ঈদে এতিমখানার আনন্দ-বেদনা
ঢাকার আজিমপুরে শতবর্ষ পেরোনো স্যার সলিমুল্লাহ মুসলিম এতিমখানার শিশুদের কাছে ঈদের দিনটি যেন বিশেষ কিছু৷ এই ঈদেও সবাই পেয়েছে নতুন পোশাক, খেয়েছে ভালো খাবার৷ আত্মীয়রাও উপহার নিয়ে এসেছেন দেখা করতে৷
ঈদের নামাজ
সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠেই ছেলেদের তাড়া থাকে ঈদের নামাজ পড়ার৷ ১৯০৯ সালে প্রতিষ্ঠিত এ এতিমখানার সবাই দলবেঁধে স্থানীয় মসজিদে নামাজ শেষ করে কোলাকুলি করেন৷ উদযাপনে যোগ দেয় এতিমখানার বাইরের সমবয়সিরাও৷
বিশেষ খাবার
নামাজ শেষে সবাই ছুটে যায় ডাইনিংয়ে৷ সেখানে সকালের খাবার ছিল নুডুলস এবং সেমাই৷ দুপুরে পরিবেশন করা হয় পোলাও, গরুর মাংস, ফিরনিসহ নানা সুস্বাদু খাবার৷
ভাই-বোন একই এতিমখানায়
এতিমখানায় মেয়েদেরও থাকার ব্যবস্থা রয়েছে৷ অনেকক্ষেত্রে দেখা যায়, অভিভাবকরা তাদের দুই সন্তানকেই এখানে রেখে যান৷ ঈদের দিনে তাই পরিবারের অভাব খুব একটা বোধ করেন না তারা৷
ভালোবাসার বন্ধন
এতিমখানায় বসবাসরত ছেলেমেয়েদের সাথে কথা বলে জানা যায়, এখানে সবাই একই পরিবারের সদস্য হিসেবে বেড়ে ওঠে৷ তাদের মাঝে কোনর ভেদাভেদ নেই, নেই কোনো বৈষম্য৷ পরিবারকে নাকি খুব বেশি মিস করে না কেউ৷
ঈদের সালামি
সলিমুল্লাহ মুসলিম এতিমখানার গার্লস হোস্টেলে বসবাসরত সিনথিয়া পারভিন জানায়, ঈদে তার বড় ভাই তাকে ২০ টাকা সালামি দিয়েছে৷
‘বাধ্য হয়া পোলারে এতিমখানায় রাখসি’
ঈদের দিন সকালেই ছেলে অনিক খানের সাথে দেখা করতে চলে এসেছেন মা লাকি আক্তার৷ সন্তানকে এতিমখানায় রাখার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘স্বামী সড়ক দূর্ঘটনায় মারা যাওয়ার পর খরচ সামলাইতে না পাইরা বাধ্য হয়া পোলারে এখানে রাখসি৷ যে টাকা কামাই করি নিজের চলে কোনোরকম৷ পোলা এখানে সব সুবিধাই পায়, তাই মন না মানলেও ওর ভালোর জন্যই ওরে এখানে রাখসি৷’’
‘মা রে দেখতে মন চাইতাসে এহন’
পাঁচ বছর ধরে এই এতিমখানায় আছে মো. আমানুল্লাহ৷ এই ঈদে তার মা দেখা করতে আসেননি, কারণ,, ‘‘ঈদের আগে ফোনে মায়ের সাথে কথা হইছে৷ মায়ে কইসিল লঞ্চ চললে বরিশাল থেকা আমারে দেখতে আইবো৷ কিন্তু লকডাউনে সব বন্ধ থাকায় মা আইতে পারে নাই৷ মা রে দেখতে মন চাইতাসে এহন৷’’
ঈদে নতুন কাপড়
আকিব হাসান, হাবিবুর রহমান ও ইয়ামিন হোসেন প্রায় সমবয়সি৷ এতিমখানায় থাকে প্রায় ৫ বছর৷ তারা জানিয়েছে, প্রতি ঈদেই তাদেরকে নতুন পাঞ্জাবি-পায়জামা দেওয়া হয়৷ এছাড়া সারাবছর যা লাগে, এতিমখানা কর্তৃপক্ষ তা-ও দেয়৷
‘বেড়াইতে যাই’
৫ম শ্রেণিতে পড়ুয়া আরিফ হাসান প্রায় ৫ বছর ধরে আছে এই এতিমখানায়৷ অন্যান্য দিনে এতিমখানার বাইরে যাওয়ার অনুমতি না থাকলেও ঈদের দিন আশেপাশে ঘুরতে যাওয়ার অনুমতি মেলে৷ তবে সময়ের বাধ্যবাধকতা থাকে৷ কোথায় যাচ্ছে- জানতে চাইলে আরিফ বলে, ‘‘রিকশা দিয়া ঘুরবো বন্ধুসহ৷ বেশি দূরে যাবো না, কাছেধারেই থাকবো৷’’
অনুদান
এতিমখানার অনেক শিশুর হাতে টাকা দেখে কোথায় পেয়েছে জানতে চাইলে তারা জানায়, বৃহস্পতিবার একজন এসে জনপ্রতি ২০০ টাকা করে দিয়ে গেছে৷ এছাড়া প্রতিদিনই অনেকে এই এতিমখানায় দান করেন৷ প্রায় প্রতি শুক্রবারে কোনো না কোনো দাতার অর্থে ভালো খাবার পরিবেশন করা হয়৷
নিজস্ব অর্থায়ন
সলিমুল্লাহ মুসলিম এতিমখানার গণসংযোগ কর্মকর্তা আশিকুর রহমান বলেন, ‘‘প্রতিষ্ঠানটি সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে চলে৷ আমাদের নিজস্ব ফান্ড আছে, যেখানে দোকানভাড়াসহ বিভিন্ন অনুদান জমা হয়৷ তবে সরকার থেকে একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাকে তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনার সুবিধার্থে৷’’