উপগ্রহের চোখে
প্রতিনিয়ত পৃথিবীকে বদলে দিচ্ছে মানুষ৷ কক্ষপথে ঘুরতে থাকা যমজ উপগ্রহ টানডেম-এক্স ও টেরাসার-এক্স’এর পাঠানো ছবির মাধ্যমে পৃথিবীর ত্রিমাত্রিক মডেল তৈরি করতে গিয়ে জার্মান বিজ্ঞানীরা চোখ রেখেছেন সেই পরিবর্তনেও৷
যেন পটে আঁকা ছবি
উপগ্রহের চোখ দিয়ে দেখলে চিলির আতাকামা মরুভূমিকে যে কারো কাছে শিল্পীর আঁকা ছবি বলে মনে হতে পারে৷ মঙ্গল গ্রহের ভূ-তাত্ত্বিক দৃশ্যপটের সঙ্গে দক্ষিণ অ্যামেরিকার এই মরু এলাকার রয়েছে অনেক মিল৷ এ কারণে কয়েকটি সায়েন্স ফিকশন ছবির শ্যুটিংও সেখানে হয়েছে৷ অগ্নেয়গিরির পাশেই দেখা যাচ্ছে ১০ হাজার কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিশ্বের সবচেয় বড় লবণ স্তর !‘সালার ডে উইউনি’৷
প্রযুক্তির উৎকর্ষ
যুক্তরাষ্ট্রের লাস ভেগাস এলাকার ওপর থেকে বাঁয়ের ছবিটি নেয়া হয় ২০০০ সালে, শাটল রেডার টোপোগ্রাফি মিশনে৷ আর ডানের ছবিটি তোলা হয়েছে টেরাসার-এক্স ও টানডেম-এক্স উপগ্রহের হাই রেজোলিউশন ব়্যাডার টেকনোলজির সাহায্যে৷ এই প্রযুক্তিতে দু্টি উপগ্রহ একই সময়ে দুটি ভিন্ন অবস্থান থেকে লাস ভেগাসের ছবি তোলে৷ পরে সেগুলো সমন্বিত করে তৈরি হয় নিখুঁত এই ত্রিমাত্রিক মডেল৷ প্রযুক্তির পার্থক্যটা ছবিতেই স্পষ্ট৷
প্রকৃতির রুদ্ররূপ
২০১১ সালের সুনামিতে জাপানের সেন্দাই বন্দর ও আশেপাশের এলাকার ধ্বংসযজ্ঞের সাক্ষ্য দিচ্ছে টেরাসার-এক্স’এর এই ছবি৷ ম্যাজেন্টা রংয়ে নির্দেশিত এলাকাগুলো বিপুল বিশাল সেই ঢেউয়ের ধাক্কায় পরিণত হয়েছিল বোল্ডার আর কাদার স্তূপে৷ আর নীল রংয়ের এলাকাগুলোতে সুনামির পর কয়েক দিন পর্যন্ত জমে ছিল পানি৷
এক পা এশিয়ায়, অন্য পা ইউরোপে
দুই মহাদেশজুড়ে ছড়িয়ে থাকা তুরস্কের রাজধানী ইস্তান্বুল জনসংখ্যার দিক দিয়ে ইউরোপের সবচেয় বড় এবং বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম শহর৷ জনসংখ্যা যত বাড়ছে, ইস্তাম্বুলের উপগ্রহচিত্র হয়ে উঠছে তত বেশি হলুদ৷ সেই সঙ্গে কমছে সবুজ প্রকৃতি৷ বসফরাস প্রণালীর দুই পাশে হলুদের এই বিস্তারের পাশাপাশি মর্মর সাগরে হাজারো জাহাজের আনাগোনাও টেরাসার-এক্স’এর চোখ এড়ায়নি৷
বরফমোড়া জ্ঞান
অ্যান্টার্কটিকার কুইন মড ল্যান্ডে ‘এ-৬২’ নামের এই আইসবার্গের ওপর পুরো বন শহরকে বসিয়ে দেয়া যাবে৷ এই হিমশৈলের সঙ্গে ঝুলে থাকা ফিমবুল আইস শেল্ফ ২০১০ সালের দিকে ভেঙে যেতে শুরু করে৷ সাগরে দৈত্যাকৃতির এসব আইসবার্গ কীভাবে তৈরি হয়, সে বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা পেতে বিজ্ঞানীদের সহায়তা করেছে উপগ্রহ থেকে পাঠানো কুইন মড ল্যান্ডের এই ছবি৷
উদগিরণের পর
২০১১ সালের জুলাই মাসে চিলির আন্দেজ পর্বতে অগ্নুৎপাত শুরু হওয়ার পর, আগ্নেয়গিরির ছাইমেঘ বহু দূর পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়লে দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় বিমান চলাচল৷ সে সময় গণমাধ্যমে এ ঘটনাকে উল্লেখ করা হয় পুইয়েউয়ের অগ্নুৎপাত হিসাবে৷ পরে টেরাসার-এক্স’এর পাঠানো ছবিতে দেখা যায়, পুইয়েউয়ে নয়, উদগিরণ হয়েছিল আসলে পাশের কর্দন কাউলে জ্বালামুখ থেকে৷
বরফে রঙিন!
তুষারপাতে জমে ওঠা বরফও হতে পারে নানা রঙে রঙিন, অন্তত টেরাসার-এক্স ব়্যাডারের চোখে তেমনটি ঘটতেই পারে৷ এই ব়্যাডারের সংকেত এক মিটার পর্যন্ত বরফ ভেদ করে ভেতরের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করতে পারে৷ ক্যানাডার ম্যাকেঞ্জি নদীর জমাট বাধা বদ্বীপ তাই স্ক্রিনে ভেসে উঠেছে নানা রঙের আভা নিয়ে৷