1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পর্বত সংরক্ষণের অভিনব উদ্যোগ

১৮ নভেম্বর ২০২০

ইউরোপের বুকে এখনো এমন অঞ্চল রয়েছে, যেখানে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগে নি৷ উত্তর ম্যাসিডোনিয়ার এক পর্বতমালার সৌন্দর্য্য ও পরিবেশের সুরক্ষার লক্ষ্যে সেখানে জাতীয় পার্ক গড়ে তোলার উদ্যোগ চলছে৷

https://p.dw.com/p/3lTRp
ছবি: Holger Trzeczak/DW

যথেষ্ট দ্রুত পদক্ষেপ নিতে পারলে উত্তর ম্যাসিডোনিয়া অনেক আগেই নতুন এক জাতীয় পার্ক পেয়ে যেতো৷ শার পর্বতশ্রেণির কোলে ভ্রাৎনিৎসা গ্রামে সন্ধ্যায় ব্যস্ততার ছোঁয়া৷ ফ্রোসিনা পান্দুরস্কা সাধারণত হাসিঠাট্টার তেমন সুযোগ পান না৷ রাজধানী স্কপিয়ের এই পরিবেশবাদী অ্যাক্টিভিস্ট সবুজ পর্বত নিয়ে তোলা নিজের এক তথ্যচিত্র দেখিয়েছেন৷ তিনি উপত্যকার মানুষকে নিজের উদ্যোগে শামিল করতে চান৷

গ্রামের সংস্কৃতি কেন্দ্রের সামনে আবর্জনাই দেখিয়ে দিচ্ছে যে সমস্যাগুলি মোটেই দূরের নয়৷ বিস্ময়কর হলেও মানুষ সত্যি সেই ছায়াছবি দেখতে এসেছেন৷ ‘শার পর্বতশ্রেণির বন্ধু’ নামের ছোট এনজিও-র আয়োজকরা তাঁদের অনুষ্ঠানে কতটা সাড়া পাবেন, সে বিষয়ে নিশ্চিত ছিলেন না৷

পান্দুরস্কা সাংবাদিক হিসেবে প্রশিক্ষণের সুবাদে বিলক্ষণ জানেন, যে তাঁর দেশে জলবায়ু সংরক্ষণ মোটেই অগ্রাধিকারের মধ্যে পড়ে না৷ তবে মানুষ চাইলে শার পর্বতশ্রেণির অনন্য প্রাকৃতিক পরিবেশ ভবিষ্যতে আরও সুরক্ষিত হবে বলে তাঁর আশা৷

জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র নিয়ে বিতর্ক

তথ্যচিত্র দেখানোর পর পান্দুস্কা ও তাঁর বন্ধুরা সে বিষয়ে আরও আলোচনা করেন৷ ভ্রাৎনিৎসা গ্রামের মানুষ প্রায় পাঁচ বছর ধরে একাই পরিকল্পিত এক জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন৷ গ্রামবাসীর অভিযোগ, এতকাল কেন সেই এনজিও তাঁদের পাশে দাঁড়ায় নি! তাঁদের মতে এই এনজিও এখনো তৃণমূল স্তর থেকে অনেক দূরে রয়েছে৷ অবশেষে দুই পক্ষের মধ্যে সদ্ভাব দেখা গেল৷

জাতীয় পার্ক গড়ে পর্বত সংরক্ষণ

এমন মনোভাবের সত্যি প্রয়োজন রয়েছে৷ কারণ শার পর্বতে ভ্রাৎনিৎসার মতো আরও অনেক গ্রাম রয়েছে৷ দৈর্ঘ্যে ৮০ কিলোমিটার ও প্রস্থে ৩০ কিলোমিটার এলাকার এই পর্বতের সৌন্দর্য্য গত ২৯ বছর ধরে হুমকির মুখে রয়েছে৷ পান্দুরস্কা বলেন, ‘‘শার পর্বতমালা উত্তর ম্যাসিডোনিয়ার সবচেয়ে বড় প্রকৃতি-সমৃদ্ধ পাহাড়৷ এই পাহাড় বাঁচাতেই হবে৷ সম্ভব হলে জাতীয় পার্কের মর্যাদা দিয়ে চূড়ান্ত সুরক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে৷ তখন সীমান্ত পেরিয়েও গোটা এলাকার সুরক্ষা সম্ভব হবে৷’’

