারীকে সেক্স ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে জড়িয়ে তাঁদের হত্যাকে যুক্তিসঙ্গত করার প্রচেষ্টা লক্ষ্য করা যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন পারটেগার৷
ইরাকের প্রধানমন্ত্রী হায়দার আল-আবাদি হত্যার ঘটনা গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন৷ এসব হত্যাকাণ্ড ‘পরিকল্পিত' বলে মনে করেন তিনি৷
তবে আল-আমাল নামে নারীদের মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা একটি সংগঠনের সদস্য হানা এডওয়ার মনে করছেন, ইতিমধ্যে হত্যাকারীদের সঙ্গে আপোশ করা হয়ে গেছে৷ পরিচিত নারীদের হত্যা করে ইরাকের অন্য মেয়েদের ঘরে থাকার বার্তা দেয়া হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি৷
সাফা নামে এক স্টাইলিস্ট এএফপিকে বলেছেন, একদল লোক আছে, যারা ইরাকের উন্নয়ন চায় না, নারীর উন্নয়ন চায় না৷ ‘‘তারা আমাদের পেছনের দিকে নিয়ে যেতে চায়,'' বলেন তিনি৷ সাফা অবশ্য তাঁর আসল নাম নয়৷ তিনি তাঁর প্রকৃত নাম ব্যবহার না করার অনুরোধ জানিয়েছেন৷
যুক্তরাজ্যের ‘ওভারসিজ ডেভেলপমেন্ট ইন্সটিটিউট'এর ঊর্ধ্বতন গবেষক দিনা মনসুর-ইলে বলেন, নারীদের অধিকার সম্পর্কে সবাইকে সচেতন করে তুলতে ইরাকি সরকারকে আরো কাজ করতে হবে৷
তিনি বলেন, ইরাকে নারীদের অবস্থা আরো খারাপের দিকে নিয়ে যেতে পারে, এমন আইনের প্রস্তাব করছেন দেশটির সাংসদেরা৷ যেমন গত নভেম্বরে তাঁরা একটি বিল প্রস্তাব করেছিলেন, যেটি পাস হলে, নয় বছরের মেয়ের বিয়ে দেয়াও বৈধ হয়ে যেতে পারে৷
খুব শিগগিরই ইরাকে নারীদের অবস্থার পরিবর্তন হবে বলে মনে করেন না পারটেগার৷ তিনি বলেন, ইরাকি সমাজে পরিবর্তন আনতে এখনো অনেক দূর যেতে হবে৷ ফলে সাম্প্রতিক হত্যাকাণ্ডগুলো সরকার ও প্রশাসন এড়িয়ে যাবে বলে মনে করেন তিনি৷ হত্যাকারীদেরও বিচারের আওতায় আনার সম্ভাবনা কম দেখছেন পারটেগার৷
ওয়েসলি ডকারি/জেডএইচ