প্রকৃতি সংরক্ষণের উদ্যোগ

টেটোভোর কাছে শার পর্বতমালা তথাকথিত ‘সবুজ ফিতা’-র দক্ষিণতম অংশের মধ্যে পড়ে৷ ‘ইউরো-নেচার’ নামে জার্মানির এক সংগঠন ‘সবুজ ফিতা’ নামের ছত্রছায়ায় হাজার হাজার কিলোমিটার প্রকৃতি সংরক্ষণের চেষ্টা চালাচ্ছে৷ উত্তর দিকে অতীতের শীতল যুদ্ধের ‘লৌহ যবনিকা’ নামে পরিচিত সীমানা বরাবর এমন অঞ্চল চিহ্নিত করার লক্ষ্য স্থির করা হয়েছে৷

সেই পরিকল্পনার একটি অংশের আওতায় পুরানো পাহাড়ি কুটিরগুলি সংস্কার করে ও নতুন কুটির তৈরি করে পাহাড়প্রেমি হাইকারদের আকর্ষণ করা হবে৷ সেইসঙ্গে বেআইনি কাঠুরেদের বিরুদ্ধে সংগ্রামও চালানো হবে৷ মেষপালকরা সেই কাজে অবশ্যই সহায়তা করবেন৷

নাসের খেমাইলি নিজে একজন মেষপালক৷ তিনি আমাদের এমন এক জায়গায় নিয়ে গেলেন যেখানে শক্তিশালী গাড়িও প্রবেশ করতে পারে না৷ করোনা সংকটের আগে নাসের এভাবে পর্যটকদের গাইড হিসেবে কিছু উপার্জন করতেন৷ এনজিও-টি এভাবে বেআইনি কার্যকলাপের বিকল্প তুলে ধরতে চায়৷ নাসেরের পরিবারের প্রায় পাঁচ হাজার ভেড়া রয়েছে৷ সেই ভেড়ার দুধের চিজ গোটা অঞ্চলে বিখ্যাত৷ প্রকৃতি অক্ষত থাকলেই নাসের সফলভাবে সেই ব্যবসা চালিয়ে যেতে পারবেন৷ নাসের এই উদ্যোগকে সমর্থন জানিয়ে বলেন, যে শার পর্বতমালায় এক জাতীয় পার্ক সৃষ্টি হলে তিনি অবশ্যই খুশি হবেন৷

ভাইয়ের সঙ্গে মিলে নাসের বাবা-মার কাছ থেকে অরগ্যানিক খামারের দায়িত্ব নিজেদের কাঁধে তুলে নিয়েছেন এবং ব্যবসার পরিসর আরও বাড়িয়েছেন৷ বর্তমানে ২৫ জন রাখাল তাঁর হয়ে কাজ করেন৷ দুই সপ্তাহ অন্তর তাঁরা পালা করে কাজ করেন৷ গ্রীষ্মকালে তাদের ছোট কুঁড়েঘরে থাকতে হয়৷

উন্নয়নের আশা

পাহাড়ের উপর ছোট সৌর প্যানেলই তাঁদের সম্বল৷ সেগুলি দিয়ে কোনোরকমে কুঁড়েঘরে আলো জ্বালানো যায়৷ জলবিদ্যুৎ প্রকল্প সম্পর্কে তাঁদের অবস্থান ইতিবাচক৷ প্রকল্প শেষ হলে ছোট গ্রামগুলিতে অবশেষে বিদ্যুৎ আসবে বলে তাঁরা আশা করেন৷

এনজিওর সদস্য ফ্রোসিনা পান্দুরস্কা অবশ্য মনে করেন, স্থানীয় মানুষের কাছে এই ছোট জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলিকে পরিবেশবান্ধব জ্বালানীর উৎস হিসেবে তুলে ধরা হচ্ছে৷ অথচ এর মাধ্যমে বাস্তবে নদীগুলির ভারসাম্য ধ্বংস করা হচ্ছে৷

ইউরোপের বেশিরভাগ প্রান্তের তুলনায় বলকান অঞ্চল এখনো তার নিজস্বতা অনেকটাই বজায় রেখেছে৷ তবে জঙ্গলের মধ্য দিয়ে গাড়ি চলাচল বেড়েই চলেছে৷ ভইস্লাভ গুশেভস্কি অনেকদিন জার্মানিতে বসবাস করেছেন৷ তিনিও আজ এনজিও-র জন্য কাজ করেন৷ তিনি বলেন, ‘‘অনেক কাজ করার আছে৷ সেইসঙ্গে জাতীয় পার্কে আচরণবিধি ও সেখানকার আইন সম্পর্কে মানুষকে আরও অনেক বোঝাতে হবে৷’’

অনেক টালবাহানার পর ২০২১ সালে ‘শার পর্বতমালা জাতীয় পার্ক’ উদ্বোধন হওয়ার কথা৷ অন্তত কাগজে-কলমে সেটা হয়তো সম্ভব হবে৷ বাকি সবকিছু মানুষের উপর নির্ভর করছে৷

হলগার ত্রেৎসাক/এসবি

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য